১২ জনের প্রাণ কেড়ে নিল এবারের ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’

S M Ashraful Azom
0
১২ জনের প্রাণ কেড়ে নিল এবারের ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’
সেবা ডেস্ক: ব্ল্যাক ফ্রাইডে বা কালো শুক্রবার। প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ শুক্রবারই ব্ল্যাক ফ্রাইডে হিসেবে পালিত হয়। তবে অনেকই হয়ত জানেন না দিনটির বিশেষত্ব কী?
এই দিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’ -এর পরের দিন পালিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফ্রাইডে এমন একটা দিন, যেদিন সেখানকার মানুষরা পাগলের মতো কেনাকাটা করে। কারণ, এই ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে আমেরিকার ক্রিসমাস শপিং মৌসুমের সূচনা হয়।

১৯৫২ সালে এই দিনটি প্রথম উদযাপিত হলেও ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামটি কয়েক দশক ধরে অজানা থেকে যায় সবার কাছে। ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামটা শুনেই মনে হয় অশুভ দিন। আমেরিকার জনগণের কাছে দিনটি খুবই শুভ এবং বহু প্রতিক্ষিত একটা দিন। ১৯৬১ সালে ফিলাডেলফিয়ায় এই শব্দটির উদ্ভব হয়েছিল। সেই থেকেই এই ব্যস্ত শপিং দিনটির এহেন নাম প্রচলিত হয়ে আসছে।

ফিলাডেলফিয়া পুলিশ বিভাগের উপাখ্যান অনুযায়ী, থ্যাঙ্কস গিভিং ডে-এর পরের দিনকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামে অভিহিত করা হয়েছিল। কারণ, এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতো এবং ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হত। ফলে, শহরের রাস্তাজুড়ে থাকত প্রচুর মানুষের জমায়েত, প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম। এত মানুষের জমায়েত ও ট্রাফিক সামলাতে বেশ বেগ পেতে হতো ফিলাডেলফিয়ার পুলিশদের।

সেই থেকেই ফিলাডেলফিয়ার পুলিশরাই এই দিবসের নাম দিয়েছিলেন ব্ল্যাক ফ্রাইডে। নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭৫ সালের ২৯ শে নভেম্বর এই দিনটিকে ‘বছরের ব্যস্ততম কেনাকাটা এবং ট্র্যাফিকের দিন’ হিসেবে উল্লেখ করে। তাৎপর্য সালটা ১৮৬৯। আমেরিকা তখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। সেই অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ক্ষেত্রে একটি দিনের কথা চিন্তা করে সেইদিনে বেশি অঙ্কের ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাস্তবে তা প্রতিফলিতও হয়।

তাই, এই ব্ল্যাক ফ্রাইডে আমেরিকার জনগণের কাছে বহু প্রতিক্ষিত একটি দিন। এই দিনে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য আকর্ষণীয় ছাড়ে বিক্রি করে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে সারাবছরে যে পরিমাণ বেচা-কেনা হয়, তার প্রায় অর্ধেকের বেশি পরিমাণ কেনা-বেচা হয় এই একটি মাত্র দিনে। প্রাথমিকভাবে স্টোরগুলি সকাল ৬ টায় খোলা হত। তবে, পরে দুই হাজারের এর বেশি স্টোর ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে খোলা হত।

২০১১ সালে অনেক জনপ্রিয় দোকানগুলো খোলা হয়েছিল মধ্যরাতে। এটিই ছিল প্রথমবার, যেখানে মধ্যরাত্রে ক্রেতাদের জিনিস কেনার জন্য দোকানগুলো খুলে দেয়া হয়েছিল। এই দিনটিতে পুরো আমেরিকায় এতো পরিমাণ বেচা-কেনা হয় যে, আমেরিকার অর্থনীতির সূচক এক লাফে অনেকখানি এগিয়ে যায়। ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে সরকারি কোনো ছুটির দিন ঘোষণা না হলেও ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার কিছু অংশে এটি রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের ছুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এমনকি কিছু স্কুল এবং অফিস ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং থ্যাঙ্কসগিভিং দিবসে ছুটি ঘোষণা করে। ২০০৫ সাল থেকে এটি বছরের ব্যস্ততম শপিং দিন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। অল্প দামে সেরা জিনিসগুলো ক্রয় করতে এই দিনে স্টোরগুলোতে যান প্রচুর সাধারণ মানুষ। ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এতে প্রায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ১১৮ জন আহত হয়েছিল।

সারাবছর লাল কালিতে লোকসান বা বাকির অঙ্কের পরিমাণ লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা কালো কালিতে এই দিনে লাভের অঙ্ক লিখে কূল পান না। ছোটো, মাঝারি থেকে বড়ো ব্যবসা, সবার ঘরে আসে লাভের লক্ষ্মী। তাই এই দিনের নাম ব্ল্যাক ফ্রাইডে কোথাও হয়ত যথাযথ। কারণ, লাভের অঙ্কের হিসাব ‘লাল’-এ নয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই দিনটি পালন উপলক্ষ্যে শপিংয়ে অনেক ছাড় দিয়ে থাকে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top