বুধবার
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের শেষে এই স্মারক লিপি পেশ করা
হয়। সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে অর্পন, আকাশ, গ্রিন বেল্ট ট্রাস্ট,
উদয়ন বাংলাদেশ, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলন, ডোক্যাপ, পালস-বাংলাদেশ,
সমাজ, সিডিপি, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন জোট ও কোস্ট ট্রাস্ট।
কোস্ট
ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে
আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন জোটের
সমন্বয়কারী মো. মজিবুল হক মনির। এতে আরও বক্তব্য রাখে নিরাপদ নৌপথ
বাস্তবায়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক আমিনুর রসুল বাবুল, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের
বদরুল আলম এবং অর্পনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের হাজারী।
মো.
মজিবুল হক মনির বলেন, ৮ জুলাই বাংলাদেশের নৌপরিবহন ক্ষেত্রে ভয়ংকর একটি
দিন। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি নাসরিন ডুবে শত শত
মানুষের প্রাণহানী হয়। দুর্ঘটনার পরে আমাদের পক্ষ থেকে পরিচালিত একটি
জরিপে দেখা যায়, ঐ দুর্ঘটনার ফলে শুধু ভোলা জেলারই প্রায় ৪০২জন নিহত হয়।
এর ফলে ১২৮ টি পরিবার অসহায় হয়ে যায়, কমপক্ষে ৬টি শিশু বাবা মা,ভাই বোন
হারিয়ে অনাথ হয়। এ ছাড়াও ঈদের আগে-পরে পিনাক ৬, কোকো এবং এমভি সালাউদ্দিন
ডুবে শত শত পরিবারের ঈদের আনন্দ নষ্ট করে দেয়। প্রতিটি দুর্ঘটনা পর্যালোচনা
করে প্রায় একই রকম কারণকে দায়ী করা হলেও সেগুলো অবসানে কোনও উদ্যোগ চোখে
পড়ে না। এবারের ঈদে যেন এরম কোনও অব্যবস্থা না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি সুনদির্িষ্ট দাবি উপস্থাপন করা হয়, দবিগুলো হলো—
ঈদ
পর্যন্ত সকল ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ ও নতুন নৌযানের স্থায়ী ও অস্থায়ী সার্ভের
(ফিটনেস সার্টিফিকেট) প্রদান বন্ধ রাখা, প্রতিটি নৌযান ছাড়ার পূর্বে
অবশ্যই লঞ্চের, মাস্টার ও ড্রাইভারের প্রয়োজনী কাগজপত্র পরীক্ষা করে ছাড়ার
ব্যবস্থা করা, লঞ্চে ওঠার আগেই টিকেট নিশ্চিত করা এবং যাত্রীর নাম ঠিকানা
রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা,দিনেও লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা এবং রোটেশন
প্রথা বাতিল করা, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকর
মনিটরিং করা,পল্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়া বাধ্যতামূলক করা এবং মাঝ নদীতে যাতে
নৌকা বোঝাই হয়ে যাত্রী উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
আমিনুর
রসূল বাবুল বলেন, নৌ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অব্যস্থাপনা। সংশ্লিষ্ট
বিভাগগুলোর দুনীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেসবিহীন
লঞ্চগুলো চলাচল করে। যে লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে গেল সেটা
কিভাবে ছাড়লো? কর্মকর্তারা কী করলেন? এবারের ঈদে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আব্দুল
কাদের হাজারী বলেন, দেশের শকতরা প্রায় ৩৫% যাত্রী নৌপথে চলাচল করে, মোট
মালামালের ৭০% এই পথে পরিবহন করা হয়। তাই দেশের অর্থনীতির জন্য এই পথটিকে
নিরাপদ করতে হবে।
বদরুল
আলম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের অবলম্বন এই নৌপথ। অথচ এই
নৌপথই তাদের কান্নার কারণ হয়ে যায়। এবারের ঈদে যেন এই নৌ পথে কোনও
প্রাণহানী না ঘটে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। এ্ই বছর ঈদ হচেছ এমন একটা সময়ে
যখন নদীর ভরা মৌসুম। তাই দুর্ঘটনার অশঙ্কও বেশি।
মোস্তফা
কামাল আকন্দ বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এই মুহূতের্ কিছু উদ্যোগ যেমন নিতে
হবে,তেমনি নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপও নিতে হবে,
যেমন—নকশা প্রণয়ন এবং তদারকির দায়িত্বটি বিকেন্দ্রিকরণ এবং আরও বেশ কয়েকজন
জরিপকারী নিয়োগ দেয়া।