উত্তাল পাকিস্তান, গৃহযুদ্ধের দিকে কাশ্মীর, উদ্বিগ্ন বিশ্ব

S M Ashraful Azom
0
Pakistan upset, Kashmir towards civil war, worried world
সেবা ডেস্ক: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একদা ‘কাশ্মীরকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ বলে অভিহিত করেছিলেন, যা এর এক স্পষ্ট পরিচয়। সোমবার (৫ আগস্ট) ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে রক্তে রঞ্জিত ভূ-স্বর্গকে এক সুদূরপ্রসারী এবং বিপজ্জনক বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে সতর্ক করলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তিনি কোনোকিছু ভুল বলেননি, ভারতের বুকার বিজয়ী লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় বলেছিলেন, ‘কাশ্মীরে সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে জাগি তখন “শুভ সকাল” বলি, যার আসল অর্থ হচ্ছে “শুভ শোক”।’

হিমালয়ে ঘেরা কাশ্মীর ঠিক এমন এক স্থান, যেখানে অফুরন্ত প্রশান্তির সঙ্গে যুদ্ধের তীব্র দামামা একইভাবে বাস্তব। একদিক থেকে কাশ্মীর যেমন বিশ্বের সবচেয়ে নয়নাভিরাম স্থান, অন্যদিকে এর উত্তাপ দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে বানিয়ে রেখেছে চিরবৈরি দুই দেশ। সেই কাশ্মীরে বিজেপির এমন পদক্ষেপ কী বয়ে আনবে, তার গভীরতা চিন্তার সাহস হয়ে উঠছে না বিশেষজ্ঞদেরও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ বিশ্লেষণেও এই বিপদের মাত্রা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই যে এলাকাটি বিশ্বের বিপজ্জনক এক স্থান হিসেবে পরিচিত, সেখানকার মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে এতবড় পদক্ষেপ এক গৃহযুদ্ধ বয়ে আনলে তা অত্যাশ্চর্যের কিছু হবে না।

১৯৪৭ সালের পর থেকে কাশ্মীরের ভারতের নিয়ন্ত্রিত অংশের বাসিন্দাদের যে অধিকার দিয়ে আসছিল ভারত সরকার, মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সেই অধিকার কেড়ে নিয়ে কাশ্মীরিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত ও সংবিধানের বিশেষ সুবিধা প্রদানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর একে গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কালো দিবস হিসেবে উল্লেখ করেছেন কাশ্মীরের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।

কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নিয়ে কেন্দ্র শাসিত এক অঞ্চলে রূপান্তরের কী পরিণতি হতে পারে, যে কাশ্মীরিরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে গত ৭ দশক ধরে রক্তাক্ত করছে নিজের অঙ্গ, সেখানে যদি স্বায়ত্তশাসনটুকুও কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে…। বাকিটা চিন্তা করার জন্য কোনো রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বা বিশ্লেষক হবার প্রয়োজন পড়ে না।

ভারতের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই কাশ্মীর ৩ খণ্ডে বিভক্ত ছিল। ভারত,পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ভাগ করে কাশ্মীরকে আগে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনামলেই। বিবিসির মতে, সর্বশেষ ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকায় ৯৫ শতাংশ মুসলিম, ৪ শতাংশ হিন্দু। জম্মুর ৩০ শতাংশ মুসলিম এবং হিন্দু ৬৬ শতাংশ। সদ্য বিভক্ত লাদাখের ৪৬ শতাংশ মুসলিম এবং ৫০ শতাংশ বৌদ্ধ। অন্যদিকে পাকিস্তান অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের শতভাগই মুসলিম এবং গিলগিত বালতিস্তানের ৯৯ শতাংশ মুসলিম।

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ৭ দশক পর সেই খণ্ডিত কাশ্মীরকে দু-খণ্ডে বিভক্ত করে, সংবিধানেরর ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫এ ধারা রদের মাধ্যমে এক ভয়াবহতার শুরু করলেন বিজেপি সরকার। পাক প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই এই এক তরফা সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার ও প্রতিরোধে যাবতীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা করেছেন।

কাশ্মীরের ক্ষুদ্রতম অংশের মালিক চীন এর এক প্রভাবশালী গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ভারতের শীর্ষ এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, এমন একটি আদেশ আসার আগেই ভারত যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গত সপ্তাহে ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের সঙ্গে আরও ৭০ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

ভারত সরকার নিজেও আন্দাজ করতে পেরেছে, এমন এক সিদ্ধান্ত কী পরিণতি বয়ে আনবে উত্তাল ঐ উপত্যকায়। সেখানকার সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে আটক, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এমন অস্বাভাবিক সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগেও কাশ্মীরকে ঘিরে পাক-ভারত দুবার যুদ্ধে জড়ায়, চলতি বছরের ফেবুয়ারিতে আরেকটি যুদ্ধের খুব কাছাকাছি চলে যায় দেশ দুটি। এবার এমন ভয়াবহ পদক্ষেপ চিন্তার বাহিরের কিছু ঘটাতে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট একটি ধারণা মাত্র।

