অভিজিতের বইয়ের প্রকাশকদের ওপর হামলা : নিহত ১, গুরুতর আহত ৩

Unknown
সেবা ডেস্ক: বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের দুই প্রকাশকের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন নিহত হয়েছেন। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিম। শনিবার দুপুরে লালমাটিয়ার শুদ্ধস্বরের কার্যালয় ও বিকেলে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতির কার্যালয়ে পৃথক এ হামলার ঘটনার ঘটে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাগৃতি থেকে অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে দুটি বই প্রকাশিত হয়। ‘সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ ও ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বই দুটি প্রকাশ করে শুদ্ধস্বর। পুলিশ জানায়, জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে শনিবার বিকেলের কোনো এক সময় তার কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে বিকেল ৩টার দিকে বই কেনার নাম করে তিন দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে পিস্তলের মুখে জিম্মি করে চাপাতি দিয়ে প্রকাশক আহমেদুল রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। যদিও দুর্বৃত্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর এ হামলা করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে। এ সময় তার স্ত্রী বন্যা গুরুতর আহত হন। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল ও জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক। অভিজিৎকে হত্যার পর তাদের বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। শনিবার দুপুর ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে লালমাটিয়া সি-ব্লকের ৮/১৩ নম্বর বাসায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যাললে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত রণদীপম জানান, ৩-৪ জন অস্ত্রধারী অতর্কিত শুদ্ধস্বর অফিসে ঢুকে হামলা চালায়। এতে শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল, লেখক ও তিনি (রণদীপম বসু) ও তারেক রহিমকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকেল পৌনে ৩টার দিকে হঠাৎ আমার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। তাতে লেখা ছিল, ভাই প্লিজ আমাদের বাঁচান। নিচে লেখা ছিল টুটুল। তখন আমি মোহাম্মদপুর থানায় বসা ছিলাম। এসএমএসটি পড়ে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেনি। পরে একজন পরিদর্শককে তাৎক্ষণিক টুটুলের বাসায় যাওয়ার নির্দেশ দিই। পরে ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠাই।’ ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসার ভেতরে বইপত্র, চেয়ার-টেবিল এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে।’ এদিকে শুদ্ধস্বরের ঘটনার আড়াই ঘণ্টার মাথায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশানীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে তার কার্যালয় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে দীপনকে জমাটবাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও চিন্তক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে। জাগৃতি প্রকাশনী ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রকাশনীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা অটোলক করা রয়েছে। ভেতরে ঢুকে তাকে (দীপনকে) জখম অবস্থায় উপুড় হয়ে মেঝের ওপর পড়ে থাকতে দেখি। মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। শাহবাগ থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন। তারা নিজেদের আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) দাবি করে। রাত ৯টার দিকে টুইটারে করা এক টুইটে এ দায় স্বীকার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। তাতে লেখা ছিল- ‘আমরা আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এ হত্যার দায় স্বীকার করছি।’ 
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top