সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে লাগবে অনলাইন নিবন্ধন

S M Ashraful Azom
0
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে লাগবে অনলাইন নিবন্ধন
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যেতে হলে লাগবে অনলাইন নিবন্ধন। তবে ঠিক এখনই নয়, আগামী পর্যটন মৌসুম (ডিসেম্বর-এপ্রিল) থেকে চালু হবে নতুন এ নিয়ম।

মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত ফোরকান আহমেদ বলেন, নিয়মটি চালু হওয়ার পর যদি কেউ নিবন্ধন ছাড়া সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করেন, তবে তাকে শাস্তি অথবা অর্থদণ্ডের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজও চলছে।

ফোরকান আহমেদ বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সেন্টমার্টিনকে প্রাকৃতিকভাবে কাজে লাগানো গেলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। অথচ এখন প্রবাল-শৈবাল, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে দ্বীপটি। দ্বীপটি সুরক্ষায় মাস্টারপ্যান করা হচ্ছে।

নিয়মটি চালু হওয়ার পর কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, কতজন থাকতে পারবেন, কতটা জাহাজ চলাচল করতে পারবে- সবকিছু নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপে বসবাস করেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ করেছেন। নিয়মটি চালু হওয়ার পর আগামী মৌসুম থেকে যেতে পারবেন ১ হাজার ২৫০ জন পর্যটক। এর মধ্য থেকে কতজন দ্বীপে রাতযাপন করতে পারবেন, তা–ও নীতিমালায় নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।

১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দ্বীপটিতে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৯১ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।

দ্বীপে ৭৭ প্রজাতির স্থানীয় পাখি, ৩৩ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ মোট ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। তবে এখন অনেক প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

গত ১৭ এপ্রিল এ বিষয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডেইলি বাংলাদেশ। ১৬ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে সেখানে অনুষ্ঠিত ‘কক্সবাজারের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমদ নতুন নিয়মের তথ্য দেন।

সুলতান আহমদ বলেন, ইচ্ছা করলে যখন তখন সেন্টমার্টিন যাওয়া যাবে না। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ইচ্ছুকদের আগে থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে দৈনিক ১২৫০ জন পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন দেশের বড় সম্পদ। প্রকৃতি পরিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব না হলে অচিরেই সেন্টমার্টিনের পরিবেশ হবে ভয়াবহ।

ওই সেমিনারে জানানো হয়, ইসিএ এলাকা হিসেবে বর্তমানে সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া ও সমুদ্র সৈকত এখন পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আগের পরিবেশ। পরিকল্পনা ছাড়া স্থাপনা গড়ে ওঠায় দূষণের কবলে পড়েছে হোটেল মোটেল জোন।

৩২৫টি হোটেলের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়েছে মাত্র ৪৮টি। স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৬টি হোটেল। কক্সবাজারে প্রতিদিন কঠিন ও তরল বর্জ্য সৃষ্টি হয় ৫০ থেকে ৭০ টন। মাত্র ১২ টন বর্জ্য শোধানাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু শোধানাগারে বর্জ্য আসে মাত্র ২ টন। এসব তথ্য থেকে বুঝা যায়, কক্সবাজার পর্যটন শহরের পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ চিত্র কি?

সেমিনারে আরেক তথ্যে বলা হয়, দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পানি ব্যবহারের চেয়ে, অপচয় হয় বেশি। পাহাড় কাটার মাটি, হ্যাচারির বর্জ্য ও হোটেল-মোটেলের বর্জ্য সরাসরি যাচ্ছে সাগর ও নদীতে। বাঁকখালী নদী ভরাট, দখল হওয়ার কারণে শহরের লবনাক্ত পানি বেড়ে গেছে।

এসব নানা দূষণের কারণে হ্রাস পাবে পর্যটক। স্থানীয়দের জন্যও বসবাস অনুপযোগী হবে কক্সবাজার। পরিবেশ সুরক্ষায় সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তবে দেরি করা যাবে না। দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top