সাপাহারে পুনর্ভবা নদী চোরাকারবারীদের রুটে পরিণত হয়েছে

S M Ashraful Azom

The reclining river has become the land of smugglers
গোলাপ খন্দকার সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত পুনর্ভবা নদীটি রাতের আধারে চোরাকারবারীদের রুটে পরিণত ও গৃহবধুদের গোবরের ঘুঁটে শুকানোর প্রান্তরে রুপ ধারন করেছে।চৌত্র মাস আসতে এখনও ঢের দেরী এরই মধ্যে এক কালের খর¯্রতা পুনর্ভবা নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এক সময় সারা বছর পানিতে ভরা যৌবনে দাঁড়িয়ে থাকলেও  নদীটি এখন শুধুই স্মৃতি আর মরা খাল হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে তার স্মৃতি বহন করে চলেছে মাত্র।

জানাগেছে নদীটি ভারতের দক্ষিন দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহীত হয়ে বামন গোলা ও তপন থানার বটতলী এবং লক্ষী নারায়ন গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার  পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল,নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে।

এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা জানান এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। বৃটিশ ও পাকিস্থান শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাটগুলি অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সাথে যোগাযোগের এক মাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকত এমন কি নদীতে বিবাহের বর যাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। এসময় এ নদীতে চলত মাল বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গম সহ বিভিন্ন পন্য বহন করত চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাট সহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়ত। অতীতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকুপ না থাকায় ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায়  এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যাবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দর সহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোয়া সহ নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মানের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যাবস্থা, নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার ঐতিহ্য।


এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাক যোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেক টাই ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ইতিকথা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ন যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবেনা এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যাবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ন যৌবন, সে সাথে কৃষি কাজে ব্যাবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার লোকজন। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারনের কষ্টের কথা চিন্ত করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাপানিয়া ঘাটে দু’টি ব্রীজ নির্মান করেছে। বর্তমানে নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি স্থল উত্তর পাতাড়ী গ্রাম হতে দক্ষিনে প্রায় ১০কোটি টাকা ব্যায়ে ১১২০মিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্ব পাড়ে ব্লক বসিয়ে বাঁধ নির্মানের কাজ প্রায় শেষের দিকে, এবছরের জুন মাস নাগাদ এ কাজ সমাপ্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন। বাঁধ নির্মানের পর সীমান্ত এলাকার অবহেলীত জনপদের উন্নয়নে এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top