
সেবা ডেস্ক: কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাছ আলীর মেয়ে তানিয়া বেগম। গত ১৭ মে আচমকা তানিয়ার পেটে ব্যাথা শুরু হলে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতালের ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীর আলম রোগীল অভিবাবকদের জানান, তানিয়ার পিত্তথলিতে পাথর রয়েছে এবং তার গর্ভে ৪ মাসের সন্তানও আছে। পরে রোগী ও তার স্বজনদের সম্মতিতে এ হাসপাতালেই শুরু হয় তানিয়ার চিকিৎসা। দুইদিন ক্লিনিকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তানিয়াকে।
পরবর্তীতে ২০মে তানিয়ার ফের পেটে ব্যাথা শুরু হলে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীর আলম এবার জানান, তানিয়ার কিডনি ফুলে গেছে।
এতে সন্দেহ জাগে তানিয়ার অভিভাবকদের মনে। পরে ২১মে তানিয়াকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, তানিয়ার পিত্তথলিতে কোনো পাথর নেই, এমন কি তার কিডনিও ফুলে যায়নি! মূলত তানিয়ার অ্যাপেন্ডিসাইট ফেটে গেছে। তার ওপর ভুল চিকিৎসার কারণে তানিয়ার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেছে!
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তানিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে অপারেশনের পর বর্তমানে রাজধানীর এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ তানিয়া।
এ ঘটনায় হয়রানি ও ভুল চিকিৎসার প্রতীকার চেয়ে তানিয়ার বাবা আক্কাছ আলী জেলা প্রসাশক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
একই সাথে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসা বন্ধে এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গত রবিবার মেডিল্যাবের মালিক ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীরকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৩ জনের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালত ২ এ মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মেডিল্যাবের অপর মালিক ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী তামান্না ফেরদৌসী ও ডা. হাফিজা খাতুন। গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে ভৈরব থানার ওসিকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দেন আদালত।
অভিযোগ রয়েছে, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীল আলম সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার হয়েও দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিক পরিচালনা করে সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন।
সরকারি চাকরির সুবাদে প্রায় ৬ বছর আগে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীর। কর্মক্ষেত্রে দু’বছর পাড় না হতেই তিনি শহরের কমলপুর এলাকায় মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টার নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক খুলে বসেন।
অভিযোগ রয়েছে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরির সুবাদে সুকৌশলে রোগীদের তার ক্লিনিকে এনে টেস্টের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীর একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। একাধিক চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় দালালদের মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন বা লিফলেট বিতরণ করেন। ফলে গ্রামের সহজ-সরল মানুষষজন তার ফাঁদে পড়ে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হন। গেল এক বছরে ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে প্রতারণা ও একাধিক ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় তিনি কাউকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আবার কাউকে ভয় দেখিয়ে নিজের কুকীর্তি ধামাচাপা দিয়েছেন। এ ছাড়াও নানা অনিয়মের কারণে একবার মেডিল্যাব ক্লিনিক মালিক ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিবার্হী ম্যজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার।
এদিকে স্থানীয়রা জানায়, ক্লিনিকের সামনে বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো দিন কিংবা সপ্তাহে একদিনও রোগী দেখতে আসেন না। শুধু তাই নয়, ভর্তি রোগীদের সেবা দিতে কোনো একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার কিংবা অভিজ্ঞ নার্সও নেই ডাক্তার জাহাঙ্গীরের প্রাইভেট হাসপাতালে।
সম্প্রতি এসব বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তাকে না পেয়ে তার ব্যক্তি মালিকানায় গড়া প্রাইভেট ক্লিনিক মেডিল্যাবে গেলে ডাক্তার কে এন এম জাহাঙ্গীর বলেন, আমাদের চিকিৎসায় কোনো ভুল ছিল না। আমাদের মতো করেই তানিয়ার চিকিৎসা করেছি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।