থ্যাংক ইউ রায়বাবু

S M Ashraful Azom
থ্যাংক ইউ রায়বাবু
সত্যাজিত রায়
তখন সবে ক্লাস এইটে উঠেছি। উপেন্দ্রকিশোরের বাঘ-শেয়ালের নানান কাহিনী, ঝানু চোর চানুর আস্পর্ধা আর সুকুমারের ‘ননসেন্স’ ব্যাপার-স্যাপারের সাথে আমি ততোদিনে বেশ পরিচিত।

এরপরেই জীবনে এলো ফেলুদা। তারপরেই আমার সত্যজিতে হারিয়ে যাওয়া।

প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা নামের সেই যুবকটির গোয়েন্দাগিরি আর নানান অভিযানের একেকটি কাহিনী এতোটাই মজাসে গিলতাম, যে বলে বোঝাতে পারবো না। তোপসে আর জটায়ুকে তো চোখের সামনেই যেন দেখতে পেতাম।

এরপরে জীবনে এলেন শঙ্কু। তখন সাইফাই খুব একটা পড়িনি, শঙ্কুর মাধ্যমেই সাইফাই পড়াতে আমার হাতে খড়ি।

যাইহোক, সৃষ্টির কথা থেকে একটু স্রষ্টাতে আসি।

সত্যজিৎকে কারো সাথে তুলনা করাটা আমার ঠিক পছন্দ নয়। উনি উনার মতোই। আজকালের ছেলে-ছোকরাদের উনাকে পশ্চিমা নানান লেখক আর চলচিত্রকারদের সাথে হরহামেশাই তুলনা করতে দেখি। ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারি না।

এটা কি আমাদের বাঙালিদের কোন জাতীয় সমস্যা? প্রতিভাকে মৌলিকত্বকে স্বীকার করতে আমাদের খুব বাঁধে। তাই আগে আমরা পশ্চিমা কোন একটা স্ট্যান্ডার্ড ধরে নেই তারপর তার সাথে আমাদের প্রতিভার মিল খুঁজি। হায়রে...
সত্যাজি রায়ের ফেলুদা
সত্যাজিত রায়ের ফেলুদা বেশ জনপ্রিয় 

সত্যজিতের প্রতিটি গল্প চিরন্তন বাঙালি জীবনধারাকেই তুলে ধরে। উনার প্রতিটি লেখা প্রতিটি লাইনে যে গভীর জীবনবোধ রয়েছে তা পুরোপুরি উনার গল্পে ডুবে না থাকলে বোঝা মুশকিল।

তাইতো এখনো তরিণীখুড়োর গল্পের আসর চিরতরুণ রয়েছে।

চলচিত্র?

চোখ বুঝলে এখনো ভাসে চরণদাসের বলা সেই লাইনটি, “গান শেষ আর জান শেষ, সে তো একই কথা মহারাজ!”

গুপি বাঘার সেই গান গাওয়া.. মনে আছে তো? দাদু উপেন্দ্রকিশোরের সৃষ্ট এই চরিত্রদুটোকে কী সুন্দর করেই না ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিভূতিভুষনের অপু আর দূর্গাকে!

অস্কার পেয়েছেন, তবে অস্কারকে আমি তাঁর জীবনের সার্থকতা বলবো না।
সত্যাজিত রায়ের প্রোফেসর শঙ্কু এখনও অনেকের কাছে প্রিয়

একজন চলচিত্রকারের সার্থকতা এখানেই যে তিনি কোন লেখকের সৃষ্টিকে রূপালী পর্দাতে অমর করে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।

সত্যজিৎ লিখতে ভালোবাসতেন, অনেক বেশী ভালোবাসতেন। অসুস্থ শরীরেও তিনি লিখেছেন, গভীর অসুখ থেকে ফিরে এসেও লিখেছেন।

কাছের মানুষদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘মানিক’ নামে।

তবে এই প্রতিভাবান মানুষটির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগও রয়েছে।

নব্যপরিচিত অনেকেই বলতেন যে সত্যজিতের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে গিয়ে তারা নিজেদের সাথে এই মানুষটির বেশ কিছুটা দূরত্ব অনুভব করতেন। এই নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, কেউ কেউ তো কষ্টও পেয়েছেন।

আসলে একজন শিল্পীর সাথে ভক্তদের যোগাযোগ হওয়া উচিত তাঁর কাজের মাধ্যমে। ভক্তদের তাঁর কাজকেই বিচার করা উচিত, সেগুলো নিয়েই খুশি থাকা উচিত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগটা সবসময় সুখকর নাও হতে পারে।
লেখক লুৎফুল কায়সার
লেখক লুৎফর কায়সার 

সত্যজিৎ আমাদেরকে সম্পূর্ণ একটা নতুন জগৎ চিনতে শিখিয়েছেন, যা উনি না থাকলে হয়তো কেউ আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরতো না।

আজ ২ মে, এই দিনেই পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষটি। শুভ জন্মদিন রায়বাবু।

ছোটবেলাতে একটা ভূতের গল্প পড়েছিলাম, নাম ছিলো “থ্যাংক ইউ রায়বাবু”, লেখকের নাম মনে করতে পারছি না। তবে আজকাল যখনই এই গল্পটির নাম মনে পড়ে তখনই আমার শুধু সত্যজিতের কথা মনে পড়ে।

আমাদেরকে নিজের লেখা আর চলচিত্রের মাধ্যমে অসাধারণ সুন্দর কিছু সময় দেওয়ার জন্য ... থ্যাংক ইউ রায়বাবু।

লুৎফর কায়সার
লেখক, প্রকৌশলী

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top