গত মে-জুনের বজ্রপাতে ১২৬ জনের মৃত্যু

S M Ashraful Azom
0
গত মে-জুনের বজ্রপাতে ১২৬ জনের মৃত্যু
সেবা ডেস্ক: চলতি বছরের মে ও জুন মাসে বজ্রপাতে সারাদেশে ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ দুই মাসে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন ৫৩ জন। নিহতদের মধ্যে ২১ জন নারী, সাতজন শিশু এবং ৯৮ জনই পুরুষ।

এর মধ্যে মে মাসে নিহত হয়েছে ৬০ জন এবং জুন মাসে ৬৬ জন। মে মাসে নারী নয়জন, শিশু তিনজন এবং ৪৮ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে মে মাসে আহত হয়েছেন ২৮ জন। জুন মাসে মোট নিহত হয়েছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে নারী ১২ জন, শিশু চারজন এবং ৫০ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া জুন মাসে বজ্রাঘাতে মোট ২৫ জন আহত হয়েছেন।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামের একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সংস্থাটি ১০টি জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, কয়েকটি অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। 

সংস্থাটির জরিপ মতে, সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় গত দুই মাসে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ১৬ জন। এছাড়া, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল জেলায় বজ্রপাতে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

ধান কাটার সময় বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর পর বেশি নিহত হয়েছে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় মাছ ধরতে গিয়ে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে মাঠে গরু আনতে গিয়ে এবং টিন ও খড়ের ঘরে অবস্থান ও ঘুমোনোর সময় বজ্রাঘাতে বেশি মানুষ মারা গেছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় অজ্ঞতাবসত লম্বা গাছের নিচে আশ্রয় নেয়ার সময় গাছে বজ্রপাত হওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

গত দুই মাসে বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে কিশোরগঞ্জে ১৬ জন, হবিগঞ্জে তিনজন, রাজশাহীতে ১০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়জন, পাবনায় ছয়জন, দিনাজপুরে সাতজন, নীলফামারীতে চারজন, জামালপুরে চারজন, শেরপুরে চারজন, নওগাঁয় ছয়জন, সিরাজগঞ্জে পাঁচজন, নারায়ণগঞ্জে পাঁচজন, মৌলভীবাজারে তিনজন, খুলনায় চারজন, সাতক্ষীরায় ১১ জন ও টাঙ্গাইলে চারজনসহ বিভিন্ন জেলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

বজ্রপাত বাড়ার কারণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাতও তত বাড়বে। তাপমাত্রা গড়ে এক ডিগ্রি বেড়ে গেলে বজ্রপাত ১০ শতাংশ বার তার চেয়ে বেশি বজ্রপাত বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইদানীং মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে বা ঘন কালো মেঘের ওপরের ও নিচের অংশ দুটি পুল হিসেবে প্রবাহিত হয়। এই কারণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে বজ্রপাতের পরিমাণ।

বিদ্যুতপ্রবাহ মানুষের শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয় অনেকটা ইলেকট্রিক শকের মতো। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে মানুষ যেভাবে দ্রুত শকড হয়, ঠিক একইভাবে বজ্রপাতেও মানুষ শকড হয়ে মারা যায়। কারণ মানুষের শরীর বিদ্যুৎ পরিবাহী। এ কারণে মানুষের ওপর বজ্রপাত হয়। যদি কোনো খোলা স্থানে বজ্রপাত হওয়ার মতো কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ না থাকে আর সেখানে যদি মানুষ থাকে যার উচ্চতা অন্য বিদ্যুৎ পরিবাহীর চেয়ে বেশি তাহলে মানুষের ওপর বজ্রপাত হয়। সরাসরি মাটিতে সাধারণত বজ্রপাত হয় না। বজ্র বিদ্যুৎ পরিবাহীর ওপর পড়ে। এরপর ওই পরিবাহীর মাধ্যমে বজ্রের বিদ্যুৎ মাটির সঙ্গে মিশে যায়। উঁচু গাছ, ভবন, পাহাড়ের শীর্ষে সাধারণত বজ্রপাত হয়। বাসাবাড়িতে লাগানো বজ্রপাত নিরোধক দণ্ডের ওপরও বজ্রপাত হয়।

বজ্রপাতের সময় করণীয়

বিশেষ করে যারা ঘরের বাইরে ক্ষেতখামারে কাজ করে তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। যে স্থান বা বস্তু যত উঁচু সে স্থান মেঘের তত সন্নিকটে থাকায় সেখানে বজ্রপাতের সম্ভাবনা তত বেশি। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। মৌসুমে ঘনকালো(ঝড়মেঘ) মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যেকোনো ধাতববস্তুর যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং, পানির কল ইত্যাদির স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যুৎ পরিবাহী যেকোনো বস্তুর স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়।

বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা ভালো। এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় থাকলে যদি বজ্রপাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয় তাহলে কানে আঙ্গুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে বসে থাকতে হবে। তবে মাটিতে শোয়া যাবে না, কেননা মটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ির মধ্যে থাকায় নিরাপদ। তবে মনে রাখতে হবে গাড়ির ধাতব কোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।

বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হলে তাল গাছ জাতীয় সুউচ্চ প্রজাতির গাছ প্রচুর পরিমাণে মাঠের মধ্যে লাগাতে হবে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তিদের মতো। শরীর থেকে দ্রুত বৈদ্যুতিক চার্জ অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শরীরে ম্যাসেজ করতে হবে। আহত ব্যক্তির অস্বাভাবিক আচরণে বিচলিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top