এখনকার ঈদের অডিও
আর বাজতে শোনা যায় না, বরং দেখা যায়। দেখতে হয়! এবং তা ঘুরতে থাকে বিভিন্ন
চ্যানেলের সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠান, গানের দুটি চ্যানেল আর ইউটিউব ঘিরে। সকল
শিল্পী এখন ইউটিউব আর ডাউনলিংক গুনতেই ব্যস্ত। যেন এক শিল্পী আরেক শিল্পীকে
এটা দেখানোর বাহাদুরিতে সামিল হচ্ছেন, ‘এই দেখো, আমার গানের ইউটিউব হিট
তোমার থেকে এতটা বেশি।’ গানের মান নিয়ে বা কথা-সুরের ঢং নিয়ে তাই আলোচনা
এখন আর মুখ্য নয়। তাই এখন গানটা শুধু শোনার বিষয়ে নেই। তার মডেল কে,
চিত্রায়ণ কেমন, বাজেট কেমন, কোন ক্যামেরায় শুটিং করা হলো—এসব নিয়েই চলছে
গানের বাজারে বাহাদুরি।
তবে এর ভেতরেই ভালো কথা-সুর ও গায়কীই বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করবে, এটাই সবাই প্রত্যাশা করে।
ঈদের
অডিও বাজারেও চলেছে এই বাজিমাতের কারসাজি। তবে দীর্ঘদিন পর মিলার
আনসেন্সরড গানের একটি ভিডিও বিভিন্ন চ্যানেল ও ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে।
গানটিতে মিলার অসাধারণ গায়কী আর অনবদ্য পারফর্মেন্স আবারও প্রমাণ করেছে যে,
পপ গানে মিলার প্রতিদ্বন্দ্বী এদেশে নেই। অন্যান্য শিল্পীও নিজেদের
সামর্থ্যের জোর অনুসারে ভিডিও করেছেন। সেদিক দিয়ে ঈদের আগেই ব্যাপক আলোচিত ও
জনপ্রিয় হয় ইমরানের ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটি। ইমরানের সলো অ্যালবামের
এই গানটি তার জায়গাটি আরও পোক্ত করে দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন প্রায় ঘুমিয়ে
থাকা হাবিব-বালামরা আবারও চটকদার ভিডিও নিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে
আগের জায়গাটিতে ফিরে যাওয়াটা সবসময়ই কঠিন। এ সত্যটা তাদের ক্ষেত্রেও ফলেছে।
যথারীতি আরফিন রুমীর চতুর্থবারের মতো নকল ও চৌর্যবৃত্তির করায় এবার
ক্যারিয়ার ডুবল তরুণ গায়িকা কর্ণিয়ার।
ইউটিউবের
সরাসরি ডিস্ট্রিবিউটার কাইনেটিক মিউজিকের কর্মকর্তা জুয়েল মোর্শেদ বলেন,
আরফিন রুমীর এই নকলবাজি না থাকলে কর্ণিয়ার গানটি আরও ব্যাপকতা পেত। কিন্তু
অডিও-ভিডিও দুটিই নকল হওয়ায় এর দর্শকও কমে গেছে। রুমী প্রথমে বিশ্বকাপের
টাইটেল গানে নকলের সহায়তা নেন, এরপর ‘সহে না যাতনা কি করি বলো না’ গানটিতে
কাটপেস্ট সঙ্গীত করেন, তারপরে চ্যানেল সিক্সটিনের থিম সংয়ে এ আর রহমানের
গানের হুবহু কপি করেন, সর্বশেষ কর্ণিয়ার গানে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়ে
প্রমাণ করে দিলেন, তার এটি চিরাচরিত স্বভাব। এদিকে আরফিন রুমীর প্রাক্তন
স্ত্রী অনন্যা এবার তার নতুন সলো অ্যালবাম প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছেন।
সাংসারিক টানাপোড়েন আর মামলার প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর এবারে গান নিয়ে তারা
প্রতিযোগিতায় নামলেন।
এছাড়া
ঈদের আগে অডিও ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় সাফল্যের খবর হলো বিভিন্ন রিংটোন ও
ওয়েলকাম টিউন থেকে হিন্দি গান নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণা। একই সাথে এফএম স্টেশনে
ননস্টপ হিটস নামে যে একটি বাংলাদেশি গানের পাশাপাশি দুটি বিদেশি গান ঢুকিয়ে
দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এটিও বন্ধ হওয়া উচিত।
এছাড়া
এবারের ঈদ ছিল সিনিয়র ও প্রকৃত শিল্পীদের অভিমান ভাঙার বছর। আইয়ুব বাচ্চু,
মাইলস, অবসকিউরসহ একাধিক সিনিয়র ব্যান্ডদল তাদের নতুন ট্র্যাক নিয়ে হাজির
হয়েছেন। এর বাইরে বাজারে চটুল গানের গায়ক হিসেবে ইলিয়াস তার নিজস্ব
শ্রোতাদের মানেরই গান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে স্যাড রোমান্টিক
গানের গায়ক বেলাল খান তার একটি গানের ভিডিওতে অশ্লীলতার চূড়ান্ত করে নিজের
জনপ্রিয়তা বাড়ানোর স্থূল প্রতিযোগিতায় নেমে বিকৃত রুচির পরিচয় দিয়েছেন।
এর
পাশাপাশি প্রায় সকলেই নিজের গান নয়, বরং চটকদার ভিডিও দিয়ে চমক দেওয়ার
চেষ্টা করেছেন। গানের কথা যেখানে বিশেষায়িত হয় না বা মুখ্য নয়, গানের সুরের
মৌলিকতা নেই। সেখানে মুখ্য ছিল কোন ক্যামেরায় শুটিং আর কোন মডেলকে নিয়ে
কতটা কৌতূহলী ভিডিও সৃষ্টি করা।