মাহে রবিউল আওয়াল মাসে আমাদের শিক্ষা

S M Ashraful Azom
0
মাহে রবিউল আওয়াল মাসে আমাদের শিক্ষা
সেবা ডেস্ক: হাদিস শরীফে এসেছে, ‘প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমাকে নবুয়াত দান করা হয়েছে’। (মুসলিম শরীফ : হা: ১১৬২)। 

মুসলিম শরিফে বর্ণিত বিশুদ্ধ এই হাদিস দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্মদিনে উম্মতের করণীয় কী, তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অন্য হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়ে থাকে। অতএব, রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা পেশ করা হোক, এটা আমি পছন্দ করি’। (তিরমিজী শরীফ : ৭৪৭)।

নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের কারণে বছরের প্রতিটি সোমবার অতি মূল্যবান হয়ে গেছে। তাই এ দিনে নফল রোজার বিধান রাখা হয়েছে। এ দিনে রোজা রাখা প্রকৃত নবী-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য হবে। সোমবার নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর দিন, এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পক্ষান্তরে ১২ রবিউল আওয়াল তাঁর পবিত্র জন্মদিন হওয়ার কথা কোরআনেও নেই, হাদিসেও নেই। ঐতিহাসিকরাও ১২ তারিখে জন্মের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে সোমবারই হচ্ছে তাঁর পবিত্র জন্ম দিন, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এ ক্ষেত্রে তারিখ দেখার বিষয় নয়, ১২ তারিখও হতে পারে, ভিন্ন তারিখও হতে পারে।

অতএব, প্রকৃত নবী-প্রেমিক হতে হলে প্রতি সোমবার রোজা রাখা চাই। সঙ্গে বৃহস্পতিবারও  রোজা রাখা উচিত। বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এগুলো প্রমাণিত। এর বিপরীত দিনের প্রতি লক্ষ্য না করে তারিখের ভিত্তিতে ১২ তারিখকে জন্মদিন ধরে নিয়ে জশনে জুলুস বা মিছিল বের করা একটি মনগড়া কাজ বৈ কিছু নয়। ইসলামের সঙ্গে এসব জশনে-জুলুসের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা ইসলামের স্বর্ণযুগে এমন মিছিলের বা জন্মদিন পালনের প্রথা খুঁজে পাওয়া যায় না। নবীজির (সা.) এর পবিত্র যুগে জশনে-জুলুস বা জন্মদিন পালনের নিয়ম ছিল না। পরবর্তী সময়ে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও পালিত হয়নি। সাহাবাদের যুগেও কেউ পালন করেনটি। চার ইমামসহ মুহাদ্দিসীনের কেউ তা পালন করেননি। বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.), খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি আজমীরি (রহ.), শাহজালাল ইয়ামেনি (রহ.) এর মতো বুজর্গদের কেউ তা পালন করেননি।

তাই আসুন, প্রকৃত নবী-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ করতে আমরা প্রতি সোমবার নফল রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলি। রোজা অবস্থায় আল্লাহর দরবারে আমাদের আমলনামা পেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করি। যদি সময়-সুযোগের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে সারা বছর এ রোজা পালনের তাওফিক না হয়, তবে কমপক্ষে রবিউল আওয়াল মাসে এ ইবাদতটি আমরা পালন করতে পারি। হয়তো চারটি রোজা রাখা লাগবে। এতে নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে’। (সূরা: আল আহযাব, আয়াত: ২১)।

অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ মোতাবেক প্রতিটি ইবাদত পালন একজন নবী- প্রেমিক বান্দার একান্ত কাম্য হওয়া উচিত।

