সেবা ডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান। যা আমরা সবাই জানি। এটি মসলার মধ্যে প্রাচীনতমও। জাফরানকে ‘রেড গোল্ড’ বা লাল সোনা বলা হয়। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। এটি খাবারকে দেয় আলাদা স্বাদ। এ ছাড়া নানা জটিল রোগের ওষুধের কাঁচামাল হিসেবেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
মহা মূল্যবান মসলাটির বৈশ্বিক উৎপাদনের ৯৫ ভাগই হয় ইরানে। এরফলে জাফরানের বৈশ্বিক বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের। এই বাজারে ইরানিরা এতটাই শক্তিশালী যে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক অবরোধও তাদের এই ব্যবসায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বর্তমানে এক গ্রাম জাফরানের মূল্য প্রায় ৮ মার্কিন ডলার। আর এটি রপ্তানি করে ইরান বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। ইরানের চাষিরা বলছেন, তারা জাফরানের উৎপাদন আরো বাড়াবেন। কারণ বিশ্বব্যাপী এটির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কারণে অন্যান্য সেক্টরের মতো জাফরান বাণিজ্যেও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ইরানিদের। তা স্বত্বেও এই খাতটি ইরানের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইরানের এক জাফরান ব্যবসায়ী বলেন, জাফরান এখন এমন একটি জিনিস যার ওপর বহু মানুষ বেঁচে আছে। শ্রমিক, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং দোকানদার সবাই এর ওপর নির্ভর করে জীবন চালাচ্ছে।
জানা গেছে, ইরানের জাফরানের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারপরেই আছে স্পেন। এছাড়া পুরো ইউরোপজুড়ে, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশে ইরানি জাফরানের চাহিদা বাড়ছে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার অবরোধের পরেও ইরানের এ ‘রেড গোল্ড’ ব্যবসা আরো বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।
জাফরান কী?
ক্রকাস (crocus) নামের একটি ছয় পাপড়িবিশিষ্ট ফুলের গর্ভদন্ড (Stigmata) থেকে উৎপাদিত হয় জাফরান। জাফরান ফুলের পাপড়ি বেগুনী রঙের হয়। এর ভিতরে থাকে লম্বা পরাগ দণ্ড। এ দণ্ডের রঙ হলুদ এবং কমলা মিশ্রণে জাফরানি বর্ণের হয়। পরিণত ফুল শুকালেই এর দণ্ড মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সকালে সূর্য ওঠার সময় জাফরানের ফুল ফোটে আর দিনের শেষে তা মলিন হয়ে যায়। একটি ফুল থেকে তিনটি পুংকেশর পাওয়া যায়।
১ পাউন্ড বা ৪৫০ গ্রাম শুকনো জাফরানের জন্য ৫০ থেকে ৭৫ হাজার ফুলের দরকার হয়। এক কেজির জন্য এক লাখ দশ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার ফুল দরকার হয়। দেড় লাখ ফুল তুলতে একজনের প্রায় ৪০ ঘণ্টা সময় লাগে।
ইরানে জাফরানের চাষ বেশি কেনো?
ইরানের আবহাওয়া জাফরান চাষের জন্য দারুণ উপযোগী। এছাড়া দেশটিতে এর চাষের জন্য অনেক কম দামে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়। তারা কঠোর পরিশ্রম করেন। জাফরান চাষ এবং এটি উৎপাদনে অধিকাংশ শ্রমিকই নারী।
পুরো কাজটি কায়িক পরিশ্রমে শেষ করতে হয়। ফলে জাফরানের দাম বেশি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।