ঢাকার যে জায়গাগুলো ভুতুড়ে হলেও রোমাঞ্চিত!!

S M Ashraful Azom
0
সেবা ডেস্ক: আমাদের গ্রুপের মধ্যে দুঃসাহসী আর যুক্তিবাদী হিসেবে বেশ পরিচিতি আছে রোকনের। ডরভয়ের যেন কোনো বালাই নেই লোকটার মধ্যে। মধ্যরাতে শ্মশানে গিয়ে শুয়ে থাকা থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ বলে দেয়া সাধুবাবাদের মুখোশ উন্মোচন- কী করেনি সে! ওকে তাই কোনো চ্যালেঞ্জ দেয়ার আগে দু’বার ভেবে নেয় ফাহাদ সহ বাকি বন্ধুরা।
ঢাকার যে জায়গাগুলো ভুতুড়ে হলেও রোমাঞ্চিত!!
ঢাকার যে জায়গাগুলো ভুতুড়ে হলেও রোমাঞ্চিত!!

এক সময় সবাই মিলে ঠিক করল ট্যুরে যাবে সিলেটের চা বাগানে। চা বাগানগুলোতে জুজুর গল্প অনেকেরই জানা। তাই আশরাফুল ও নূরুজ্জামানের মতো দুয়েকজন দুর্বল চিত্তের বন্ধুরা একটু গাঁইগুই করলেও রোকনের হাঁকডাকের সামনে টিকল না কেউ।


কিন্তু চা বাগানে গিয়ে সত্যি সত্যি এমন অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনার মুখোমুখি হতে হলো ওদের, যার কোনো ব্যাখ্যা অসীম সাহসী আর যুক্তিতে পাকা রোকনও দিতে পারল না। শুধু চা বাগানই নয়, বাংলাদেশের আনাচা-কানাচে ছড়িয়ে আছে আরও এমন কিছু ভুতুড়ে জায়গা যা ভূত গবেষকদের চমকে দেবে। আজ তবে দেখে আসা যাক কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার নির্ভরতার স্থান রাজধানী ঢাকার ভুতুড়ে কিছু জায়গার তালিকা।

ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়ক

ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়ক
ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়ক

ঢাকা এয়ারপোর্ট সড়কটিকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের গুজব প্রচলিত আছে। রাতের বেলা গাড়ি চালাতে চালাতে অনেকেই এখানে অস্বাভাবিক কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ কারণে বেশ কিছু সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটেছে। অনেকের কাছে বিষয়টি নিছক গুজব বলে মনে হলেও শত মুখের কথাকে নেহাত উড়িয়েও তো দেয়া যায় না। তাই এই এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় গান শোনা বা মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোনো কাজ না করার পরামর্শ দেয়া হয় চালকদের।


নিকুঞ্জ এবং বিমান অফিসের মধ্যকার রাস্তায় প্রায় সময় এক নারীর দেখা পাওয়া যায়। গত বছর ঐ এলাকায় অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া এক ব্যবসায়ী জানান, রাত প্রায় ২.৩০টার দিকে ঐ এলাকায় তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখানকার সাদা পোশাক পরিহিতা এক নারী প্রেতাত্মার আনাগোনার কথা তিনিও শুনেছিলেন। কিন্তু সে সময় ব্যবসার কাজে মগ্ন ছিলেন বিধায় আশেপাশের কোনো কিছুর কথা মনেই ছিল না তার। হঠাৎ করেই সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে রাস্তার মাঝখানে এক নারীর উপস্থিতি দেখে চমকে যান তিনি। ভারসাম্য হারিয়ে গাড়ি নিয়ে আছড়ে পড়েন রাস্তার পাশের ফুটপাথে। সৌভাগ্যবশত সে সময় রাস্তায় আর কোনো গাড়ি না থাকায় তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় সেই নারী কেন, জনমানুষের কোনো চিহ্নই খুঁজে পাননি তিনি। এই এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।

লালবাগ কেল্লা


লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা
ঢাকা শহরের অন্যতম বিখ্যাত স্থান লালবাগ কেল্লা। শুধু ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিক থেকেই নয়, ভুতুড়ে জায়গা হিসেবেও বেশ খ্যাতি আছে কেল্লাটির। দুর্গের তিনটি প্রধান অংশের একটি হলো শায়েস্তা খাঁর কন্যা পরী বিবির মাজার। কিংবদন্তী অনুযায়ী, পূর্ণিমার রাতে লালবাগ কেল্লায় পরী বিবিকে দেখা যায়। নাচতে থাকা, গাইতে থাকা পরী বিবি কখনো কারো ক্ষতি করেছেন বলে শোনা যায়নি।


