সেবা ডেস্ক: পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের রুক্ষ জমিতে আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি মহাকাশযানটা ভেঙেচুরে যাওয়ার সময়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছিল নিশ্চয়ই। সেই ধাক্কাটা সামলাতে পারলে ধরে নেওয়া যায়, চাঁদের মাটিতে বেঁচেই আছে পৃথিবী থেকে পাঠানো আট পায়ের পানি ভালুকেরা।
বিজ্ঞানীরা আশ্বাস দিচ্ছেন, চাঁদের আবহাওয়া খুব বেশি অসহ্য না-হয়ে উঠলে তারা বেঁচেই থাকবে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, পানি ভালুকদের জীবন ভীষণ শক্ত। তাপমাত্রা বা চাপের চরম হেরফেরও তাদের কাছে নস্যি।
কোনও কিছু না-খেয়ে টানা কয়েক দশক বেঁচে থাকতে পারে তারা! হিমাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্কের তাপমাত্রাতেও দিব্বি ঘুরে বেড়ায় পানিতে! এমনকী, তেজস্ক্রিয় বিকিরণও তাদের কোনও ক্ষতি করতে পারে না! আশ্চর্য সেই আণুবীক্ষণিক প্রাণীকে ঘিরেই এবার চাঁদের বুকে প্রাণের স্পন্দনের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
পোশাকি নাম টারডিগ্রেড। কিন্তু ০.৫ মিলিমিটার থেকে ১ মিলিমিটার দৈর্ঘের এই ক্ষুদ্র প্রাণীটিকে আকৃতিগত সামঞ্জস্যের কারণে পানি ভালুক বলেও ডাকা হয় হামেশাই।
চরম প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম এই প্রাণীগুলির সন্ধান পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিসীমার বাইরে রয়েছে বলে আগে দাবি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার চাঁদের মাটিতে সর্বংসহা টারডিগ্রেড দলের উপস্থিতির দাবি করল মার্কিন সংস্থা আর্ক মিশন ফাউন্ডেশন।
সংস্থার চেয়ারম্যান নোভা স্পিভাক জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে চাঁদের মাটিতে ফোর্স ল্যান্ডিং’য়ে বাধ্য হওয়া ইজরায়েলি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রোবোটিক লুনার ল্যান্ডার পরীক্ষা করে টারডিগ্রেডদের উপস্থিতি জানা গিয়েছে।
তার কথায়, এই অতি ক্ষুদ্র, বহুকোষী প্রাণীটি সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি অভিযোজন ক্ষমতার অধিকারী। প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতার মাপকাঠিতে এরা প্রায় অমর।
টারডিগ্রেড বিশারদ উইলিয়াম মিলার বলেছেন, ‘জার্মান বিজ্ঞানী জোহান অগস্ট ১৭৭৩ সালে আট পা’ওয়ালা এই প্রাণীটিকে আবিষ্কার করেছিলেন। এদের বিপুল সহ্যক্ষমতা অভিভূত করেছিল তাকে। শরীরে পানির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ।
এদের শক্তি বা খাদ্যের প্রয়োজন খুবই কম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এরা লম্বা হাইবারনেশনে যেতে পারে। পরিস্থিতি অনুকুল হলে আবার নিজের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া শুরু করে এবং খাবারের সন্ধানে বেরোয়।
উদ্ভিদ কোষের ফ্লুইড, ব্যাকটেরিয়া এবং আণুবীক্ষণিক প্রাণীরাই মূলত এর খাদ্য। টারডিগ্রেডদের দেহত্বক ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে! মাইনাস ২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও এরা জীবিত থাকে! এমনকী, পৃথিবীর গভীরতম স্থান প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পানির বিপুল চাপও এরা সহজেই সহ্য করতে পারে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণাসংস্থা নাসা’র বিজ্ঞানী ক্যাসি কনলের মতে তাপমাত্রা না-বাড়লে দীর্ঘ সময় হাইবারনেশনে থাকে এই প্রাণীরা।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে নাসার মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের যে অংশে নামবে, তা ওই ইজরায়েলি রোবট ল্যান্ডার থেকে অনেকটাই দূর। তাই টারডিগ্রেডরা যদি থেকেও থাকে, তাদের সক্রিয় হয়ে বংশবিস্তারের সম্ভাবনা নেই।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।