আজ রক্তে ভেজা
আগস্টের তিন তারিখ। এ মাসেই ঘাতকের তপ্ত বুলেটে বিদীর্ণ হয়েছিলো জাতির
পিতার বুক। তার সাথে আত্মত্যাগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরো অনেকেই। সে
রক্তের সিঁড়ি বেয়েই বাঙালি জাতি আজ পৌঁছেছে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে। এ মাস
শোকের মাস। এ মাস নতুন করে আত্মপরিচয় ফিরে পাওয়া একটি জাতির ক্রন্দনের মাস।
আগস্ট আমাদের অবিনাশী চেতনা শানিত করার মাস। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের মাস
শোকের আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের এক
ক্ষণজন্মা পুরুষ। বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন এক সময়ে তার আবির্ভাব ঘটেছিল যখন
এ ভূখণ্ডের মানুষ মুক্তির জন্য প্রহর গুনছিলো। ঔপনিবেশিক শাসনের নিগড়ে
পিষ্ট বাঙালি জাতি একজন যোগ্য নেতার সন্ধান করছিলো। তার জন্মের সময়টাতে
এদেশে চলছিলো ইংরেজ শাসন। খুব ছেলেবেলায়ই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও
জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। তিনি যখন স্কুলের ছাত্র তখনই বন্ধুদের সাথে
স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন। এরপর শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরে তার
স্বদেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ঘাতকেরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকেই শুধু হত্যা করেনি
সেদিন হত্যা করা হয়েছিলো একটি জাতির আত্মপরিচয়কে। আমাদের অবিনাশী চেতনাকে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নিয়ে ইতিহাসে অনেক কথাই লেখা হয়েছে। একদা বুক ফুলিয়েও
অনেকে এই হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওই ঘাতকেরাও তার
আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্বের কাছে হার মেনেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন এক
গণতান্ত্রিক দেশের জননেতা যার তুলনা অন্য কারো সাথে দেয়া যাবে না। তার
জীবনটাই ছিলো যেন মানুষের জন্য উত্সর্গীকৃত। একজন অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষ
যেমন তার কাছে মন খুলে কথা বলতে পারতেন ঠিক তেমনি সমাজের উঁচুতলার মানুষও
তার কাছে সমান সমাদর পেতেন। তৃতীয় বিশ্বে এমন জনদরদী নেতার আবির্ভাব আর
ঘটেনি। তার সম্বোধনের মধ্যে এক চুম্বকীয় শক্তি কাজ করতো। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে
যারা একদা বিভিন্ন ধরনের আস্ফাালন করেছেন ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। ইতিহাস
কাউকে ক্ষমা করে না।
অন্যান্য
বছরের ন্যায় এবারও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন পালন করছে
জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট। শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচির
দ্বিতীয় দিন গতকাল রবিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক
খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন
কর্মসূচি পালন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাংলাদেশে
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধ-দখলদারির রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়। এর
ধারাবাহিকতা চলেছে বহুদিন। আজ তার কন্যা তারই রক্তের যোগ্য উত্তরাধিকারী
রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও প্রতিহিংসার বদলে সহাবস্থানের
রাজনীতির কাণ্ডারি। পিতামাতা-ভাই-সহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারিয়েও
তিনি দেশবাসীর মাঝে সান্ত্বনা খুঁজে পান। সাধারণ জনগণের কাতারে মিশে দেশ
পরিচালনা করছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। বঙ্গবন্ধুর হারানো স্মৃতি উপজীব্য
করে হাজারো বেদনা পাথর চাপা দিয়ে চলেছেন তিনি। জাতির পিতার তনয়া হিসাবে সব
ষড়যন্ত্র দুপায়ে মাড়িয়ে চলেছেন তিনি। তার এ সাহসী পদক্ষেপও যুগ যুগ ধরে
বাঙালি জাতির কাছে অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে। যেমন শোকের অশ্রুকে শক্তিতে
রূপান্তরের মাধ্যমে এগিয়ে চলার শপথ নিয়েছে পিতৃহারা জাতি।