কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি রক্তের বাধন

S M Ashraful Azom
0
কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি রক্তের বাধন
হাসান বাপ্পি,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই বাংলার মিলন মেলা। এই মিলন মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায় প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে। সীমান্তের কাঁটাতার আলাদা করতে পারেনি তাদের রক্তের বাধনকে।

শুক্রবার হরিপুর উপজেলার চাঁপাসার ও কোচল সীমান্তে অবস্থিত গেবিন্দপুর শ্রী শ্রী জামর কালিমন্দিরে পুজা উপলক্ষে অস্থায়ী এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। আর দেশ বিভক্তির ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দুই দেশের স্বজনদের কিছু সময় কথা বলার সুযোগ করে দেয় বিজিবি ও বিএসএফ। তবে মিলন মেলার উপচেপরা ভিড়ের মাঝেও পুরো এলাকা ছিল কঠোর নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত ।

শুক্রবার সকাল থেকেই হরিপুরের কুলিক নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাসার ও কোঁচল এবং ভারতের মাকড়হাট ও নারগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৪৪/৪৫ নং মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকার কাঁটা তারের দ’ুপ্রান্তে ভিড় করে দুই বাংলার হাজার হাজার নারী পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ। তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন, কুশল বিনিময় করছেন। কেউ কেউ কাঁটাতারের ওপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর ছুড়ে দিচ্ছেন একে অপরকে। কেউবা আত্মীয় স্বজনদের দেয়ার জন্য ঠান্ডা পানীয় বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন।

এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলছেন। তবে সে কান্না বিরহের নয়, মধুর মিলনের।

সীমান্ত বাসীরা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেনা, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনে তারা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ করে।

হরিপুরের নীপেন্দ্র নাথ বলেন, বোনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। দেখাও হয়েছে। কিন্তু বোনকে আদর করতে পারিনি। তারপরও অনেক খুশি।

দিনাজপুরের রমনি বালা বলেন, মেয়ে ও জামাই ভারতে থাকে। তাদেরকে দেখতে মিলন মেলায় হাজির হয়েছি। অনেক খোজাখুজি করে তাদের সাথে দেখা ও কথা হয়। 

কাঠাঁলডাঙ্গী গ্রামের ননি রানি এসেছেন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শিলিগুড়িতে থাকা মেয়ে রিনা রানীকে ১১ বছর ধরে দেখেন না মা ননি রানি ।

একই গ্রামের জমির উদ্দিন এসেছিলেন তার ছেলে ও ছেলে বউ এর সাথে দেখা করতে। কিন্তু এবার দেখা না হওয়ায় হতাশ হয়েই দাড়িয়ে থাকেন কাঁটা তারের বেরা ধরে।

মেলা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল জানান, প্রতি বছর দুই দেশের মিলন মেলার জন্যই পাথরকালী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা উপলক্ষে বিজিবি-বিএসএসফ দুই দেশের মানুষদের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়। 

হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্য আমিরুজ্জামান জানান, মেলায় আইন-শিঙ্খলার জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় মেলাটি সুনামের সাথে প্রতিবছরই বসে থাকে তাই অন্যান্য বারের মতো এবারেও কোনরূপ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই মেলা শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে: ক: সামিউন নবি চৌধুরী জানান, এ মেলাটি স্থানীয়ভাবে হয় এবং এবারো হয়েছে। এ মেলা উপলক্ষে দু সীমান্তের হাজারো মানুষ তাদের আত্মীয়দের খুজে পান দেখে ভালোই লাগে। তবে মেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিলো এবং বিজিবি ও বিএসএফ’র যৌথ সহায়তা ছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এদেশের অনেক আত্মীয়-স্বজন ভারতীয় অংশে পড়ে। ফলে অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তারা উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অলিখিত সম্মতিতে প্রতি বছর এই সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা সাক্ষাত করার সুযোগ পান।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top