এক হাতের শক্তিতে নুসরাত তৈরি করেছেন ‘ফিজিওট্র্যাক’

S M Ashraful Azom
0
এক হাতের শক্তিতে নুসরাত তৈরি করেছেন ‘ফিজিওট্র্যাক’
সেবা ডেস্ক: ছোটবেলা থেকেই নিজের অপারগতাকে পিছনে ফেলে নিজে কিছু করার অদম্য ইচ্ছা ছিল অদম্য সাহসী নারীর নাম নুসরাত জাহানের। অনেকগুলো স্বনামধন্য কোম্পানীতে কাজ করার পর অবশেষে নিজেই নিজের জ্ঞান ও মানুষকে নিয়ে কাজ করার অদম্য ইচ্ছা থেকে প্রতিষ্ঠা করেন ইন্টারএক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট।

জন্ম থেকেই তার ডান হাত দুর্বল। ক্রমশ তার ডান হাতের শক্তি যেতে শুরু করে। তবে আরেকটি হাত আছে তো? এই সমস্যাটি বাধা হতে পারেনি নুসরাতের জীবনে। এক হাতের জোর দিয়েই নিজের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন নুসরাত।

২০০৩ সালে বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং মাধ্যমিক শেষ করেন নুসরাত জাহান। এরপর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন তিনি। ভাগ্য গুণে চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে। সেখান থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে জার্মানির রাইনওয়াল ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স থেকে ইউজেবিলিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন। প্রথমে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েও মানুষের ভালো করার জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে বিষয় পরিবর্তন করেন তিনি।

জার্মানিতে পড়ার সময় অনলাইনে আইসিটি বিভাগের কানেকটিং স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন নুসরাত। ৪৩৭টি ধারণা থেকে নির্বাচিত ১০টি আইডিয়ার মধ্যে জায়গা পায় তার ধারণাটি। চাকরি ছেড়ে দেন স্বপ্ন নির্মাণের আশায়। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি ফিজিওট্র্যাক নামক ডিভাইসটি যন্ত্রের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন।

 ‘ফিজিওট্র্যাক’ যন্ত্রের কার্যকারিতা

চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ এবং ব্যায়ামে শরীরের নড়াচড়াজনিত অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না বোঝা যাবে ফিজিওট্র্যাক নামক ডিভাইসটির মাধ্যমে। এটি এক্স-রে মেশিনের মতো মোশন ক্যামেরা দিয়ে রোগীর শরীর স্ক্যান করে রেফারেন্স কাঠামো পাওয়া যায়। এরপর ঘাড়, হাতের কনুই, ল্যাম্বার কিংবা হিপ জয়েন্ট, অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নাড়াচাড়া করলে সেটির স্ক্যান ছবি ফিজিওট্র্যাক গ্রহণ করে। তারপর কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে নিখুঁতভাবে নাড়াচাড়ার প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়।

তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে নুসরাতের মতো যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন বা নানা কারণে যাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়, তাদের জন্যই যন্ত্রটি। মাইক্রোসফটের কিনেটিক ডিভাইস ব্যবহার করে নুসরাত একটি ‘এমবেডেড সিস্টেম’ তৈরি করেন। যন্ত্রটির সঙ্গে একটি ল্যাপটপ ও একটি ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে। যা মূলত শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থির প্রকৃত গতিবিধি পরিমাপ করে ।

তাছাড়াও একজন ব্যক্তি ঠিক কতটুকু ঘাড় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাতে পারেন, সেটি বের করে জানিয়ে দিতে পারে এই ডিভাইস। অর্থোপেডিকস, নিউরোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকদের জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক উদ্ভাবন। ফিজিওট্র্যাকের আরেকটি সুবিধা হলো, এর সঙ্গে জুড়ে রাখা থাকে একটি ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড সিস্টেম যাতে করে রোগীর সব তথ্য সিস্টেমে জমা হয় এবং তাকে মনিটরিং করা সহজ হয়।

নুসরাত জাহান প্রতিষ্ঠানটির অভাবনীয় সাফল্য পান ফিজিওট্র্যাক ডিভাইস উদ্ভাবনের মাধ্যমে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফিজিওট্র্যাকের ব্যবহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত রোগীদের চিকিৎসায় অভাবনীয় উন্নতি উপলব্ধি করতে পারবে। তার ইচ্ছা ইন্টারএক্টিভ আর্টিফ্যাক্টকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে তোলার।

ইন্টারএক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট এ কাজ করার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে বাঁধন-ব্লাড ব্যাংক এর উপদেষ্টা এবং ই-ক্লাব ওইমেন ফোরামের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণানির্ভর প্রকল্পে কাজ করা কঠিন বলে মনে করেন নুসরাত। তার মতে, এই কাজে তাকে প্রচুর বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ডাক্তারদের এই বিষয়ে উপলব্ধি করাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

এছাড়াও দেশে গবেষণা সংস্থার অভাবের কারণে তার মত বহু উদ্যোক্তার এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তার বহুদিনের। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের বিশেষভাবে কোনো এক দিকে পারদর্শিতা থাকে। নুসরাত জাহান তাদের এই পারদর্শীতার উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা কখনো দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না। 

চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯’ এ ফিজিওট্র্যাকের প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়াও তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে তিনি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। নুসরাতের বিশ্বাস, বাণিজ্যিকভাবে তার উদ্ভাবিত ফিজিওট্র্যাক দেশের সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত নিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে শারীরিক অসুস্থ রোগীরা তাদের চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাসায় ব্যায়াম করছেন কি না, সেটি মনিটরিং করার ডিভাইস বানানোর জন্য কাজ করতে চান নুসরাত।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top