
সেবা ডেস্ক: ১৯৮৬ সালে সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী বাজার এলাকায় স্থানীয়দের বইপড়ায় উৎসাহী করতে গড়ে তোলা হয় পাবলিক লাইব্রেরি। সে সময় লাইব্রেরিটি এলাকায় বেশ সাড়া জাগায়। দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে লোকজন বই পড়তে আসতো সেখানে। তবে সেটি এখন বন্ধ। দখল হয়ে গেছে তিনটি কক্ষও। এর দুটি কক্ষে চলছে স্থানীয় একটি সমিতির কার্যক্রম, অন্যটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শ্যামলের দখলে।
লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কুশখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রায়হান বিশ্বাস জানান, ১৯৮৬ সালে এ লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করেন বড় ভাই মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি (আব্দুর রাজ্জাক) সে সময় ইউপি চেয়ারম্যান ও কলারোয়া কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিন শতক জমির ওপর ১৯৮৭ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট বিল্ডিংয়ে গড়ে তোলা হয় লাইব্রেরি। তখন ৬-৭ হাজার বই ছিল সেখানে।
তিনি আরও জানান, ২০০২ সাল পর্যন্ত ভালোভাবেই চলছিল লাইব্রেরিটি। এরপর বন্ধ হতে থাকে। ২০১১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর লাইব্রেরি ফের চালু করা হয়। তখন এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন নিজেই। এরপর ২০১৪ সালে লাইব্রেরির রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যায়। নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শ্যামল। পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সদস্য। শ্যামল একটি কক্ষ অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করলেও লাইব্রেরি সচলের উদ্যোগ নেননি।
লাইব্রেরির পাঠক সদস্য ও কুশখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লিয়াকত আলী বাবু জানান, এটি অতীতে অনেক জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। এখান থেকে বইপত্র নিয়ে এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়তো। তিনি নিজেও পাঠক সদস্য ছিলেন। এখন আর লাইব্রেরি নেই। সীমান্তবর্তী এ প্রত্যন্ত এলাকায় লাইব্রেরিটি ফের চালু হলে এলাকার শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়বে এলাকাবাসীর মাঝে।
লাইব্রেরির জমিদাতার নাতী বিনায়ক চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার দাদা মাস্টার বিকেন্দ্র নাথ পাবলিক লাইব্রেরির জন্য তিন শতক জমি দান করেন। তিনি মারা গেছেন। লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০১১ সালে এর কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করি। এরপর জাঁকজমক পরিবেশে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। তবে এখন আর কোনো কার্যক্রম নেই। তিন হাজারেরও বেশি বইপত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে। চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম অফিস করছেন, এছাড়া বাজারের সমিতির কার্যক্রম চলে সেখানে। তিন বছর আগে বন্ধ হওয়ার পর কেউ চালুর উদ্যোগ নেয়নি।’
কুশখালী বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক আবুল বাসার বলেন, ২০০৪ সালে সমিতির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন লাইব্রেরি অনেকটাই বন্ধ ছিল। এরপর কেউ আর সেভাবে উদ্যোগ নেয়নি। আমরা চালুর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু চেয়ারম্যান আগ্রহী না হওয়ায় সম্ভব হয়নি। তিনি উদ্যোগী হলেই লাইব্রেরি আবারও চালু করা সম্ভব হতো। তিনিও লাইব্রেরি নতুনভাবে চালুর দাবি জানান।
ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শ্যামল বলেন, লাইব্রেরির একটা কক্ষ আমি ব্যবহার করছি। আগের চেয়ারম্যানও করতেন। লাইব্রেরিটি এখন বন্ধ। অন্য দুই কক্ষে সমিতির কার্যক্রম চলছে।
আপনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর লাইব্রেরিটি বন্ধ হয়ে গেছে- এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, খুব বেশি দিন চলেনি। আমি লাইব্রেরির কার্যক্রমও বন্ধ করিনি। স্থানীয় অনেক কোন্দল রয়েছে, যার কারণে সেভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, স্থানীয়রা লাইব্রেরিটি চালু করতে চাইলে যা যা করা দরকার তা করা হবে। এছাড়া সেখানে চেয়ারম্যান বা অন্য কেউ অফিস করলে সেগুলো উচ্ছেদ করেই লাইব্রেরি চালু করা হবে। উদ্যোক্তা পর্যায়ের বা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কেউ এটি চালুর ব্যাপারে আমার কাছে এলে ব্যবস্থা নেব।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।