
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : দিনে সুকানো মাটি রাত পেরিয়ে না আসতেই সকালে ঘরের মধ্যে এক বুক পানি, বাঁধ বা আশ্রয় কেন্দ্র জীবন যাপন। বছরের পর বছর বন্যার মুখ দেখে নদীর বুকে চরাঞ্চলে বাসিন্দারা। বন্যায় পরিবার গুলো নিয়মিত ভোগান্তিতে মানববেতর জীবন যাপন। রাত আসে দিন যায় পানিতে ভিজে যায় প্রতিটি সময়। মানুষের পাশাপাশি খাদ্য সংকটে পড়ে গৃহ পালিত পশু গুলো।
চরাঞ্চলের মানুষের চিরচায়িত বন্যায় দুংখ, দূর্দশা,দূর্ভোগ দুর করতেই আর্থিক সহযোগীতা প্রদানে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর মধ্যে ৭৫০ পরিবার বন্যা বীমার আওতায় এসেছে। বন্যা চলাকালীন সময় দুই উপজেলার চরাঞ্চলের এই পরিবার গুলো আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। গাইবান্ধার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন বাস্তবায়নাধীন রিকল-২০২১ প্রকল্প এই ৭৫০ পরিবারকে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের মাধ্যমে গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডে এই বন্যা বিমার সুযোগ করে দিয়েছেন।
অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের বন্যা বীমা প্রকল্প ও রিকল প্রকল্প সূত্রে বন্যা বীমা সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৮ সালে বন্যা বীমার চালু হয়। গাইবান্ধা জেলার নদী বেষ্টিত দুটি উপজেলার মধ্যে এই বীমা কার্যক্রম রয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের ১৩ টি গ্রামের ৫৫৫ টি পরিবার ও গজারিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রামের ১৭২ টি পরিবার এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের ২৩ টি পরিবার। দূর্যোগ ও জলবায়ুজনিত বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠির ঝুঁকি স্থানান্তরে বিকল্প কৌশল উন্নয়নে গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের সাথে ২০১৮ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পরিবারগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পরলে আর্থিক সহায়তা পাবে।
এজন্য দাতা সংস্থা অক্সফ্যাম জিবির অর্থায়নে বাৎসরিক এক হাজার ৩৫০ টাকা বিনিময়ে চরাঞ্চলের এই পরিবারগুলোকে এই বীমায় নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতে কারিগরী সহায়তায় দিচ্ছে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বন্যায় তিন মেয়াদে স্থায়ীত্ব হয় তাহলে ওই সময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আর্থিক সহায়তা পাবে। ১-৯, ৯-২১ ও ২১-২৬ দিন পর্যন্ত বন্যা চলমান থাকলে দুই হাজার আটশত টাকা, চার হাজার চারশত টাকা এবং আট হাজার করে পাবে প্রত্যেক বীমাকারী পরিবার।
রিকল-২০২১ প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর বাহারাম খান বলেন, বন্যার সময় মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকেরই কয়েক মাস সময় লাগে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক বেশি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বন্যার সময় যাতে ইনস্যুরেন্স কোম্পানী থেকে আর্থিক সহায়তা পায় এজন্য তাদেরকে বন্যা বীমার আওতায় আনা হয়েছে।
অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের বন্যা বীমা প্রকল্পের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার কে এন এম আজম বলেন, বন্যার পানি বিপদসীমার নির্ধারিত পরিমাণ উচ্চতা অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে বন্যা স্থায়ীত্ব থাকলে মেয়াদ ভিত্তিক বন্যা কবলিত পরিবারগুলো আর্থিক সহায়তা পাবে।
বন্যা বীমা অন্তভূক্ত গজারিয়ার গলনা গ্রামের জয়নব বেগম বলেন, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে যাওয়াসহ আমাদের কষ্টে ফলানো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিগত বন্যাগুলোতে। বন্যার সময় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় ওই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগতো। পরবর্তী মৌসুমের ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত খাদ্যাভাব ছিল। ওই সময়টুকু টাকা ঋণ হতো। বন্যা বীমা করেছি। এর ফলে বন্যার সময়কাল ঘরবাড়ী ও ফসলের ক্ষতি হলে বীমার টাকায় ওই সময়ের ধাক্কা অনায়াসেই মোকাবেলা করতে পারবো।
⇘সংবাদদাতা: গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।