গারো পাহাড়ে রোপন হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ

S M Ashraful Azom
0
গারো পাহাড়ে রোপন হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ
রেজাউল করিম বকুল, শেরপুর প্রতিনিধি: এক সময় পাখি আর বন্য প্রাণীর অভয়ারন্য ছিল শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকার গারো পাহাড়ে। ছিল ঔষধি আর ফলজ বৃক্ষসহ নানা জাতের গাছ গাছালি। মাত্র দুই আড়াই যুগে হারিয়েছে সবই। ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়। হুমকির মুখে পড়েছে আদিবাসীরা। পরিবেশ বিপর্যয় বৃক্ষ রোপন ও প্রতি বছর পাহাড়ে আগুন দেয়া সহ নানা কারণে বিলুপ্ত পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ। চলে গেছে পাখি আর বন্য প্রাণী। ফলে জটিল রুপে নিষ্পেষিত হচ্ছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ সীমান্ত এলাকার ৩০/৩৫টি গ্রামের প্রায় অর্ধলাখ মানুষের জীবন জীবিকা।

এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষে বন বিভাগের অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে সুফল প্রজেক্ট। রোপন করা হচ্ছে বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রায় বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ। চলছে ফলজ ও ঔষধি বাগানসহ শাল কপিচ ম্যানেজম্যান্ট কার্যক্রম। বনাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করতে চলছে পাখি ও বন্যপ্রাণির অভয়ারন্য প্রচেষ্টা। অনেকের মতে, সুফল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে গারো পাহাড়ের পরিবেশ। বুধবার সরেজমিনে এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বন বিভাগসহ অনেকের সাথে কথা ওঠে আসে এমন চিত্র।
         জানা যায়, গারো পাহাড়ে বসবাস করে গারো, হাজং, কোচ, বানাই, বর্মন অদিবাসীরা। ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা এ পাহাড়ে আদিবাসীদের বেচেঁ থাকার সংগ্রাম দীর্ঘ বেদনার ঘন অধ্যায়। পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ নিধনে ক্রমাগত ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা শাল, গজারি ও ওষুধি গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। হারিয়ে গেছে প্রাণী বৈচিত্রের পাহাড়ি সম্পদ। নেই ফসলের বৈচিত্র। জলাশয়ে নানা প্রকারের মাছ আর জলজ প্রানীও হারিয়ে গেছে কালের বির্বতনে। দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রভাব। স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক কর্মী ব্রতিন মারাক ও প্রেমলা মারাক জানান, এখন পশুপাখি নেই। ওষুধি গাছ খুজে পাওয়া যায়না। সামান্য অসুখ হলেই যেতে হয় হাসপাতালে।     

উপজেলা টাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, বালিজুরি রেঞ্জে একাশি, ইউক্লিপটার্স , মেহগিনি, সেগুনসহ বিভিন্ন জাতের গাছের বাগানে বসবাসকারীরা পড়েছে হুমকির মুখে। জুম ফসল, স্থানীয় জাতের ধান, শাকপাতা ও ফলমূলসহ নানা জাতের গাছের বিলুপ্তি ঘটেছে। নেই বনের বক, কবুতর, বনমোরগ, হরিণ, শুকুর, সরগা, ঘুঘু, চিলহাসসহ নানা ধরনের বন্য প্রানী। অনেক  নদ,নদী, খাল বিল ভরাটে পানির ভুর্গভস্থ স্তর গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। এতে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে প্রকট ভাবে। ফলে বোরো মৌসুমে দেখা দেয় সেচের সংকট। নদীর অববাহিকা বিভাজক রেখাগুলো বারবার বালি জমে ভরাট হয়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে বন্যার। এমনকি পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি পড়ে ফসলী জমি হচ্ছে অনাবাদি। তবে ফলজ ও ওষধি বৃক্ষ রোপনসহ ঝর্ণা গুলো ড্রেজিং করা হলে ফিরে আসবে গারো পাহাড়ের ঐতিহ্য।

আগের বৈচিত্র ফিরিয়ে আনতে চলতি বছর বন বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে সুফল প্রজেক্ট।  এতে উডলট বাগানের পরিবর্তে গড়ে উঠছে সুফল প্রজেক্টের বিলুপ্ত এবং বিপন্ন প্রায় অর্ধশত জাতের দেশিয় বৃক্ষের চারা রোপন। আছে ঔষধি বাগানসহ শাল কপিচম্যান্ট কার্যক্রম। বনাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করতে বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য করা হচ্ছে। দ্রæত চলছে সুফল প্রজেক্টের কার্যক্রম। বালিজুরি রেঞ্জের সদর বিট অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, বালিজুরি, মালাকোচা, কর্ণঝোড়া ও ডুমুরতলা বিটে গত ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থ বছরে ৮শ ৭৫ একর জমিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ চারা উত্তোলন করে রোপন করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে চারা উত্তোলন ও রোপনের কার্যক্রম চলমান।  এসব বৃক্ষের মধ্যে শাল, গজারি, গর্জন, চাপালিশ, নেয়র, আমলকি, হরতকি, বহেরা, তালছড়া, উছা, অর্জন, জারুল, কানাইডিঙ্গা, কুমভি, খারাজোরা, নিম, ফিতরাজ, হলুদ, মাকড়া, বাজনা, বট, সিধা, বাঁশ, বেত, পাইনাল, কদম, বেল, জলপাই, জগ ডুমুর, ছাতিয়ান, দাকরুম, ছাতিয়ানসহ প্রায় অর্ধশত জাতের বৃক্ষের চারা। বালিজুরি রেঞ্জ অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সুফল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গারো পাহাড়ের আগের সেই বৈচিত্র ফিরে আসবে। আর্থিকভাবেও লাভবান হবে এখানকার বাসিন্দারা। সচেতন মহলের ধারনা, এখই প্রয়োজন এ ব্যাপারে  সরকারি - বেসরকারি ও এনজিওর উদ্যোগ নেয়া।

ছবিতে : শ্রীবরদীর বালিজুরি রেঞ্জের সুফল প্রজেক্টের অর্থায়নে গড়ে তোলা দেশীয় জাতের বৃক্ষের চারার নার্সারি।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top