
সেবা ডেস্ক: সালিহ আল মুনাজ্জিদ-এর মতে, ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী শিশুরা হল তাদের পিতামাতার জন্য দায়িত্বস্বরূপ:
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত যিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে শুনেছি: “তোমাদের প্রত্যেকেই মেষপালক আর প্রত্যেকেই তার নিজ মেষপালের জন্য দায়ী। একজন শাসকও একজন মেষপালক এবং সেও তার মেষপালের জন্য দায়ী। একজন পুরুষ তার নিজ গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান। একজন নারী তার স্বামীর গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান।”— আল-বুখারি (৮৫৩) ও মুসলিম (১৮২৯)
তিনি দাবি করেন, শিশুদের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব হল তাদের সে সকল জিনিস থেকে নিরাপদ রাখা যা তাদের নৈতিকতায় নেতিবাচক প্রভাব রাখে, এবং তিনি দাবি করেন, যেহেতু কম বয়সে শিশুদেরকে যৌনতা ও সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হলে তা তাদের নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে পরিচালিত করে, মুসলিমদের জন্য বৈধ নয় যে, তারা তাদের শিশুদেরকে কম বয়সে যৌন শিক্ষা গ্রহণে অনুমতি দেবে।
মুনাজ্জিদের মতে, ছেলে কিংবা মেয়ে যেই হোক, সকল শিশুকে অতি অল্প বয়স থেকেই আওরাহ বস্ত্রাবৃত করা, দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যক্তিগত স্থানে প্রবেশের আগে অনুমতি নেয়ার ইসলামিক আদব শেখানো উচিৎ, এবং পুনরায় তা শেখানো উচিৎ বিচারের উপযুক্ত বয়স হওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধির বয়সে উপনীত হবার পূর্বে। তিনি “কুরআনের আয়াতসমূহে এর প্রমাণ” উল্লেখ করেন যা স্পষ্টভাবে এসকল বিষয় উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে নিম্নোক্ত:
"হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ সাক্ষাতের অনুমতি প্রভৃতির বৈধ বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ প্রদর্শনকারী কুরআনের আয়াতসমুহ) বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"— আন-নুর ২৪:৫৮
ইবনে কাসির বলেন: এখানে মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তারা যেন তাদের চাকরবাকর ও দাসদাসী, তাদের নাবালেগ শিশুদেরকে তিনটি সময়ে ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া উচিৎ, ফজর আযানের পূর্বে, কারণ সাধারণত এ সময়ে লোকজন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। “আর যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (বিশ্রামের সময়) পোশাক খুলে রাখো” হল, দুপুরের নিদ্রা বা মধ্যাহ্নের অল্প সময়ের নিদ্রাকালীন সময়, কারণ এ সময় হয়তো কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে তার স্ত্রীর সঙ্গে খালি গায়ে অবস্থান করতে পারে। “আর ঈশার নামাজের পর” কারণ এই সময়টি হল ঘুমানর সময়। তাই চাকরবাকর ও শিশুদের শেখানো উচিৎ যেন এ সময়গুলোতে তারা আকস্মিক গৃহে প্রবেশ না করে, এই আশঙ্কায় যে, এ সময় তারা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় থাকতে পারে, অথবা অন্যান্য (দৃষ্টিকটু বা স্পর্শকাতরভাবে দৃশ্যমান) অবস্থায় থাকতে পারে।— তাফসির ইবনে কাসির (৬/৮২)
যখন শিশুরা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার পর, তাদের উচিৎ সবসময়ে গৃহে প্রবেশের আগে সর্বদা অনুমতি নেওয়া, যেভাবে কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে:
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।— আন-নুর ২৪:৫৯
মুনাজ্জিদ আরও বলেন হাদিস অনুযায়ী শিশুর বিছানা আলাদা করে দেয়ার জন্য:
আমর ইবনে শুয়াইবের দ্বারা তার পিতা হতে বর্ণিত, তার দাদা বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের শিশুদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও, আর দশ বছর বয়স থেকে তাদের প্রহার কর যদি তারা তা না করে, আর তাদেরকে নিজ নিজ বিছানায় আলাদা করে দাও।"— আবু দাউদ (৪৯৫)
শেখ মুহাম্মাদ শামস আল-হক আল-আজিমবাদী বলেন:
