ছলনাময়ী করোনা ভাইরাসের ৩ জাতের সন্ধান!

S M Ashraful Azom
ছলনাময়ী করোনা ভাইরাসের ৩ জাতের সন্ধান!

সেবা ডেস্ক: পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাসকে এবার ছলনাময়ী ভাইরাস বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস নিজের চরিত্র বদলে ফেলে আরো সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই ভাইরাসটি নিজেকে এত বেশি বদলাচ্ছে যে এর গতিবিধি বোঝাই অসম্ভব হয় পড়ছে বিশ্বের অভিজ্ঞ ভাইরোলজিস্টদের কাছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রধান তিনটি প্রকারের সন্ধান মিলেছে। এই তিন প্রকারের করোনা মানুষের ইমিউন সিস্টেমের সক্ষমতা জেনে আক্রমণ করছে এবং সে অনুযায়ী ভাইরাসটি নিজের স্ট্রেনগুলো পরিবর্তন করে মানুষকে সংক্রমিত করছে।

সংবাদ সংস্থা মেইল ইউকের তথ্যানুযায়ী, বিজ্ঞানীরা গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত ভাইরাসটির জিনগত ইতিহাসের ম্যাপ তৈরি করেছিল। আর সেখানেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গেছে, করোনার তিনটি প্রকার ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা ক্ষমতা ও রূপ রয়েছে। এমনকি তিনটি দলের আক্রমণের টার্গেটও ভিন্ন ভিন্ন।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, এখন চীনের উহান এবং পূর্ব এশিয়ায় যে ভাইরাসগুলো দেখা যাচ্ছে সেটা এই ভাইরাসের মূল প্রকার নয়। এটি মূলত নতুন একটি প্রজাতি। পরিবর্তিত এই স্ট্রেন (টাইপ-বি নামে পরিচিত) এবং মূল সার্স-কোভি -২ ভাইরাস থেকে উদ্ভূত যা বাঁদুড় কিংবা প্যাঙ্গোলিনের (টাইপ-এ) মাধ্যমে মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। টাইপ-এ ভাইরাস এখন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যাচ্ছে। এছাড়া টাইপ-সি নামে আরেক প্রকারের ভাইরাস উহানের টাইপ-বি থেকে পরিবর্তিত হয়ে সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ভাইরাসটি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভিন্ন ভিন্ন স্তরের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করে চলেছে। টিকে থাকার জন্য এ ভাইরাসের নিজেকে পরিবর্তনের অসম্ভব রকম ক্ষমতা রয়েছে।

গবেষকরা ভাইরাসটির এই পরিবর্তন পরীক্ষায় প্রাচীন মানুষের প্রাগৈতিহাসিক স্থানান্তর শনাক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেছেন। সার্স-কোভি-২ ভাইরাসের সংক্রমণে ট্র্যাক করার জন্যও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। মূলত সার্স-কোভি-২ থেকেই কোভিড-১৯ এর জন্ম হয়।

কেমব্রিজের ম্যাকডোনাল্ড ইন্সটিটিউট অব আর্কিওলজিক্যাল রিসার্সের ফেলো ড. পিটার ফস্টার বলেছেন যে, তার দল ফেব্রুয়ারিতে ভাইরাসটির জিনোমিক বিবর্তন সন্ধান করতে শুরু করে। ভাইরাসটি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এটা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।

জানা গেছে, প্রায় ৬০ হাজার বছর পূর্বে আফ্রিকা থেকে মানুষের অভিবাসনের সন্ধান করতে ১৯৯০-এর দশকে যে সংশোধিত দীর্ঘ-প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ করা হয়েছিল করোনার উৎপত্তি সন্ধানেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল।

ডা. ফস্টার বলেছেন, একটি জার্মানভিত্তিক জিআইএসএআইডি ডাটাবেস ওয়েবসাইট থেকে করোনর মোট ১৬০টি অক্ষত জিনোম গবেষকদের দলকে সরবরাহ করা হয়েছিল। এগুলোতে ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রথম অনেকের নমুনা ছিল। ভাইরাসটির প্রথম জিনোমিক স্ন্যাপশট মহামারিটির সূচনা দেখার সুযোগ করে দেয়।

ভাইরাসটির মূল প্রকার (টাইপ-এ) চীনে দেখা যায়নি। উহানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বি টাইপ পাওয়া গেছে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় পাওয়া প্রকারটি টাইপ-এ। এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে তৃতীয় প্রকার টাইপ-সি প্রথমে ছড়ায় সিঙ্গাপুরে।

টাইপ-এ বাদুড় এবং পাঙ্গোলিনগুলির মধ্যে সবচেয়ে কাছের এবং এটি প্রাদুর্ভাবের মূল হিসেবে বিবেচিত। এটি উহানে পাওয়া গিয়েছিল তবে সেখানে খুব বেশি ছিল না।

টাইপ-এ এর আবার দুটি সাব-ক্লাস্টার রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, টি-অ্যালিল হিসেবে চিহ্নিত। পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া ভাইরাসের সঙ্গে এটির যথেষ্ট সংযোগ রয়েছে কারণ এটি উহানে বসবাসকারী আমেরিকানদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। তবে, দ্বিতীয় এ টাইপ সাব-ক্লাস্টার, সি-অ্যালিল নামে পরিচিত। মিউটেশনের একটি স্ট্রিংয়ের কারণে এটা কিছুটা আলাদা।

পিএনএএস জার্নালে আজ প্রকাশিত গবেষণায় গবেষকরা লিখেছেন, এটি লক্ষণীয় যে এই সাব-ক্লাস্টারে প্রায় অর্ধেক প্রকার পূর্ব এশিয়ার বাইরে, মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গেছে।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top