
সেবা ডেস্ক: জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে সপ্তাহ ধরে চলা গৃহবিবাদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পার্টির তৃণমূলে। গত ২২ মার্চ জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি এবং ২৩ মার্চ সংসদে উপনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর জাপায় দেখা দেয় সঙ্কট।
দল চালাতে ব্যর্থতা, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা থেকে বাদ দেয়া হয় এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরকে। এতে পার্টির গুটি কয়েক সিনিয়র নেতারা খুশি হলেও, বেকে বসে বৃহত্তর রংপুরসহ সারাদেশের তৃণমূল জাপা। দু’সপ্তাহ না পেরুতেই তৃণমূল জাপায় জিএম কাদেরের জনপ্রিয়তা দেখে এরশাদের ভুল ভাঙে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হন তিনি। গেল বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় কো-চেয়ারম্যানেরর দায়িত্ব দেন জিএম কাদেরকে।
শনিবার সকালে আরেক সাংগঠনিক নির্দেশনায় এরশাদ তার অবর্তমানে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সবশেষ নির্দেশনা যাতে আর কেউ পরিবর্তন করতে না পারে, শনিবার দিনভর পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জাপার সিনিয়র নেতারা এরশাদের বাসভবন এড়িয়ে চলেন।
এদিকে, এরশাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম ও বর্তমান এমপি বলেন, রংপুরের গুটি কয়েক নেতা এরশাদকে জিম্মি করে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পূণর্বহাল করেছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, এক রংপুর দিয়েই কি দল চলবে? এমনিতেই তো লোকে বলে, জাপা রংপুরের দল। সারাদেশের নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের পক্ষে নেই বলে দাবি করেন ওই নেতা। তার এই বক্তব্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, বৃহত্তর রংপুরের মাটি ও মানুষ পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রাণের স্পন্দন। আমরা চাই জাতীয় পার্টি বেচে থাকুক। কিন্তু দলের ভেতর একটি কুচক্রীমহল জিএম কাদেরসহ পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বলেন, যারা বলছেন আমরা এরশাদকে জিম্মি করিনি। ষড়যন্ত্রকারীরাই এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে পার্টিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করছেন। এরশাদই আমাদেরকে তার বাসভবনে ডেকেছিলেন।
জাপা সূত্র জানায়, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা না বলে জিএম কাদেরকে পুনর্বহালে ক্ষুব্ধ হয়েছেন কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জিএম কাদের এখনো আমলাভাব ছাড়তে পারেননি। তিনি পার্টি চালাতে কারো সহযোগীতাও চান না। এভাবে দল চলতে পারে না।
জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এ বিষয়ে বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। আমরা তার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে জাপার নেতাকর্মীসহ বিভিন্নমহলে জাপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মী চেয়ারম্যানের সব সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে জাপায় অভ্যন্তরীণ বিরোধে হঠাৎ করে এরশাদের বাসভবন ও বনানী কার্যালয়ে পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। এসব জায়গায় অবস্থান নিয়ে তারা এরশাদ ও পার্টির ভষিষ্যৎ চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষে উত্তপ্ত শ্লোগান দিচ্ছেন। ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে এরশাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে কোনো নেতা এলে, তাদের প্রতিহত করার হুমকিও দেন তারা।
এ বিষয়ে পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, গত দুই সপ্তাহ জাপায় ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রীরা পার্টি অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছেন। ভেবে দেখতে হবে এদের উৎপত্তি কোথায় থেকে। তিনি বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের বেশিরভাগই একসময় বিএনপি থেকে এ পার্টিতে এসেছেন। কেউ কেউ এরশাদের বুকে ছুরিকাঘাত করে চলে গিয়ে কোথাও অবস্থান না পেয়ে ফিরে এসেছেন। সরকারের উদ্দেশ্য জাপার এই প্রভাবশালী যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কেউ যেনো জাপা ভাঙার মিশনে লিপ্ত না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। কারণ অনেকে জাপা ভেঙে বিএনপি-জামাতের মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়।
জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল্লাহ শফি বলেন, জাতীয় পার্টি সবসময় আগুন সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে। জিএম কাদের হলেন ওই ব্যক্তি যিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রীর ক্লিন ইমেজ সদস্য। তিনি সবসময় গঠনমূলক সমালোচনা করে সরকারকে সহযোগীতা করেছেন। জাপার মধ্য সারির এই নেতা বলেন, দলে থাকা বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মা ষড়যন্ত্র করে সরকার ও এরশাদকে ভুলের মাঝে ফেলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিল।
এর আগে, জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদে পূণর্বহালের জন্য বৃহত্তর রংপুর জাপার নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারম্যানকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। ওই তারিখের মধ্যে তাকে কো-চেয়ারম্যান পদে পূণর্বহাল করা না হলে গণপদত্যাগের হুমকিও দেন তারা। এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ বিদেশেও অবস্থনারত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পূণর্বহালের দাবি জানিয়ে লেখালেখি অব্যাহত রাখেন।
এদিকে ঢাকায় বিশেষ সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য কোনো ভাবে যাতে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পূণর্বহাল করা না হয় সেজন্য এরশাদকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখেন। এরই মধ্যে গত ৩ এপ্রিল রংপুরের সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের শীর্ষ নেতারা প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে এরশাদের সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পরদিনই আবারো এরশাদ বিশেষ সিন্ডিকেটের চাপ উপেক্ষা করে বৃহত্তর রংপুরসহ সারাদেশের তৃণমূল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দাবির মুখে আল্টিমেটামের একদিন আগেই জিএম কাদেরকে কো-চোরম্যানের পদে পূণর্বহাল করেন। আর ৫ এপ্রিল ফের এরশাদের অবর্তমানে জিএম কাদেরকেই ভষিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেয়া হয়।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।