
সেবা ডেস্ক: পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়ার কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নেওয়া ভাতা ফেরত চেয়েছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। টাকা ফেরত না দিলে মামলা করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে চাকরির শেষ সময়ে এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা আর সেই সনদ দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে মন্ত্রণালয় রাজি হয়নি। তাকে অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়ার চাকরির বয়স ৫৯ বছর হওয়ায় তাঁকে সরকারি অবসর আইন অনুযায়ী ৩ মে থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাঁর ৩০ এপ্রিল তাকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি গতকাল পর্যন্ত সিআইডি কার্যালয়ে অফিস করেছেন।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব (পুলিশ-১) ধনঞ্জয় কুমার দাস বলেন, ‘বুধবার তাঁর অবসরে যাওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এখন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিআইডি প্রধান শেখ হিমায়েত হোসেন ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ পান। সনদে তাঁর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কাশিয়ানি গ্রামে।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাঁর (হিমায়েত) ভাতা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা হিমায়েত হোসেনের কাছে টাকা ফেরত চাইব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। তাঁর সনদ আমরা প্রত্যায়ন করিনি।’
শেখ হিমায়েত হোসেনের জন্ম তারিখ ১৯৬০ সালের ৪ মে। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ১৯৮৪ সালের ১ জুলাইয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি যোগদান করেন। জন্ম তারিখ হিসাব করলে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁর বয়স দাড়ায় ১১ বছল ৬ মাস ২৬ দিন। এছাড়া শিক্ষা সনদ, পূরণকৃত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদনপত্র, সরকারি কর্ম কমিশনের গ্যাজেটে তাঁর নাম শেখ হিমায়েত হোসেন মিয়া। আর মুক্তিযোদ্ধা সনদে তাঁর নামের শেষে মিয়া উল্লেখ নেই।
মুক্তিযোদ্ধা সর্বশেষ পরিপত্র (২০১৮ সালে ১৭ জানুয়ারি জারি) অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বা তার আগে যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স নূন্যতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল তাঁরাই সরকারি সুযোগ সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ তাদেরকেই কেবল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তবে হিমায়েতের সে বয়স হয়নি তখনো।
আবার চাকরির আবেদনপত্রে হিমায়েত নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেননি। সরকারি কর্ম কমিশনের গেজেটেও তাঁর নাম নেই।
২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শেখ হিমায়েত হোসেনকে সিআইডির প্রধান করা হয়।
বুধবার সিআইডি প্রধান অবসরে গেছেন তাঁর জায়গায় কে আসছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পছন্দের তালিকায় তো অনেকেই আছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
হিমায়েতের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নেওয়া সম্মানি ফেরত চাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী) বলেছেন তাঁর হিসাব মতো। তবে বিদায়ী সিআইডি প্রধান তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।