গানে গানে জাগবে দেশপ্রেম

S M Ashraful Azom
0

গান শোনানোর নয়, ছায়ানট বিজয় দিবসে আয়োজন করতে যাচ্ছে গান গাইবার অনুষ্ঠান। মানুষের মাঝে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে তুলতেই ছায়ানটের এই নতুন আয়োজন। যৌথ আয়োজক হিসাবে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 
১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ জাতীয় পতাকার লাল সবুজে সাজিয়ে সবাই গেয়ে উঠবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ শিল্পীরা আসবেন লাল শাড়ি আর পাঞ্জাবি গায়ে। দর্শকদের অনুরোধ করা হয়েছে সবুজ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়তে, যাতে লাল সবুজের পতাকার আদল আনা যায়। মাঠে প্রবেশের বিন্যাসও সেভাবেই করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের পুরো আবহের মধ্যে জড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত। হূদয়ে থাকবে বাংলাদেশ। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উত্সবের উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
 
এ আয়োজন প্রসঙ্গে ছায়ানট তাদের ঘোষণাপত্রে বলছে, সংস্কৃতি দিয়ে আবারো বাঙালিকে এক করা সম্ভব। দেশে যে হানাহানি শুরু হয়েছে, মানুষে মানুষে বিভেদ প্রকট হয়ে উঠছে এ পরিস্থিতিতে দেশকে-মানুষকে ভালোবাসার গান নিয়ে একত্র হতে শুরু করলে মানুষে মানুষে বিভেদ দূর হবে।
 
গতকাল শুক্রবার ছায়ানট ভবনের প্রধান মিলনায়তনে নতুন এই আয়োজনের কথা জানাতে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল ও ছায়ানটের প্রধান নির্বাহী সিদ্দিক বেলাল।
 
ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন বললেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার আন্দোলন ছিল বাঙালিত্বের পথে যাত্রা। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের যে চেতনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল সেই চেতনা এখন মানুষের মাঝে নেই। আমরা তা ভুলে গেছি। আমরা নষ্ট হয়ে গেছি। পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখে যে প্রত্যয়ে আমরা বর্ষবরণের আয়োজন শুরু করেছিলাম আজ সেই প্রত্যয় নিয়েই আমরা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছি। তিনি দুঃখ করে বলেন, সংস্কৃতিহীনতার কারণেই আজ বাংলাদেশের এই সংকটকালীন পরিস্থিতি। কারণ রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সংস্কৃতির চর্চা নেই, বোধ নেই।
 
সনজীদা খাতুন আরো বলেন, ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পর আমরা উপলব্ধি করেছিলাম সব মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। এখন সারা দেশে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, মানুষ হত্যা করা হচ্ছে— এ থেকে বোঝা যায় সবাইকে সংস্কৃতির পথে আনা সম্ভব হয়নি। অথচ ছায়ানট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে সংস্কৃতির বোধ জাগরণের জন্য। সে কারণেই আবারো আমরা ভবন থেকে বের হয়ে আসছি নতুন আয়োজন নিয়ে।
 
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মোট ১০টি গান গাইবেন শিল্পীরা। এরমধ্যে ৬টি গানের সঙ্গে রয়েছে নৃত্য পরিবেশনা। ‘বিপ্লবের রক্তরাঙা’ গানটি একক কণ্ঠে গাইবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। সিকান্দার আবু জাফরের কবিতা ‘তমি বাংলা ছাড়’ আবৃত্তি করবেন কণ্ঠশীলন সদস্য জহিরুল হক খান। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে উত্সব। এরপর রয়েছে গান-‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’, ‘আমি ভয় করব না ভয় করব না’, ‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ’, ‘জয় হোক জয় হোক’, ‘আমার দেশের মতন এমন দেশ কি কোথাও আছে’, ‘বাংলাভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’ ও ‘লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা’।
 
১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হবে অনুষ্ঠান। ৪০ মিনিটব্যাপী এই আয়োজনে প্রায় চার হাজার শিল্পী অংশ নেবেন। আয়োজকদের আশা, পুরো অনুষ্ঠানে লোকসংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
 
অনুষ্ঠানের স্টেজ বিন্যাসেও রয়েছে অভিনবত্ব। মাঠের মাঝখানে বর্গকারা মঞ্চ স্থাপন করা হবে। মঞ্চের মাঝখানে থাকবে পতাকা স্তম্ভ। মঞ্চের নিচে দর্শকের দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন শিল্পীরা। মঞ্চের চারপাশ জুড়ে বৃত্তাকারে অতিথিদের বসবার স্থান থাকবে। আর দর্শকরা এই মঞ্চকে ঘিরে দাঁড়াবেন। এভাবেই জাতীয় পতাকার আদল দেয়ার চেষ্টা থাকবে এ আয়োজনে।
 
আয়োজকরা জানিয়েছেন, জাতীয় পতাকার গাঢ় সবুজ রং ছাড়া অন্য রঙের পোশাকে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না। ছেলেদের পড়তে হবে ফতুয়া বা পাঞ্জাবি, মেয়েদের শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ। নিরাপত্তার স্বার্থে বড় ব্যাগ আনা যাবে না। মাঠে বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। দর্শকদের জন্য প্রবেশপথ দোয়েল চত্বর সুইমিং পুল গেট। যারা গানের বাণী সংগ্রহ করতে চান তাদের ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের ৬ তলার সংস্কৃতি সম্ভার অথবা ১ তলার তথ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top