সেবা ডেস্ক: মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে চার লাখ আটষট্টি হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই বাজেট টি হবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তে (এডিপি) রেকর্ড সংখ্যক নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী বছর হলেও এক ধরনের রক্ষণশীল বাজেট তৈরির আভাস দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরের বাজেট হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার। সচিবালয়ের এক বৈঠকে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির অবস্থা অনুসারে আমি গত ৮-৯ বছরে বাজেটের যে আকার বাড়াতে চেয়েছি, তা আগামী বাজেটেও প্রতিফলিত হবে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। আগামী বাজেটের আকার চার লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। এটি প্রাথমিক প্রাক্কলন।’
সূত্র জানায়, নির্বাচনী বছর হওয়ার কারণেই রাজস্ব সংগ্রহে সরকারের দিক থেকে নতুন নতুন পথ খোঁজা হবে না। ফলে রাজস্ব সংগ্রহ স্বাভাবিকভাবে যা বাড়বে, তাতেই সরকার সন্তুষ্ট থাকবে। ২০১৮-১৯ সালে দেশের মোট জিডিপি হবে ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা বর্তমানে রয়েছে ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ধরা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২৪ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। আর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ধরা হতে পারে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর বাইরে এনবিআর ও করবহির্ভূত রাজস্ব আয় ধরা হতে পারে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছর সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। বিশাল পরিমাণ এই ঘাটতি পূরণ করা হবে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, স্থানীয় ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে।
আগামী বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ খাতে তেমন ভর্তুকি রাখতে হয়নি, সরকারও স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় সম্পদ কমিটির বৈঠকে জ্বালানি খাতে বড় আকারের ভর্তুকি রাখার পরামর্শ এসেছে। এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারী কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ দিতেও ভর্তুকি রাখতে হবে। গৃহনির্মাণ খাতে জনগণকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হলেও সরকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য স্থায়ী বসতি গড়ে দেওয়া হবে। এ জন্য আসছে বাজেটে এ খাতে পৃথক বরাদ্দ রাখা হবে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত চাহিদাপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী নতুন-পুরনো মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বিপুলসংখ্যক এই রিফিউজির বসবাসের জন্য ভাসানচর যথেষ্ট নয়। ফলে কক্সবাজারের উখিয়া, কুতুপালংসহ অন্য যেসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে সেগুলোতেও নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে আগামী বাজেটে।
মূল্যস্ফীতির হার আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বিবিএসের মাসওয়ারি হিসেবে দেখা যায়, গত মার্চে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি পাওয়ায় যে কোনো মূল্যে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় সরকার। আগামী বাজেটে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাম্পার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে ব্যাহত না করলে ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৮ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা হবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে এমন একটি বাজেট উপহার দেবেন বলে আশা করেছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের আরেকটি সফলতার সাক্ষী হতে তাই দেশবাসীও তাই অধীর অগ্রহে অপেক্ষমান।