বাঁশখালীতে জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র বিমোচনে কোডেক-ক্রেল প্রকল্প

S M Ashraful Azom
Codex-Crayel project in Banshkhali climate change and poverty reduction
ক্র্যাল প্রকল্পের সহযোগীতায় বাঁশখালি’র শীলকুপ মনকিচর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় সামাজিক বনায়ন পরিদর্শন করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরা
বাঁশখালী প্রতিনিধি: সামাজিক বনায়ন হলো স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত বনায়ন কার্যক্রম যার প্রত্যক্ষ সুফলভোগীও উপকারভোগী হয়ে থাকেন। বনায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা, বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, লভ্যাংশ বন্টন ও পুনঃবনায়ন সব কাজেই তারা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকে।

ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্থ গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য। সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা এবং তাদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানী, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণ করা। নার্সারি সৃজন, প্রান্তিক ও পতিত ভূমিতে বৃক্ষরোপণ করে বনজ সম্পদ সৃষ্টি, মরুময়তারোধ, ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চল রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং সর্বোপরি কর্মসংস্থান ও দারিদ্র নিরসনে সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


এ লক্ষ্যে জলদী  সহ- ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০০৬ ইং থেকে বনবিভাগের সাথে বন ও বন্যপ্রাণি রক্ষায় নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে বাঁশখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে। বর্তমান কমিটি ২০১৫ ইং হইতে এই পর্যন্ত ইউএসএইড'র অর্থায়নে  কোডেক-ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বাস্তবায়িত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলায় ৮টি প্রাতিষ্ঠানিক বনায়ন ও ২কি.মি. বেড়ীবাধঁ বনায়নের উদ্যেগ গ্রহন ও বাস্তবায়ন।
আরও পড়ুন>>শিলকূপ ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহসিনের মায়ের ইন্তেকাল!
বনের উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতায় জ্বালানী সাশ্রয়ী ৫০টি উন্নত চুলা প্রদান। শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যা দূরীভূত করতে জলদী ভিলেজার পাড়া ও পুইছড়ি অফিসটিলায় গভীর নলকূপ স্থাপন। বাঁশখালী ইকো-পার্কে দর্শনার্থী বৃদ্ধিতে প্রধান সড়কের সাইনবোর্ড সংস্কার। জলদী  সহ- ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রান্ট্স প্রকল্পের সহযোগিতায় মাছ চাষ ও গরু মোটাতাজাকরন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।

জলদী  সহ- ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যেগে গ্রান্ট্স প্রকল্পের সহযোগিতায় ১০৫ জন সিপিজি সদস্যদের মাঝে ফলজ চারা ও ডিউটি উপকরন ( জুতা, ছাতা ও পোশাক ) বিতরন। জলদী  সহ- ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় বননির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর মাঝে ৫০টি কম্বল বিতরন। এদিকে জলদী সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা বুধবার ২৫ এপ্রিল সকালে কোডেক-ক্রেল প্রকল্প চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য জলদী সাইট অফিস হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।


অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জলদি  অভয়ারন্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল, চাম্বল বিট কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ, নাপোড়া বিট কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রউফ মিয়া, কোডেক ক্রেল প্রকল্পের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমিউনিকেশন অফিসার কামরুল ইসলাম, পিপলস ফোরামের সভাপতি আবু তাহের, সহ-সভাপতি জরিনা আক্তার, জলদী সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ জোবাইরুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি শাহ্ মুহাম্মদ শফিউল্লাহ, দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি সৈকত আচার্য্য, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিজান বিন তাহের, দৈনিক ডেসটিনি প্রতিনিধি শিব্বির আহমদ রানা, সদস্য গিয়াস উদ্দিন, কোডেক ক্রেল প্রকল্পের জলদী সাইট ফ্যাসিলিটেটর জগদীশ মন্ডল, মাঠ সংগঠক সুজন দাশ, জলদী সহব্যবস্থাপনা কমিটির হিসাব রক্ষক আতিকুর রহমান মানিক প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, ইউএসএইড এর অর্থায়নে ও ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতায় বনের জমি, গাছপালা, পশু পাখি রক্ষাসহ ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন এবং দারিদ্র বিমোচনে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ৭টি প্রতিষ্ঠানে বনায়ন করা হয়েছে।

এছাড়াও দারিদ্র বিমোচনে হত দরিদ্রদের মাঝে সার, বীজ, কীটনাশক সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতায় বাঁশখালীতে প্রথম ড্রাগন ফলের চাষাবাদ করা হয়েছে বলেও জানান বক্তারা। আলোচনা সভা শেষে ক্রেল প্রকল্পের একটি প্রতিনিধি টিম ও স্থানীয় সংবাদকর্মীরা প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে শীলকূপ মনকিচর বেড়িবাঁধ এলাকায় দীর্ঘ ২ কিলোমিটার সবুজ বনায়ন গড়ে তুলেছে। এছাড়াও তারা বাঁশখালী বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আম্বিয়া খাতুন ক্রেডেট মাদ্রাসা, মাস্টার নজির কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ ও ঔষুধী বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে গড়ে তুলেন। এছাড়াও ড্রাগন ফল চাষাবাদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৫ জন কৃষক, ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৪০ জন ও শশা চাষ করছে ২০ জন যাদের বীজ সার সেক্স ফেরোমন ট্রাপ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে প্রকল্পের পক্ষ থেকে ।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top