খাবারের সময় প্রিয় নবী (সা.) এর সুন্নতসমূহ

S M Ashraful Azom
খাবারের সময় প্রিয় নবী (সা.) এর সুন্নতসমূহ
সেবা ডেস্ক: মুসলিম উম্মাহর প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের উদ্দেশ্যে- কথা, কাজ ও মৌনসমর্থনকে সুন্নত বলা হয়। সুন্নত মূলত পবিত্র কোরআনেরই ব্যাখ্যা।

যারা কোরআন মেনে নিয়েছে তারা সুন্নত মানতেও বাধ্য। কারণ কোরআনের অসংখ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ও কর্ম অনুসরণের নির্দেশ এসেছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা সুন্নতের অনুসরণ উম্মতের অবশ্য কর্তব্য এ-সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত নিম্নে তুলে ধরা হলো-

(১) أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُوْلَ
‘তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের’।  ( সূরা: তাগাবুন, আয়াত: ১২)।
(২) وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ করো আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা: হাশর, আয়াত: ৭)।
(৩) قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي
‘হে নবী! মানুষকে বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তবে আমার অনুসরণ করো।’   (সূরা : আলে ইমরান, আয়াত:  ৩১)।
রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য জীবনের প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দান করেছেন। তার প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ মানবতার জন্য অনুকরনীয় আদর্শ। চলার পথের শ্রেষ্ঠ পাথেয়। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে মানুষের জীবনে বয়ে আনবে সুখ,শান্তি ও সমৃদ্ধি ।

চলুন আমাদের প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) কীভাবে খাবার গ্রহণ করতেন সে ব্যাপারে আজ তাঁর সুন্নতগুলো সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিই-

> খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা: প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) খাবার গ্রহণের আগে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। তার সঙ্গীদেরও বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসূল (সা.)  বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারী, হাদিস নম্বর : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৯১৩)।

> বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ।” (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৩৭৬৭, তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ১৮৫৮)।

> হাত ধুয়ে শুরু ও শেষ করা: খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়া আবশ্যক। না হয় বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। রাসূল (সা.) খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে আহমাদ)।

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)।

> দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া: আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) পায়াবিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। কাতাদা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের ওপর।’ (বুখারী : ৫৩৮৬)।

> ডান হাত দিয়ে খাওয়া: রাসূল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন তিনি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (বুখারী, হাদিস নম্বর: ৫৩৭৬; মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২০২২)।

> হাত চেটে খাওয়া: রাসূল (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে (ধোয়া) না।’ (বুখারী, হাদিস নম্বর: ৫২৪৫)।

> আঙুল চেটে খাওয়া: আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ১৯১৪)।

> পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া: খাবার গ্রহণের সময় কখনো কখনো থালা-বাসন থেকে এক-দুইটি ভাত, রুটির টুকরো কিংবা অন্য কোনো খাবার পড়ে যায়। সম্ভব হলে এগুলো তুলে পরিচ্ছন্ন করে খাওয়া চাই।

রাসূল (সা.) এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ১৯১৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩৪০৩)।

> হেলান দিয়ে না খাওয়া: কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে তিনি নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবার খেলে পেট বড় হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ১৯৮৬)।

> খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা: শত চেষ্টা সত্ত্বেও খাবারে দোষ-ত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করা নিতান্ত বেমানান। রাসূল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)  কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন, আর অপছন্দ হলে খেতেন না। (বুখারি, হাদিস নম্বর: ৫১৯৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩৩৮২)।

> খাবারে ফুঁ না দেয়া: খাবার ও পানীয়তে ফুঁ দেয়ার কারণে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। রাসূল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। কোনো কিছু পান করার সময়ও তিনি ফুঁ দিতেন না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩৪১৩)।

> খাবারের শেষে দোয়া পড়া: আল্লাহ তায়ালা খাবারের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ করেন। এ দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। খাবার গ্রহণ শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য।

খাবার শেষে রাসূল (সা.) আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন ও দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন: ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’  (বুখারী, হাদিস নম্বর: ৫৪৫৮)।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা যদি রাসূল (সা.) এর সুন্নতগুলো জীবনে আঁকড়ে ধরতে পারি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় হাবিব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাবারের সময়সহ তাঁর জীবনের প্রতিটি সুন্নত পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top