বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে প্যারিস সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এটি আগামী কয়েক দশকের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিশ্ব অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রুখে দিবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
শনিবার প্রায় দুইশ দেশের সম্মতিতে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তিটি নিয়ে বিশ্ব নেতারা উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া দেখালেও কিছু বিরূপ সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে। জলবায়ু চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, যে একটি মাত্র গ্রহ আমাদের আছে তাকে বাঁচাতে এটিই সেরা সুযোগ।
বিবিসি জানায়, নিম্ন-কার্বনের ভবিষ্যৎ গড়ার চ্যালেঞ্জে এই চুক্তি বিশ্বের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুষণকারী দেশ চীনও চুক্তিটিকে স্বাগত জানায়। তবে কয়েকটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠী চুক্তিটি পৃথিবীকে রক্ষায় খুব বেশি দূর যেতে পারবে না মন্তব্য করে এর সমালোচনা করেছে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ২ সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। ফ্রান্সের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে (২১তম কনফারেন্স অব পার্টিজ বা কপ২১) প্রায় দুইশ দেশের প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আলাপালোচনা করেন। অবশেষে সব দেশের সম্মতিক্রমে প্রথমবারের মতো কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
কিছু অংশ পালান করার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা ও কিছু অংশ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে পালন করার বিধান সম্বলিত চুক্তিটি ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হবে। চুক্তিটিকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, বিশ্ব একত্রিত হলে কী সম্ভব হয় তা আমরা সবাই মিলে দেখালাম। সংক্ষেপে বললে, চুক্তিটি বলতে কম কার্বন দূষণ বোঝাবে যা আমাদের গ্রহকে হুমকি মুখে ফেলছে এবং নিম্ন-কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে আরো চাকরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাবে। তবে চুক্তিটি ‘পরিপূর্ণ’ নয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চীনা প্রতিনিধিদলের প্রধান আলোচক শি ঝেনহুয়াও প্যারিস চুক্তিটি ‘যথাযথ’ নয় স্বীকার করে বলেন, ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে এটি আমাদের বিরত করতে পারবে না। এর আগে চীন বলেছিল, ধনী উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো আর্থিক সমর্থন প্রস্তাব করার দরকার ছিল।
বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোটের চেয়ারম্যান গিজা গ্যাসপার মার্টিন্স বলেন, আমরা যা আশা করতে পারি এটি (প্যারিস চুক্তি) তার সেরা প্রতিফলন, শুধু স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্যই নয়, বিশ্বের নাগরিকদের জন্যও।
কিন্তু গ্লোবাল জাস্টিস নাউ এর পরিচালক নিক ডিয়ারডেন বলেন, চুক্তিটিতে বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত জাতিগুলোর অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য জলবায়ু নিশ্চিত করার জন্য প্রায় কোনো বাধ্যবাধকতাই রাখা হয়নি। তবুও চুক্তিটিকে সাফল্য হিসেবে জাহির করা হচ্ছে যা ভয়ানক।
এই চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা এবং নিয়মিত অগ্রগতি পর্যালোচনার বিষয়ে দেশগুলো নিজেরা আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণে দেশগুলোর ওপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা প্যারিস চুক্তিতে রাখা হয়নি।
চুক্তির প্রধান দফাগুলো:
• যত দ্রুত সম্ভব দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চলতি শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ নির্ধারিত মাত্রার নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
• বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ফারেনহাইট) ‘বেশ নিচে’ রাখতে হবে এবং তা ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াসের নিচে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
• প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে।
• ভবিষ্যতে জলবায়ু তহবিল অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিসহ ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল হিসেবে একশ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হবে।



খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।