মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা হস্তান্তর

Seba Hot News
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা হস্তান্তর
সেবা ডেস্ক: -মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রথম তালিকা হস্তান্তর করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য ৮০০০ রোহিঙ্গার একটি তালিকা বার্মার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে। ঢাকায় দুদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই তালিকা হস্তান্তর করা হয়।

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল চ সোয়ের সাথে বৈঠকের পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সীমান্তের জিরো-লাইনে যে ৬৫০০-এর মতো রোহিঙ্গা এখনও বাংলাদেশে আসার জন্যে অপেক্ষা করছে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দীর্ঘ সময় বৈঠকের পর গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কাছে রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা হস্তান্তরের প্রশ্নে মি. খান জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে এপর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম দফায় মিয়ানমারকে দেওয়া হলো ১৬৭৩টি পরিবারের ৮০৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা।
'মিয়ানমার পরিবার এলাকা ভিত্তিক তালিকা চেয়েছিল। আমরা সেভাবেই তালিকাটি তৈরি করে তা হস্তান্তর করেছি। তারা বলেছে, এই তালিকা তারা যাচাই করে রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। রোহিঙ্গা গ্রামে হামলা করে ফিরে আসছেন অজ্ঞাত পরিচয় হামলাকারিরা। দেশে ফেরত যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

 এ ছাড়া সীমান্তের জিরো-লাইনে মিয়ানমার অংশে এখনও যে ৬৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে, তাদেরও ফেরত নেওয়ার কথা বাংলাদেশ বৈঠকে তুলেছে বলে মি. খান জানান।
তিনি বলেন, 'সীমান্তের জিরো-লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমি তাদের বলেছি, এরাতো আমাদের দেশে প্রবেশ করেনি।
তোমাদের দেশেই আছে। সেটা তারা স্বীকার করেছেন এবং এদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলেছেন। মি. খান আরো এলন, জিরো-লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ২০শে ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের একটি জেলায় দুই দেশের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই বৈঠকে জিরো-লাইনের ৬৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করা হবে।

মিয়ানমারে নির্যাতন এবং সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫শে অগাস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে যে আশ্রয় নেয়। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করছে।

সংখ্যায় কম হলেও এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। কিন্তু এখনও সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বন্ধ হয়নি। এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ মিয়ানমারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ করার ব্যাপারে মিয়ানমার আশ্বাস দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে মিয়ানমার কতটা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. খান বলেছেন, গত অক্টোবরে তিনি যখন মিয়ানমারে গিয়েছিলেন, তখন কফি আনান কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দুই দেশ দশটি পয়েন্টে একমত হয়েছিল। সে অনুযায়ীই এখন আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মি. খান উল্লেখ করেন।

'তারা তিনটি ধাপে প্রক্রিয়া চালানোর কথা বলেছে। প্রথমে তাদের যাওয়ার জন্য পরিবেশ তৈরি করা, দ্বিতীয় তাদের থাকার ব্যবস্থা এবং তৃতীয় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিবেশ সৃষ্টি করা, এসব তারা ধাপে ধাপে করছে।আমাদের যেটা নিশ্চিত করেছে।

মিয়ানমার আলোচনা অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ কতটুকু নিচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছাই বা কতটা আছে, এসব প্রশ্নও রয়েছে।
আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য হচ্ছে, এখন মিয়ানমারের সাথে আলোচনার ওপর তারা বিশ্বাস রাখতে চান। আজকের বৈঠকেও তারা যেভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

 যেভাবে তারা আমাদের সাথে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন। যদি এগুলো পর্যালোচনা করেন, তাহলে আস্থা তৈরি হচ্ছে যে হয়তো তারা নিয়ে যাবে।

দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে বৈঠকের পর সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের পাশ দিয়েই মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চ শোয়ে চলে যান। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্নও করেছিলেন। কিন্তু তিনি কোন কথা বলেননি।

ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top