 লালবাগের আরেক বিখ্যাত ভূত হলো ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানো এক সৈনিক। নাম না জানা সেই সৈনিক প্রায় রাতেই কেল্লার দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে নামাজের কক্ষের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে কিছুক্ষণ পর আবার বেরিয়ে যান। কথিত আছে, শায়েস্তা খাঁর আমলে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য সৈনিকরা সবাই কেল্লায় একত্রিত হতেন। সেই হিসেব মোতাবেক ভোর ৫টার দিকে এই লোকটিকে দেখতে পাওয়ার পেছনেও হয়তোবা কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো সম্ভব। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, লোকটিকে দেখা যায় রাত ৩টার দিকে। নামাজের কক্ষ আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও চোর বা অন্য কোনো মানুষের উপস্থিতির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কাজেই কে এই লোক, কেনই বা সে আসে, পুরো ব্যাপারটা এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।

আর লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ নিয়ে তো গুজবের কোনো কমতি নেই। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই সুড়ঙ্গটি মিলিত হয়েছে আগ্রার কোনো এক দুর্গের সাথে। আজ অবধি এই সুড়ঙ্গে প্রবেশ করে কেউ ফিরে আসেনি। আগ্রার সেই দুর্গের সুড়ঙ্গমুখ ব্রিটিশ আমলেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের এক অনুসন্ধানী দল রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলে নিজ উদ্যোগে লালবাগের সাথে যোগাযোগের পথ সিলগালা করে বন্ধ করে দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। তাদের কয়েকটি হাতিও নাকি হারিয়ে গিয়েছিল টানেলের অন্ধকারে। ঐ অনুসন্ধানকারী দলের খোঁজে কুকুর পাঠায় নিরাপত্তা কর্মীরা। কুকুরের চেইন ফিরে আসলেও ফিরে আসেনি সেই দলের কোনো সদস্য কিংবা খোদ কুকুরটি!

ঢাকা গলফ হাইটস, বনানী

ঢাকা গলফ হাইটস, বনানী
ঢাকা গলফ হাইটস, বনানী
বনানী কবস্থানে পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা গলফ হাইটস। প্রায় প্রতিরাতেই ১২টার পর থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ পান স্থানীয়রা। শব্দটি কবরের দিক থেকে আসে বলেই তাদের ধারণা। তাছাড়া অস্বাভাবিক কটু গন্ধও পান অনেকে, কেউ কেউ পান কর্পূরের গন্ধ। রাতের বেলা বনানী কবরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকেই অদৃশ্য কেউ তাকে অনুসরণ করছে এমন বোধ করেন। কবর নিয়ে আমাদের মাঝে যে ভয় কাজ করে, তা থেকেই হয়তোবা এমন অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

পুরনো ডিওএইচএসের নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট, বনানী

পুরনো ডিওএইচএসের নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট, বনানী
পুরনো ডিওএইচএসের নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট, বনানী


ঢাকা প্যারানরমাল সোসাইটি নামক একদল অতিপ্রাকৃত বিষয়ক অনুসন্ধানী অদ্ভুত কিছু জিনিসের অস্তিত্ব খুঁজে পান রাজধানীর বনানীর পুরনো ডিওএইচএসের নির্মাণাধীন এক অ্যাপার্টমেন্টে। শয়তানের পূজা করার জন্য যে সমস্ত উপকরণ প্রয়োজন হয় বলে কথিত আছে, তার সবকিছুর নমুনা পাওয়া যায় সেখানে। অপরিচিত ভাষায় কিছু লেখা, দেয়ালে আঁকা হেক্সাগন- শয়তান পূজারীদের উপস্থিতি জানান দেয়। অনুসন্ধান চালানোর সময় দলের এক সদস্য অদৃশ্য কিছুর আক্রমণের শিকার হন, তার হাতে আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরনো ডিওএইচএসের ৪ এবং ৫ নম্বর লেন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে কবরস্থানের উপরে।

মায়ের দোয়া ভিলা, উত্তরা

The places of Dhaka are spooky but thrilled
মায়ের দোয়া ভিলা, উত্তরা


১৯৮০ সাল থেকে ঢাকা শহরের অন্যতম কুখ্যাত ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে উত্তরার মায়ের দোয়া ভিলাটি। এই বাড়িতে কেউ বেশিদিন থাকতে পারেনি। বাড়ির বাসিন্দা থেকে কর্মচারীরা সবাই অস্বাভাবিক আর অদ্ভুতুড়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। ওখানে থাকাকালীন সময়ে দুর্ভাগ্য, রহস্যজনক মৃত্যু যেন তাদের পিছু ছাড়েনি। কথিত আছে, খারাপ আত্মা দূর করার জন্য এক্সোরসিজমের ব্যবস্থা করা হলে এক এক্সোরসিস্ট মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top