ঢাকায় আ‌রও যত আখড়া

S M Ashraful Azom
0
ঢাকায় আ‌রও যত আখড়া
সেবা ডেস্ক: শুধু ক্লাবভিত্তিক নয়, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউস ও বাসাবাড়িতেও গড়ে তোলা হয়েছে জুয়ার ক্লাব। গোয়েন্দাদের কাছে রাজধানীতে দেড় শতাধিক ক্যাসিনো ও জুয়ার ক্লাবের তথ্য রয়েছে। এসব ক্লাবে কোটি কোটি টাকা ওড়ে প্রতিদিন। ডিজে পার্টির নামেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাতভর চলে জুয়া ও মাদকের আড্ডা। একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের 'ম্যানেজ' করেই এতদিন চলে এসেছে অবৈধ ক্যাসিনো, জুয়া এবং মাদকের আসর। তবে জুয়াবিরোধী চলমান অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই এসব ক্লাব তালাবদ্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছে। ক্লাব নিয়ন্ত্রণকারীরা যেন আর কখনও অবৈধ ক্যাসিনো এবং জুয়ার বোর্ড চালু করতে না পারে, সে ব্যাপারে থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

ডিএমপি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, 'ঢাকা মহানগরে ক্যাসিনো ও জুয়া কোনোভাবেই চলতে দেওয়া হবে না। অভিযান চলমান আছে। কঠোরভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ক্যাসিনো বা জুয়ার আসরের সঙ্গে জড়িতরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স রয়েছে। যেসব ক্যাসিনো বা জুয়া বন্ধ হয়েছে, সেগুলো আর কখনও কেউ যেন খোলার সাহস না করে, ওসিদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ক্যাসিনো বা জুয়া চালু হলে সংশ্নিষ্ট থানার ওসির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' ডিজে পার্টি এবং সিসা বার বিষয়ে কমিশনার বলেন, ডিজে পার্টিতে বিনোদনের নামে অবৈধ কোনো কার্যক্রম চললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসা বারের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানিয়েছে, আয়োজকরা ক্যাসিনো বা জুয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, অবৈধভাবে মাদক ব্যবসাও করতেন। এ ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এতদিন। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, 'ক্যাসিনোর ফাঁকে মাদক সেবন চলত। তবে মাঠ পর্যায়ে ডিএনসির যারা কাজ করেন, তাদের এটা জানা দরকার ছিল। এতে কারও গাফিলতি আছে কি-না তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, স্পোর্টিং ক্লাব এবং এলাকা বা সোসাইটির নামে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্লাব ছাড়াও গেস্ট হাউস ও বাসাবাড়িতে জুয়ার ক্লাব রয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকা মহানগরে দেড় শতাধিক ক্যাসিনো-জুয়ার ক্লাবের তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে ১০-১২টিতে ক্যাসিনো চালানো হয়। বাকিগুলোতে চলে বড় ধরনের জুয়ার আসর। দিন-রাত কোটি কোটি টাকার খেলা হয় এসব জুয়ার বোর্ডে। জুয়ায় টাকা হেরে পথে বসছেন অনেকেই। ব্যবসা-বাণিজ্য  লাটে উঠেছে কারও কারও। জুয়া খেলতে গিয়ে অনেক সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। ভুক্তভোগী পরিবার পড়ছে বিপাকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, উত্তরার একটি ১৪ তলা ভবনে বসতো বড় ধরনের জুয়ার বোর্ড। ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী সেখানে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়ে পথে বসার অবস্থা। তার স্ত্রী নানাভাবে চেষ্টা করেছেন স্বামীকে জুয়ার বোর্ড থেকে ফেরাতে, কিন্তু পারেননি। এতে পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। জুয়ার ক্লাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়নি এতদিন। তবে জুয়ার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে ওই ক্লাব বন্ধ করে ক্লাব পরিচালনাকারীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে  জানান ওই কর্মকর্তা।

বছরের পর বছর রাজধানীর মতিঝিলের আরামবাগ, গুলিস্তান, পল্টন ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকার ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়া চলে আসছিল। এসবের মদদে রয়েছে যুবলীগের একশ্রেণির নেতা। ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সদ্য বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবসহ ঢাকার চারটি ক্যাসিনো ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেয় র‌্যাব। এরপর আরও কয়েকটি ক্লাবে পুলিশ ও র‌্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়। এর পরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জুয়ায় জড়িতদের মধ্যে। আতঙ্কে কোনো এলাকায় ক্লাব পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন আয়োজকরা। এ ছাড়া কিছু ক্লাব খোলা থাকলেও জুয়ার বোর্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। বাসাবাড়ি, বস্তিতেও জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে গেছে চলমান অভিযানের আতঙ্কে।

গতকাল সোমবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০টি ক্লাবের আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। জুয়াবিরোধী চলমান অভিযানে আতঙ্কে আয়োজকরা ক্লাব বন্ধ রেখেছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গেণ্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের প্রধান গেট খোলা থাকলেও কক্ষগুলো তালাবদ্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এই ক্লাবে সকাল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত জুয়া চলত। অভিযান চলায় এখন বন্ধ রয়েছে। তবে ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান আসকারীর দাবি, ক্লাবে বাইরের কেউ জুয়া খেলে না। ক্লাবের সদস্যরা সেখানে তাস খেলে সময় পার করে। পুলিশের নির্দেশে ৫-৬ দিন আগে ক্লাব বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে সকালে খিলগাঁও সি ব্লকে রবি সমাজকল্যাণ সংঘে গিয়ে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাহাদত হোসেন সাধুর নিয়ন্ত্রণে ক্লাবটিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জুয়া চলত। তবে সম্প্রতি খিলগাঁও থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ১০ জুয়াড়িকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ বন্ধ করে দেয় ক্লাবটি। সাধুর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বিকেল ৩টার দিকে মগবাজারের ইস্কাটন সবুজ সংঘ ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় ক্লাবটি খোলা। তবে কয়েকটি ঘর তালাবদ্ধ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জুয়ার আস্তানা ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি এবং বস্তিতেও। উত্তরা, হাজারীবাগ, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর. মিরপুর, নিকেতন, খিলগাঁও, শ্যামলী, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য জুয়ার আসর বসানো হয়। হাজারীবাগে অন্তত ২০টি স্থানে রাতে জুয়ার আসর বসে। এর মধ্যে সনাতনগড় বউবাজার বস্তিতে তিনটি রিকশার গ্যারেজে এ আসর বসে প্রতি রাতে। হাজারীবাগ বটতলা মাজার রোড, কালুনগর, নবীপুর ও বাড্ডানগর লেনের অধিকাংশ বাড়িতে রাতে জুয়ার বোর্ড বসানো হয়। ডেমরার সারুলিয়া, ডগাইর, ডেমরা বাজার ও বাঁশেরপুলে বাসবাড়িতে জুয়ার বোর্ড চলে বলে জানা গেছে। তবে চলমান অভিযানের কারণে বেশিরভাগই বন্ধ রয়েছে এখন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top