২০১৬ সালে কাশ্মীরের এক বিখ্যাত বিদ্রোহী নেতাকে হত্যার পরে যা ঘটেছিল, তার উল্লেখ করা যাক। নেতার হত্যায় প্রায় মাসখানেক অবরুদ্ধ ছিল কাশ্মীর, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তাতে কেড়ে নিয়েছিল প্রায় শখানেক মানুষের জীবন। তখনও সেখানের রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি রেখে নিরাপত্তা বাহিনী এক দমন পীড়ন পরিচালনা করেছিল। এবার তো তাদের আটকে রেখে স্বায়ত্তশাসনই কেড়ে নিল।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানি পৃষ্ঠোপোষক জঙ্গিরা কাশ্মীরের শ্রীনগর অবরুদ্ধ করলে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির হিন্দু রাজা ভারতের সঙ্গে একীভূতকরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। জম্মু-কাশ্মীরের নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র বিষয়ক ও যোগাযোগের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ দিল্লীর ওপরে ন্যস্ত রেখে বাকি ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বলবৎ করেছিল। তারপর থেকেই ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় বিশেষ সুবিধায় মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অধিভুক্ত।

ধর্ম নিরপেক্ষতার বুলি আওড়ানো ভারতে মুসলিমদের ওপর বর্বতার চিত্র অনেকটা স্পষ্ট মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপির শাসনামলে। যেখানে ১০০ কোটি হিন্দুর বাস, সেখানে একটা মুসলিম রাজ্য স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে, আবার অন্য ভারতীয়রা সেই ভূ-স্বর্গে বসবাসের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত, বিজেপির কাছে ঠিক এই বিষয়টি সহনীয় ছিল না।

মোদীর রাজনৈতিক চিন্তায় অনেক আগে থেকেই কাশ্মীরের এই বিশেষ সুবিধাকে গ্রহণযোগ্য বলে বোধ হয়নি, শুরু থেকেই মোদী এর বিরোধিতা করেছিল। তার এমন মনোভাবের মূল উৎস যে হিন্দুত্ববাদ, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠবে যখন বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবসেনার কাশ্মীরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে। সোমবার রাজ্য সভায় রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরকৃত ঘোষণাপত্রটি যখন অমিত শাহ পাঠ করছিলেন, বিরোধীদল ও এনডিএ জোটের কয়েকটি শরীক ও এর স্পষ্ট বিরোধিতা করে, অন্যদিকে

মার্কিন ভক্স মিডিয়ার মতে, মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের হার বেড়ে যায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনুসারে মে ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ এর মধ্যে কমপক্ষে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৬ জন মুসলমান। এই সহিংসতার উত্থানকে মোকাবিলা করতে মোদীর প্রকাশ্য অনীহা সত্ত্বেও, তার দলকেই ফের ভারতের ক্ষমতায় আনে ভারতীয়রা। পাঁচ বছরের মেয়াদে তাকে তার এজেন্ডা অনুসরণ করার বৃহত্তর সুযোগ দেয় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত।

কাশ্মীরে এই সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি স্পষ্টতই সেই এজেন্ডার একটি অংশ। বিজেপির অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য ছিল জম্মু-কাশ্মীরের এর স্থিতি পরিবর্তন করা, তবে এটি সর্বদা একটি অত্যন্ত বিতর্কিত পদক্ষেপ ছিল যা স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর সংঘাতের সৃষ্টি করবে। তবে, এখন মোদীর দৃঢ় সমর্থন রয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করেই ফেললেন।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভারত বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘অ-হিন্দু এবং বিশেষত মুসলিম সংখ্যালঘুরা এখন থেকে হারাতে পারে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হিন্দু জাতীয়তাবাদের একটি বড় আত্মপ্রকাশ, কারণ এটি ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়াসকে প্রতিনিধিত্ব করে। যাতে দেশের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠরা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেখানে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে এবং সেখানকার জনমিতিক চেহারা পাল্টে দিতে পারে।’

গত বছর ভক্সের কাছে টম হান্ডলে লিখেছিলেন, ‘১৯৪৭ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তান চারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, যখন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান ব্রিটেনের একক উপনিবেশ ছিল। তখন থেকেই তারা অবিচ্ছিন্ন শত্রু অবস্থায় রয়েছে এবং গত দুই দশক ধরে তারা স্থলভাগে ভয়াবহ পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াইয়ে আবদ্ধ রয়েছে।’

পরিস্থিতি যদিও এখন কিছুটা শান্ত থাকলেও পারমাণবিক শক্তিধর দেশদুটির মধ্যে উত্তেজনা সবসময়ই চরমে থাকে। সেখানে এমন এক পদক্ষেপ যদি দুদেশকে ফের যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায় এবং পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ ঘটায়।, তাহলে তার পরিণতি চিন্তার সুযোগ থাকবে না।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনুবাদ অনুসারে, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ রাজনৈতিক দলের সভাপতি শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘আমরা কাশ্মীরিদের মানবাধিকার এবং আইনানুগ অধিকার রক্ষার জন্য সর্বাত্মক পর্যায়ে যাব। কাশ্মীর পাকিস্তানের যুগল শিরা, এবং যেই আমাদের যুগল শিরা এবং সম্মানের ওপর হাত রাখবে সে এক ভয়াবহ পরিণতি ঘটাবে।’

