প্রবাসী নারীরা তাদের আয়ের অর্ধেকই বাংলাদেশে পাঠান

S M Ashraful Azom
0
প্রবাসী নারীরা তাদের আয়ের অর্ধেকই বাংলাদেশে পাঠান
সেবা ডেস্ক: সিলেটের সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে সারা মারাক। উন্নত জীবন-যাপন এবং  সচ্ছলতার জন্য পাড়ি জমান লেবাননে। সেখানে পাঁচ বছরের ভিসা নিয়ে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যান তিনি। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সারা কাজ নিয়েছিলেন স্থানীয় একটি এনজিওতে। কিন্তু সেখানে যা বেতন পেতেন তা তার পরিবারের সকল খরচ বহন করার মত পর্যাপ্ত ছিল না। আবার তার স্বামীর আয়ও খুব বেশি ছিল না। আর তাই এক লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে পাড়ি জমান লেবাননে।
তিনি বলেন, প্রথমে আমি তিন বছরের ভিসায় এখানে কাজ নিয়ে আসি। পরে তা বাড়িয়ে আরো দু’বছর এখানে কাজ করি। আর এই ভিসার মেয়াদ বাড়াতে আমাকে আরো এক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলার দৌওয়াড়া উপজেলার জুমগাঁও গ্রামের সারা মারাক বলেন, গত বছর আমি আমার স্বামীকেও লেবাননে নিয়ে আসি। তার জন্য খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, তার ছেলে এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে। তাদের পাঠানো টাকায় তার পরিবার এখন অনেকটা স্বাবলম্বী।

সারা বলেন, বর্তমানে আমার মাসিক আয় বাংলাদেশি টাকায় ৫০-৬০ হাজার। আর এই টাকা আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট। আর লেবাননে আমার খরচও তেমন নেই। কারণ আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছি। যার ফলে আমার খরচ অনেক কম। এ কারণে আমি প্রতি মাসে ভালো অংকের টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারি। আর বাকি টাকা আমি জমিয়ে রাখি ভবিষ্যতের জন্য।

এ সময় সারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রেমিট্যান্স এর অর্থ হতে দুই শতাংশ অর্থ আবার আমার পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত দেয়া হচ্ছে। তিনি এ সময় বাংলাদেশি নারীদের জন্য বিদেশে আরো বেশি কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সারা মারাকের মত জীবনের ভাগ্য বদল করেছেন একই জেলার বাসিন্দা সীমা আরেং। তিনি ২০১৭ পাড়ি জমান লেবাননে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমার স্বামী যখন আমাকে ডিভোর্স দেন তখন থেকেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় আমি মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি কারখানায় কাজ করতাম। তখন আমার বেতন ছিল মাত্র আট হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে আমার সন্তান আর অসুস্থ বাবা-মায়ের খরচ চালাতে আমাকে হিমশিত খেতে হতো। যার ফলে প্রতি মাসেই আমাকে ধার দেনা করে চলতে হতো। খেয়ে না খেয়ে কাজ করে গেছি শুধু পরিবার আর সন্তানের কথা চিন্তা করে।

সে সময় থেকেই ভাবতাম যেকোন উপায়ে এই দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে হবে। নয়তো আমার মত আমার সন্তানকেও আজীবন কষ্ট করে যেতে হবে। কারণ যাকে আমি ঠিতমত দু’বেলা খেতে দিতে পারছি না, তাকে পড়ালেখা করাব কীভাবে?
আর এভাবেই এক সময় সুযোগ আসে বিদেশ যাওয়ার। ২০১৭ সালে প্রথম আমি লেবাননে যাই। সে সময় আমার দুই লাখ বিশ হাজার টাকা খরচ হয় লেবাননে যেতে। আর ২০১৮ সালে আমি আমার ছোট বোনকেও লেবাননে নিয়ে আসি।

সীমা বলেন, এখন প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা পাঠাই আমি পরিবারের কাছে। কারণ আমি সব মসয় আমার পরিবারের হাসি মুখ দেখতে চাই। এখন আমার সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

সারা এবং সীমার মত আরো লাখো নারী লেবানন, সৌদি আরব এবং কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যান্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।

রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্স ইউনিট (রামরু) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী নারীরা ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। প্রতি বছর অনেক বাংলাদেশি নারী বিদেশে যাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। যদিও অনেকে আবার সেখানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এক সমীক্ষার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবাসী পুরুষকর্মীরা গড়ে প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার ৫১ টাকা রেমিট্যান্স পাঠান প্রতি বছর যা তাদের বাৎসরিক আয়ের ৪৮ শতাংশ। আর অন্যদিকে নারী প্রবাসীরা গড়ে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার ৪৭৫ টাকা রেমিট্যান্স পাঠান প্রতি বছর যা তাদের বাৎসরিক আয়ের ৫৩.৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, প্রবাসী নারীরা তাদের আয়ের একটা বড় অংশ দেশে পাঠিয়ে দেন। আর এটা করেন তারা তাদের জীবন-যাপনের খরচ কমিয়ে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসেব মতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বও মাস পর্যন্ত চার লাখ ৭০ হাজার ২৬৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন কর্মসংস্থানের জন্য। তার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৫ জন।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন বিদেশে গেছেন কর্মসংস্থানের জন্য। এর মধ্যে নারী রয়েছেন এক লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশি প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৫৪ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top