এইবারের ঈদে রাজধানী হইতে প্রায় এক কোটি মানুষ ঘরে ফিরিবে। প্রতিবত্সরই ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষ বহু বাধা পার হইয়া নিজ পরিবারের সহিত ঈদ উত্সব পালন করিয়া থাকে। বহু কষ্টে মানুষ টিকেট সংগ্রহ করে, ইহার পরে যানজট আকীর্ণ দীর্ঘপথ পার হইয়া ঘরে পৌঁছাইয়া থাকে। বাত্সরিক উত্সব, ছুটি উদযাপন এবং প্রিয়জনদের সহিত সাক্ষাত্—এই তিন বিষয় মিলাইয়া পুরা বিষয়টি খুবই আনন্দের হইবার কথা। কিন্তু এই আনন্দ শতভাগ পাওয়া দুরূহ হইয়া পড়ে যাত্রাপথের বিড়ম্বনায়। ইহাকে আনন্দযাত্রা না বলিয়া, দুর্ভোগযাত্রা বলিতে হয়। ঈদের সময় রাজধানী কিছুটা ফাঁকা হয় বটে, কিন্তু মহাসড়কগুলি যানজটে পূর্ণ হইয়া উঠে।
তবে এইবারে ভোগান্তি অন্যবারের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম হইবে বলিয়া আশা করা হইতেছে। অন্তত সরকার সেইরকম প্রস্তুতি লইয়া রাখিয়াছে বলিয়া ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হইয়াছে। বর্ষার কারণে মহাসড়কগুলির কোন কোন স্থানে খানাখন্দ থাকিলেও তাহা মেরামতের কাজ শেষ হইয়া আসিয়াছে। এখন চালক হইতে যাত্রী, সকলে একটু সচেতন হইলেই যাত্রাপথ সুগম হইবে। অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ কয়েকটি মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ ও কোথাও কোথাও ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায়, কিছু স্থানে যানজটের ফলে দুর্ভোগ পোহাইতে হইতে পারে। বিপদ ডাকিয়া আনতে পারে টানা বর্ষণ। টানা বর্ষণে রাস্তা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়। নয়তো সারা দেশের মহাসড়কগুলিতে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করিবার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও হাইওয়ে পুলিশকে তত্পর থাকিবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করিয়া ইহার সিংহভাগ অংশই ব্যবহারের জন্য খুলিয়া দেওয়া হইতেছে। যান চলাচলে ইহার কিছু সুবিধা পাওয়া যাইবে। তবে গাবতলী, টঙ্গী ও যাত্রাবাড়ীর প্রবেশমুখ ও বহির্মুখকে প্রবহমান রাখিতে পারাটা একটা চ্যালেঞ্জ হইবে কর্তৃপক্ষের জন্য।
আসলে আন্তরিকতা, সততা ও সচেতনতা কেবল সরকারের থাকিলেই চলে না, সকল পর্যায়ের নাগরিকেরই এই গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। কেবল তাহা হইলেই একটি জাতি সামগ্রিকভাবে উন্নত হইতে পারে, একটি দেশ বসবাসের জন্য আদর্শ হইতে পারে। শুধু ঈদে নয়, মহাসড়কগুলি বত্সর জুড়িয়া যান চলাচলের উপযোগী রাখিতে সরকার বা মন্ত্রণালয় হইতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপই লওয়া হইয়াছিল। প্রয়োজনীয় বরাদ্দও দেওয়া হইয়াছিল। ইহার পরেও কোথাও কোথাও যে খানাখন্দ সৃষ্টি হইয়াছে, ইহার মূল কারণ ঠিকাদার ও মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসততা ও খামখেয়ালিপনা। বিশেষত বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের সময় উপযুক্ত উপাদান ব্যবহার না করিবার ফলে মহাসড়কগুলির অনেক স্থান টেকসই হইতেছে না। অনেক সময় দেখা যায়, মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে কাজ করিতেছে অনভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি বা সংস্থা। ইহা ছাড়া সড়কগুলি সঠিকভাবে মনিটরিং ও নিয়মিত বিরতিতে মেরামত করা হয় না। কোন কোন সড়ক ভাঙাচোরা হইয়া গেলেও মাসের পর মাস অযত্নে পড়িয়া থাকে। সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কর্মকর্তারা তা তদারকি তো করেনই না—এমনকি মন্ত্রণালয়কেও সঠিক সময়ে তাহা অবহিত করেন না। সকল পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট মানুষের অসহযোগিতার ফলে অনেক উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে কার্যকর থাকে না। সড়ক ব্যবস্থাপনার এই অনানুষ্ঠানিক ত্রুটিসমূহের কুফল ভোগ করিতে হয় সর্বসাধারণকে। ঈদের ছুটির সময় মহাসড়কে চাপ বৃদ্ধি পাইলে ত্রুটিসমূহ উত্কটভাবে প্রকাশিত হইয়া পড়ে। তবে এইবারের ঈদে সরকারের প্রস্তুতি ভালো। সকলের যাত্রা মসৃণ হউক, সবার জন্য শুভ কামনা।