কাশ্মীরের ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের স্থানটি উভয় পক্ষের স্থানীয়দের কাছে- নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল) হিসেবে পরিচিত। ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টারের পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ সমীর লালওয়ানি বলেছিলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের ওপর বাস্তব বা প্রতীকী দখলগুলো প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া ও সহিংস বিক্ষোভের জন্ম দিবে। যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০০৮, ২০১০ এবং ২০১৬ সালে কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে এবং ২০১২ সাল থেকে এই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, সন্ত্রাসবাদে নিয়োগ এবং এমনকি সন্ত্রাসীদের প্রতি জনসাধারণের সহানুভূতিও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ওয়াশিংটনের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের একজন ভারত বিশেষজ্ঞ অ্যালিসা আয়রেস বলেছেন, ‘সংঘাতের জন্য পাকিস্তান থেকে ভারতে সন্ত্রাসীরা এসে থাকে, যেখানে ইতোমধ্যে কিছু কর্মী পাকিস্তানস্থ ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে দিয়েছে।’

ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তুর্কি ও মালয় নেতাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মাধ্যমে হিমালয় অঞ্চলটির শান্তি ও সুরক্ষায় মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে এনেছে ভারত। ইমরান খান সোমবার ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাখ্যানের পরিণতি সম্পর্কে দুই নেতার কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইমরান খানকে পাকিস্তানের অবিচল সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে এরদোয়ান এক সরকারি বিবৃতি দিয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত, বিবৃতিতে মাহাথিরের কাছে খান এমন দাবি করেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের আওতায় ভারত এককভাবে কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করতে পারে না, যেখানে উভয় দেশরই দাবি আছে। পাকিস্তান ও কাশ্মীরের জনগণ ভারতীয় পদক্ষেপকে গ্রহণ করবে না এবং পাকিস্তান এটি আটকাতে ‘সম্ভাব্য সব বিকল্প ব্যবহার করবে’।

হজ পালনের জন্য মক্কায় অবস্থানরত পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশী সোমবার সৌদি আরব থেকেই পাকিস্তানের একটি টিভি স্টেশনকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির (ভারত) আদেশের মাধ্যমে কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলে ভারতের পদক্ষেপের কার্যকারিতা রোধে সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করবে পাকিস্তান।

নিউ ইয়র্ক টাইমস মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানায়, ভাগ্য নির্ধারণের জন্য কাশ্মীরিদের একটি গণভোট করার সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘ, কিন্তু তা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তী বছরগুলোতে, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কাশ্মীরে এক জঙ্গি হামলার শুরু হয়েছে। যেখানে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীও যোগ দেয়।

এমন অস্থিরতার মধ্যে ভারতের সর্বশেষ পদক্ষেপ কাশ্মীরের প্রতিরোধের তাৎক্ষণিক মনস্তত্বকে উস্কে দিয়েছে। কাশ্মীরিদের জমি অন্যন্য ভারতীয়দের ক্রয় থেকে বিরত রাখা সাংবিধানিক নীতিমালা ছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদ। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতী বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিচয় নিয়ে আপোষ করা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’

লড়াইটির প্রভাব বিশ্বব্যাপী যে ছড়াবে তাতে সন্দেহ নেই বলে জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকা তার দীর্ঘকালের মিত্র পাকিস্তানের ওপর সহায়তার অনুদান সরিয়ে ভারতে নিয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এশীয় রাজনৈতিক সমীকরণে ভারত-পাকিস্তান যতটা গুরুত্বপূর্ণ তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ কারও নেই। বর্তমান বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন-চীনের মধ্যে সমর্থনের গতি-প্রকৃতিও পাল্টে গিয়েছে। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ক্রমে অবনতি ঘটলেও পাকিস্তানের দিকে চীন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আর্থিক-সামরিক সহায়তার মাধ্যমে চীনের মিত্র হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। যার অর্থ হলো, পাক-ভারতের যেকোনো ভুল পদক্ষেপ বিশ্বে এক মারাত্মক প্রভাব রাখবে।

মোদীর সর্বশেষ নির্বাচনের ইশতেহারে একটি মূল প্রতিশ্রুতির অংশ এই পদক্ষেপ, যা কাশ্মীরকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে জানায় বিখ্যাত গণমাধ্যম ফরেইন পলিসি। এই পদক্ষেপ ভারতের সাথে পাকিস্তানের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, দীর্ঘকাল ধরে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে তার বিরোধকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা করে আসছে পাকিস্তান। এমতাবস্থায়, দুই দেশের মধ্যে একটা যুদ্ধ সৃষ্টি না করলেও মোদীর এই পদক্ষেপ যে কাশ্মীরকে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে তা স্পষ্ট।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top