ক্ষতিকর জেনেও টাঙ্গাইলের চরাঞ্চরে বাড়ছে তামাক চাষ

S M Ashraful Azom
0
ক্ষতিকর জেনেও টাঙ্গাইলের চরাঞ্চরে বাড়ছে তামাক চাষ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ক্ষতিকর জেনেও টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল গুলোতে বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষি সম্প্রসারন কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার পরও এই তামাক চাষ বাড়ছে।

এতে করে হুমকি পড়ছে চরাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগে যে সব জমিতে মশুর, মাস কালাই, বাদাম ও ভুট্টা চাষ হতো এবার সেসব ক্ষেতের অধিকাংশেই চাষ হচ্ছে তামাক। বিশেষ করে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলে তামাকের চাষ হচ্ছে বেশি। টোব্যাকো কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে অধিক লাভের আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন এ চাষে। অথচ তামাক চাষ করতে গিয়ে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট করাসহ কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলে তামাক চাষ হচ্ছে। যমুনা, ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেষা এসব চরাঞ্চলে বর্ষাকালে পলি পড়ে। ফলে এসব এলাকার জমি উর্বর হওয়ায় আগে মশুর ও মাস কালাই, ভূট্টা, বাদাম, কাঊন, গম, আলু, আখ চাষ হতো বেশি।

কিন্তু এসব এলাকার অনেক জায়গায় কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ হচ্ছে। বহুজাতিক ও দেশীয় টোব্যাকো কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে এ ‘বিষপাতা’ চাষে। কয়েকটি টোব্যাকো কোম্পানি, বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা কোম্পানী তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা কৃষকদের অধিক মুনাফার পাশাপাশি সার, বীজ ও সেচের জন্য নগদ টাকা মূলধন (ঋণ) হিসেবে দিচ্ছে। নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় কৃষকও তামাক চাষে ঝুঁকছে।

টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মামুদনগর, চর পৌলী, দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন, দেউলী, লাউহাটি, নাগরপুরের পাকুটিয়া, ভাদ্রা, বেকরা, আটগ্রাম, সলিমাবাদ, ধুবুরিয়া, মোকনা, বনগ্রাম, শাহজানীসহ বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে।

তামাক চাষি মো.আকবার মিয়া জানান, তিনি এ বছর ৮ একর জমিতে তামাক চাষ করেছেন। প্রতি একরে তামাক চাষে খরচ হয়েছে প্রায় এক হাজার টাকা। এ তামাক বিক্রি করে লাভ হবে প্রতি একরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। তামাক চাষ করলে শুধু শরীরে খাটতে হয়, পুঁজি লাগেনা। তামাক শুকিয়ে কোম্পানীকে বুঝিয়ে দিলে লাভটা ঘরে আসে। তিনি জানান, এই জমিতে কালাই, বাদাম, চিনা চাষ করলে মূলধন ছাড়াও নিজের পাশাপাশি শ্রমিক লাগে। খরচ শেষে বিক্রি করে তামাকের চেয়ে অর্ধেকের চেয়ে কম লাভ হয়। তাই তিনি তামাক চাষ করছেন। আজিজুল, শহীদুল সাজেদুল, আজগর আলী, রশিদ মিয়া, আন্নেছ আলীর বক্তব্যও একই রকম। তাদের সবার একই কথা, তামাক চাষে জমি ও শরীরের ক্ষতি হলেও অধিক লাভের জন্যই তারা তামাক চাষ করছেন।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান বলেন, তামাক চাষ এবং তামাক পাতা শুকানো থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত করার সঙ্গে যুক্ত থাকলে বিভিন্ন চর্ম রোগে আক্রান্তসহ শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তামাক চাষে সরকারি কোন বিধি-নিষেধ নেই। তাই তামাক চাষের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া যাচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আগের চেয়ে তামাক চাষ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। এ বছর টাঙ্গাইল জেলায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

⇘সংবাদদাতা: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top