জামালপুরে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে গৃহপরিচারিকার ঝাপ

S M Ashraful Azom
0
জামালপুরে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে গৃহপরিচারিকার ঝাপ
সেবা ডেস্ক: জামালপুরে গৃহকর্তার ধর্ষণের কবল থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে ওই বাড়ির গৃহপরিচারিকা এক কিশোরী। তার বয়স আনুমানিক ১৪ বছর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে ১২ ডিসেম্বর রাতেই জামালপুর সদর থানার পুলিশ ওই গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে (৩৬) আটক করেছে। এ ব্যাপারে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আসামি করে ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলে আসামি আবুল কাশেমকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ।

আবুল কাশেম জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিদপুর গ্রামের মো. জাফর আলীর ছেলে। তিনি সৃষ্টি স্কুল এন্ড কলেজ জামালপুর শাখার সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তার স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু। এই দম্পতি জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় জনৈক মো. ইউছুফের বাসার দোতলায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করেন।

অপরদিকে ধর্ষণের চেষ্টার শিকার ওই কিশোরী ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার আকুনপাড়া গ্রামের একজন বাবুর্চির মেয়ে। তারা প্রায় সাত বছর ধরে জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় জনৈক মো. আসাদুজ্জামানের বাসার ভাড়াটে। ওই কিশোরী তাদের বাসার কাছেই সাবেক শিক্ষক আবুল কাশেমের বাসায় প্রায় তিন বছর ধরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছে।

অভিযোগে জানা গেছে, গৃহকর্তা আবুল কাশেমের স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি স্কুল এন্ড কলেজে একটি জরুরি সভায় অংশ নিতে ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তাদের বাসার গৃহপরিচারিকা ওই কিশোরী রান্নাঘরে কাজ করছিল। গৃহকর্তা আবুল কাশেম রান্না ঘরে গিয়ে ওই কিশোরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে বলেন, ‘শীতের সময় পানির কাজ করিতেছ, তোমার ঠান্ডা লাগে না।’ কিশোরী ভয়ে তাকে বাঁধা দিলে গৃহকর্তা তাকে জোর করে কোলে করে তোলে নিয়ে শোবার ঘরে বিছানায় নিয়ে যান। সেখানে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে বিবস্ত্র করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি।

এ সময় ওই কিশোরী গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে ধাক্কা মেরে বাসার ছাদে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আবুল কাশেমও পিছু নিয়ে ছাদে গিয়ে পুনরায় তাকে জড়িয়ে ধরে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ওই কিশোরী তার সম্ভ্রম ও আত্মরক্ষায় দোতলার ছাদের পানির পাইপের সাথে নিজের উড়না বেঁধে নিচে নামার চেষ্টার সময় মাটিতে পড়ে গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় সে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলের কাছেই তাদের ভাড়া বাসায় গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। ছাদ থেকে পড়ে সে দুই পা, হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ছিলে গিয়ে মারাত্মক জখমও হয়েছে। একই সাথে সে ভীষণ ভয়ও পেয়েছে। ১২ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওই কিশোরীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘গৃহকর্তা আবুল কাশেম কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তিনি কাউকে কিছু না বলার জন্য আমার মেয়ে ভয়ভীতি দেখাইতেন। আমার মেয়েটারে আল্লায় বাঁচাইছে। আমি আবুল কাশেমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এদিকে বাসার ছাদ থেকে এক কিশোরী পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় কে বা কারা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন আসে জামালপুর সদর থানায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান ১২ ডিসেম্বর রাতেই অভিযান চালিয়ে খামারবাড়ির ওই বাসা থেকে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।

১৩ ডিসেম্বর বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, গৃহপরিচারিকা কিশোরী ধর্ষণের চেষ্টাকারী আবুল কাশেমের কবল থেকে বাঁচতে যে উড়না বেঁধে ছাদ থেকে নামার চেষ্টা করে, সেই উড়নাটি সেখানেই রয়ে গেছে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বলেন, ‘১২ ডিসেম্বর রাতে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই খামারবাড়ির ওই বাসা থেকে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী আবুল কাশেমকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়ের করে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত ওই কিশোরী জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top