পরিবারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে করণীয়

S M Ashraful Azom
যে ঘরে থাকছি, যে মানুষদের নিয়ে বসবাস করছি তাদের সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ না হয় তাহলে জীবনে নেমে আসে হতাশা।এক পর্যায়ে ধ্বংসের লীলায় পরিণত হয় এটি। পরিবারকে শান্তিময় করতে আমাদের কিছু করণীয় থাকে। আসুন জেনে নিই, কীভাবে পরিবারে শান্তি বজায় রাখা যায়।

১. পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করুন।মাকে জড়িয়ে ধরে আমরাও বলতে পারি যে, 'মা কেমন আছো আজকে?' কিংবা স্বামী তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে উঠার পর জিজ্ঞেস করতে পারে 'তোমার কী খবর?' সন্তানকে জড়িয়ে জানতে চাইতে পারি 'আমার বেবিটার মন কেমন আছে?' এতে সবার মধ্য ভালোলাগা সৃষ্টি হবে।

২. আপনার স্ত্রী বা স্বামী এমন আবদার করল যা পূরণ সম্ভব না। ভেবে দেখুন, হয়ত এখন সম্ভব না হলেও কখনও হতে পারে। হতে পারে আপনার সামর্থ্যের বাইরে। তখন উত্তেজিত না হয়ে কী কারণে পারছেন না, তা বুঝিয়ে বলুন। আপনিও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। মনোযোগ দেয়া মানে শ্রদ্ধা করা যা সম্পর্ককে মজবুত করে।

৩. একইভাবে সন্তানকেও তার অতিরিক্ত চাহিদা না পূরণের কারণ বুঝিয়ে বলুন। আমাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় বয়স বা আনুষঙ্গিক কারণে আমরা সন্তানের সব চাওয়া পূরণ করি না। এটার কারণটাও সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। মনে রাখবেন, সন্তান শুধু বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করবে বিষয়টা এমন না। বাবা-মাকেও সন্তানকে গুরুত্ব দিতে হবে।

৪. একে অন্যকে ছোট করে কথা বলবেন না। অপমানজনক বিভিন্ন কথা (যেমন- তুমি কেমন ঘরের মেয়ে বা ছেলে তা আমার জানা আছে, জীবনে তো এত কিছু দেখনি, অন্য বাচ্চারা পারবে তোমার মত গাধা নয়, এটা পারবে না ইত্যাদি), গালাগালি করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কথা বা শব্দ যতই ছোট হোক না কেন সম্পর্কের মিষ্টতা নষ্ট করে দেয়।

৫. একসঙ্গে মজা করুন ও আনন্দময় মুহূর্ত কাটান। খাবার টেবিলে গল্প করতে করতে খাওয়া। খাওয়া-দাওয়া শেষে একসঙ্গে গোল হয়ে বসে কোনো খেলাধুলা করা বা হাসাহাসি করুন। বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলা করবেন। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সঙ্গে কিছুটা সময় গল্প ও হাসি-ঠাট্টা করে কাটাবেন। এতে বন্ধন আরও দৃঢ় হয় ও পরিবারে শান্তি বজায় থাকে।

৬. একে অন্যের মতামতকে সম্মান করুন। একসঙ্গে বসবাস করলেই যে সব বিষয়ে একমত হতেই হবে এমনটা নয়। প্রত্যেক সদস্যের নিজস্ব মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আরেকজনের মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো আর মত মেনে নেয়া এক কথা নয়। পরিবারের অন্য সদস্যদের মতামতকে শ্রদ্ধা রেখেই নিজ মতামত প্রকাশ করার সুযোগ করে নিতে হবে। অনেক সময় স্বামী তার স্ত্রীর ওপর অন্যায়ভাবে মতামত চাপিয়ে দিতে চান আর স্ত্রীরাও স্বামীর মতকে শ্রদ্ধা করেন না। এতে পরিবারে অশান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।

৭. ছেলে-মেয়ে উভয়কে মর্যাদা দিন। বাবা বাড়ির কর্তা তাই সবাই তার কথাকেই মূল্যায়ন করেন, অন্যদিকে মায়ের কথাকে গুরুত্ব না দেয়া। এর ফলে বাবা-মায়ের মধ্যে সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় থাকে না, ঘরে অশান্তি তৈরি হয়। সন্তান মেয়ে বলে অতিরিক্ত সুবিধা পাবে আর ছেলে বলে অবহেলা কিংবা তার বিপরীতে ছেলে বলে সুবিধা পাবে এমনটা যেন না হয়। আমাদের সামাজিক অবস্থার জন্য এখনও অনেক পরিবারে মেয়েদের ও ছেলেদের সুবিধা বা মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য করা হয়। এই প্রভাব কাটাতে আমাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে আগে।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top