জামালপুরে জ্বালানী বিহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কার্বন শোধন যন্ত্র আবিস্কার

S M Ashraful Azom
0
জামালপুরে জ্বালানী বিহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কার্বন শোধন যন্ত্র আবিস্কার
ক্ষুদে বিজ্ঞানী রেজাউল করিম রুমান ও তার আবস্কৃত  ওজন-ভাটি মেশিন
 মো. শাহ্ জামাল, জামালপুর সংবাদদাতা: ১৪ বছর গবেষণার পর বিশ্বজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ক্ষুদে বিজ্ঞানী রেজাউল করিম রুমান (২৮) সম্পূর্ণ জ্বালানী বিহীন, পরিবেশ বান্ধব-সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কার্বন শোধনের চমকপ্রদ যন্ত্র আবিস্কার করেছেন।

এই যন্ত্রের সাহায্যে শোধিত কার্বন থেকে প্লাস্টিক-পলিমার তৈরি করা যাবে। গবেষণায় তিনি জ্বালানীর পরিবর্তে পানি ব্যবহারের মাধ্যমে কঠিন পদার্থের শক্তিকে তরল পদার্থের ওজন শক্তি রূপে কাজে লাগিয়েছেন। জ্বালানী খরচমুক্ত এই যন্ত্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের চাহিদা পূরণের পরও পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রেও বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

জ্বালানীর পরিবর্তেএই পদ্বতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবীর জলবায়ুর নির্মল পরিবেশ বজায় থাকবে। বিশ^জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই ওজন শক্তির ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের কার্যকারিতা এবং পারফরমেন্সের সাথে মিল রেখে এর নাম রাখা হয়েছে ওজন-ভাটি মেশিন। 

বিশ^জলবায়ু চরম বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃস্বরণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কার্বনডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, জলীয় বাস্প, গ্যাস আস্তরণ তৈরী করে থাকে।

বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে গ্রীন হাউজ গ্যাস। অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রতিক্রিয়া। এই আস্তরণের ফলে পৃথিবীতে যখন সূর্যের আলো-তাপ প্রবেশ করে তখন দিনের বেলায় গরম হয়। তাপমাত্রা যদি ৩৪ অথবা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়; সে ক্ষেত্রে রাতের তাপমাত্রা অধের্ক কমে যায়। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা চক্র।

সূর্যের তাপমাত্রা এবং গ্রীন হাউস গ্যাসের অতিরিক্ত তাপমাত্রা মিলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি হয়। পৃথিবীর বরফের পাহাড়গুলি দ্রুত গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির আশংকা থাকে। উপকুলীয়-নিচু দেশগুলি স্থায়ীভাবে বন্যাকবলিত হয়। মিষ্টি ও সুপেয় পানির অঞ্চলে লবণাক্ত পানি ছড়িয়ে পড়লে খাবার পানির অভাব দেখা দিতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশের কৃষি আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। বায়ু-পানি বাহিত ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগসহ বাড়ছে নানা অসুখ বিসুখ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বিশ^ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কার্বনডাইঅক্সাইডের ৭০% বিষাক্ত নিঃসরণ গ্যাসই দায়ী। এই বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসরণ দমন করতেই গবেষণার কাজে হাত দেন রেজাউল।

 অবশ্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়-এই বিষাক্ত গ্যাস রোধে প্রচুর অক্সিজেন তৈরীর লক্ষ্যে বৃক্ষরাজি লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় কার্বনডাইঅক্সাইড নিয়ে টানা ১৪ বছর গবেষণা-পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর পর সফলতা অর্জন করেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী রেজাউল। গবেষণায় আবিস্কার করেন বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড নির্মূল পদ্ধতি এবং কার্বনডাইঅক্সাইড শোষন মেশিন। ওদিকে মিল-ফ্যাক্টরী, কল-কারখানা, ইটের ভাটা, জ¦ালানী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও সকল প্রকার যানবাহন থেকে কার্বন নিঃস্বরণ দমন করবে ওজন শক্তি দ্বারা চালিত মেশিনটি।

এই আবিস্কারে প্রাথমিক খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। এই যন্ত্রের সাহায্যে সাশ্রয়ীমূল্যে জ্বালানী ছাড়াই একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। অপরদিকে মিলকারখানার ধোয়াসহ-গ্রীণহাউস কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস শোষণের মাধ্যমে বিষাক্ততা দুর করবে। আবার এই বিষাক্ত কার্বনকে শোধনের মাধ্যমে ঘন তরল পদার্থে রূপান্তরিত করবে। সেই ঘন তরল পদার্থ দিয়েই প্লাস্টিক-পলিমার তৈরী করবে।

শত বছরের গ্যারান্টিযুক্ত জ্বালানীবিহীন-পরিবেশ বান্ধব ৫০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান স্থাপনে খরচ হবে প্রায় ১৪/১৫ লাখ টাকা। এত টাকা এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর নেই। সরকারি-বেসরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে রেজাউলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।

রেজাউল করিম জামালপুরের মেলান্দহের মুন্সীনাংলা গ্রামের আ: লতিফের ছেলে। তাঁর মাতার নাম রুবিয়া বেগম। মেলান্দহ পৌরসভার চাকদহ সদারবাড়ির গ্রামের নানার বাড়িতে মা’র তত্ত্বাবধানে বড় হয়েছেন রেজাউল। এক সময়ের বিত্তশালী রুস্তম আলীর মেয়ে রুবিয়াকে বিয়ে করেন আ: লতিফ। শ্বশুরের দুর্দিনে কোলের সন্তান রেজাউলসহ স্ত্রী রুবিয়াকে পিত্রালয়ে রেখে আরেক বিয়ে করেন আ: লতিফ।

অভাবগ্রস্থ এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী বর্তমানে ঢাকার গাজীপুরের খাঁ পাড়ায় দর্জি কাজ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি গবেষণার কাজ করছেন।
লেখাপড়া করেছেন ব্র্যাক স্কুল (৫ম শ্রেণি) পর্যন্ত। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি এবং বই কেনার জন্য একবার পিতার কাছে ধর্না দিতে গেলে সৎভাইয়েরা মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। প্রাণনাশ করতে নাপেরে শত্রুতাবশত কিশোর রেজাউলকে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মিথ্যা মামলার আসামীও করা হয়। মামলায় কিছুদিন কারাভোগও করেন। রেজাউলের ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে বড় হবে। অর্থাভাবে তা সম্ভব হয় নি। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাণিজ্যিকভাবে এই যন্ত্রটি ব্যবহারে আগ্রহীদের কাছেও হস্তান্তরের ইচ্ছাপোষণ করেছেন রেজাউল। তিনি মনে করেন সদিচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবী জয় করা সম্ভব।


⇘সংবাদদাতা: শাহ্ জামাল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top