আল-মানাবি ফাতহ-আল কাদির শারহ আল-জামি আস-সাঘিরে বলেছেন: শিশুদের দশ বছর বয়সে ঘুমানোর বিছানা আলাদা করে দেওয়া হল তাদের সম্ভাব্য কামনার বিরুদ্ধে একটি পূর্ব-সাবধানতাস্বরূপ, এমনকি বোনদের ক্ষেত্রেও। আত-তাবি বলেনঃ আল্লাহ (রাসুলের মাধ্যমে) তাদেরকে শৈশবেই নামাজ পড়া ও বিছানায় আলাদা করার-উভয় নির্দেশনা একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন এই কারণে যে, যেন তারা শৃঙ্খলা বজায় রাখে এবং আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, আর তাদেরকে শিক্ষা দিতে, তাদেরকে মানুষের সাথে সঠিক আদব কিভাবে প্রদর্শন করতে হয় তা দেখাতে, এবং তাদেরকে শেখাতে, কিভাবে অনাস্থাকর পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে পাপ হতে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
— আউন আল মাবুদ (২/১১৫)
মুনাজ্জিদ দাবি করেন, এই আয়াত হতে প্রাপ্ত উক্ত উপদেশ ও নির্দেশনায়'’ আওরাহ গোপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা ও সম্ভাব্য কামনা এড়িয়ে চলা, যা আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, দশ বছর থেকে শুরু হয়, যা সেই বয়স যে বয়সে অধিকাংশ শিশু বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে ওঠে।
যখন বয়ঃসন্ধি নিকটবর্তী হয়, তখন শিশুদেরকে বয়ঃসন্ধির লক্ষণ ও নারী-পুরুষ পৃথককারী বৈশিষ্ট্যগুলো শেখানো উচিৎ, এবং সে সকল নিঃসৃত বস্তুর ধরন শেখানো উচিৎ যেগুলো ছেলে বা মেয়ে - উভয় লিঙ্গের নির্গমনপথ হতে নিঃসৃত হতে পারে। তাদেরকে আরও শেখান উচিৎ কিভাবে অজু ও গোসল করতে হয়, তাদেরকে শেখানোর সময় ব্যবহৃত সবগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে যে, শিশুর যা জানা প্রয়োজন সে অনুযায়ীই যেন তাকে এটি শেখানো হয়। মুনাজ্জিদ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন যা খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু করা উচিৎ - তিন বছরের কাছাকাছি সময়ে - যার সঙ্গে যৌন শিক্ষার একটি মৌলিক যোগসূত্র রয়েছে।
এগুলো হল:
ছেলে ও মেয়েরা যেন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য আলাদা করতে পারে। অল্প বয়স থেকেই ছেলে-মেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলার প্রবণতা তাদেরকে সমস্যার মুখে ফেলতে পারে অথবা ছেলে বা মেয়ে - উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে ধারণায়, বৈশিষ্ট্যে ও ক্রিয়ায় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে একটি ছেলেকে বুঝতে সাহায্য করা জরুরি যে, তারা তাদের বোনের পোশাক, কানের দুল কিংবা বালা পড়তে পারবে না, কারণ এগুলো মেয়েদের জন্য, ছেলেদের জন্য নয়। একইভাবে, একটি মেয়েকেও একই জিনিসগুলো বলতে হবে তার ভাইয়ের কাজ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
শিশুদেরকে শেখানো যে তাদের আওরাহ বা গুপ্তাঙ্গ হল গোপন, এবং তা কারো সামনে উন্মুক্ত করা উচিৎ নয়। তাদেরকে এটি শেখানো ও এই শিক্ষার সঙ্গে বড় করা হলে, তাদের মাঝে সতীত্ব ও শালীনতার ধারণা গ্রথিত হবে, এবং তা তাদেরকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, সহবাস বিষয়ক বা দম্পতির মধ্যে সঙ্ঘটিত বিষয়বস্তুর যৌন শিক্ষা তখনই দেয়া উচিত , যখন তাদের তা প্রয়োজন হবে, যেমন যখন তাদের বিয়ের বয়সে উপনীত হয়, অথবা যদি তারা ফিকহের কিছু বিষয় বোঝার মত যথেষ্ট মানসিক যোগ্যতা ও স্থিরতা লাভ করে, যেমন জিনার নীতি, বা এর অনুরূপ কিছু, যার সঙ্গে সহবাস ও আওরাহ জড়িত।
মুনাজ্জিদের সর্বশেষ বক্তব্য, "এই জ্ঞানের ভিত্তি হল মূলত এমন কিছু যা প্রথমত প্রাকৃতিক ও সহজাত, এবং যা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে এবং তা অবশ্যই তাদেরকে তাদের বয়স বৃদ্ধির ধাপ, ফিকহের অধ্যায়, পাঠচক্র ও শ্রেণী অনুযায়ী ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে শেখাতে হবে। শব্দ ও বাগধারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেকে অবশ্যই রক্ষণশীল হতে হবে, এবং এই বিষয় আলোচনা করার জন্য উপযুক্ত বয়স সম্পর্কে মনযোগী হতে হবে। এবং অবশ্যই তাদেরকে অবিশ্বাসীদের অনৈতিক যৌন চর্চার সম্পর্কে সাবধান করতে হবে এবং সেগুলোর সঙ্গে ইসলামের সৌন্দর্যের পার্থক্য তুলে ধরতে হবে, যা মুসলিমদের পর্দা করতে ও শালীন হতে এবং সতীত্ব রক্ষা করতে এবং হারামকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে।"
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।