আমরা আজ অধঃপতিত কী কারণে? ১৪ শ’ বছর আগের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রকৃত মুহাব্বত বুকে ধারন করে এবং তাঁর সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে সাহাবায়ে কেরাম জিরো থেকে হিরোতে পরিণত হয়েছিলেন, গোটা দুনিয়াকে নিজেদের হাতের মুঠায় নিয়ে এসেছিলেন, তাদের নাম শুনলে কাফির-মুশরিকদের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি হয়ে যেত। আর আমাদের অবস্থা হলো- সুন্নত থেকে দূরে সরে পূর্বের তুলনায় অধিক জনবল ও ধনবল থাকা সত্তেও বিশ্বময় আমরা লাঞ্চিত, অবহেলিত, নির্যাতিত। আল্লাহর দুশমনদের গোলামে পরিণত হয়েছি। আমরা কী তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই ভবিষ্যদ্ববাণীর প্রয়োগক্ষেত্র হয়ে গেলাম? ‘তিনি বলেছেন, এমন এক যমানা আসবে যখন তোমরা সংখ্যায় হবে অনেক কিন্তু তোমাদের অবস্হা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া তৃণ লতার মতো। যার নিজের কোনো অধিকার নেই।’ দুশমনকে খুশি করতে নিজেদের স্বকীয়তাকে মিটিয়ে দিচ্ছি, মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাদের অনুসরণ করা সত্তেও তারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট নয়, মজলুম মুসলমানের আহাজারিতে আজ আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।

অতএব, ভুলে গেলে চলবে না, যতদিন মুসলমান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতকে নিজের বাস্তব জীবনে প্রকাশ না ঘটাবে ততদিন কেবল তাদের কপালে লা না আর ভর্ৎসনাই জুটবে। সুতরাং আসুন রবিউল আওয়াল থেকে আমরা এ প্রত্যায় নিয়েই সামনে অগ্রসর হব যে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতে রাসূল ও তাঁর আদর্শকে প্রাধান্য দেব এবং সর্বত্র তা বাস্তবায়ন করার আমৃত চেষ্টা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

সারসংক্ষেপ: 
১. হজরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা ঈমানের প্রাণ শক্তি, এ ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না। ভালবাসার অর্থ হলো, তাঁর চাল-চলন, কথা-বার্তা, উঠা-বসা, শয়ন-স্বপন, নিদ্রা-জাগরণ, পানাহার,  ইত্যাদি সকল ইবাদত ও কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণের মাধ্যমে নিজ জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা।

২. তাঁকে ভালবাসা ও তাঁর আশেক হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো দিন, তারিখ বা সন নেই বরং বছরের প্রতিটি মাস, প্রতিটি সপ্তাহ, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে ভালবাসার উজ্জ্বল নির্দশন স্থাপন করা।

৩. ঈদে মীলাদুন্নবী কোরআন হাদিস বহির্ভূত নব আবিস্কৃত ও বর্জনযোগ্য একটি মনগড়া বিষয়।

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তারিখ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তাই শুধু মাত্র ১২ তারিখকে জন্মদিন ঘোষণ দেয়া যুক্তি সংগত নয়।

৫. ঐতিহাসিকদের মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল ১২ রবিউল আওয়াল। তাই সেদিন শুধু জন্মদিবস উপলক্ষে ঈদ ও খুশি পালন করা কতটুকু যুক্তি সংগত?

৬. অনেকের ধারণা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন, তাই তাঁকে অভিনন্দন জানাতে দাঁড়িয়ে যান। এটা কোরআন ও হাদিস পরিপন্থী মতবাদ।

৭. আশেক হওয়ার জন্য শুধু রবিউল আওয়ালে মীলাদ মাহফিল, জলসা, জসনে জুলুস, সেমিনার-সেম্পুজিয়াম, আলোচনা সীরাত বিষয়ক অনুষ্ঠান ইত্যাদি করলেই চলবে না। বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সুন্নত ও আদর্শকে অনুসরণ করে এবং তা নিজের পরিবার, সমাজ ও রাষ্টের মাঝে বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে। রাসূাল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অধিক হারে দরূদ পাঠ করা। কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী আমল করা এবং এর বিপরীত সকল প্রকার শিরক, বিদাত ও কুসংস্কার থেকে নিজের বেঁচে থাকা এবং অন্যকেও বাঁচানোর চেষ্টা করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করার ও রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা কে সত্যিকারার্থে ভালবাসার তৌফিক দিন। আমীন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top