আজকের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ

S M Ashraful Azom
আজকের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ

সেবা ডেস্ক: এ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমলের দিক থেকে যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন এর অন্যতম হলো জুমার দিন। এ দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক হুকুম-আহকাম এবং ঐতিহাসিক নানা ঘটনা।

কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা এই দিনের মর্যাদার কথা জানা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমার দিন সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা এবং রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে যেসব গোনাহ হয়ে থাকে তা পরবর্তী নামাজ, জুমা এবং রমজান (পালনে) সেসব মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। যদি কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, তিরিমজি)।

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের নামাজ পড়ার পর পরদিন ফজরের নামাজ আদায় করে তবে এ সময়ে মধ্যে করা সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গুনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। অনুরূপভাবে এক জুমা থেকে অপর জুমা এবং এক রমজানের রোজা আদায়ের পর থেকে পরবর্তী রমজানের রোজা আদায় করে, তবে ওই ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত পূর্ণ এক বছরের সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

জুমার দিনে মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে তিনটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাহলো-

(১) জুমা দিনে ‘সূরা কাহাফ’ তেলাওয়াত করা। পবিত্র কোরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮ নম্বর সূরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সূরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সূরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে।

ফজিলত :
> যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমা থেকে অপর (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত নূর হবে।

> যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

> এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব (কবিরা গুনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

(২) জুমার দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়। দরূদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দুরুদ হচ্ছে ‘দরূদে ইব্রাহিম’; যা নামাজে পড়া হয়।

দরুদে ইব্রাহিমের আরবি, অর্থ, উচ্চারণ :

আরবি :

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌاللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
উচ্চারন :

আল্লাহুম্মা সাল্লেআ’লা মোহাম্মদাও ও আ’লা আলি মোহাম্মদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহিমা ও আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মোহাম্মাদেওঁ ও আ’লা আলি মোহাম্মদ, কামা বারকতা আ’লা ইব্রাহিমা ও আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ

অর্থ:

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরদের ওপর এই রূপ রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়।

(৩) পবিত্র জুমার দিন দোয়া কবুলের কিছু সময় বা মুহূর্ত রয়েছে; সে সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া ও ইসতেগফার করা। জুমার ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করে; মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিন তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬১)।

তার মানে দুনিয়াতে মানুষের আগমন ঘটেছিল এই জুমার দিনেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসূল (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০০)।

উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, জুমার দিনের বিশেষ একটি মুহূর্ত আছে, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার সব দোয়া কবুল করেন। কিন্তু জুমার দিনের সেই বিশেষ মুহূর্তটি কোনটি- তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নিম্নে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে সেই সময়গুলো তুলে ধরা হলো-

ইমাম মিম্বরে উঠার পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত : আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৯)।

আসরের শেষ সময় : অর্থাৎ সূর্য ডোবার আগমুহূর্তে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম। আদম (আ.)-কে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। এই দিনই তার তাওবা কবুল হয়েছিল। এই দিনই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন এবং এই দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। জিন ও মানুষ ছাড়া প্রতিটি প্রাণী শুক্রবার দিন ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেয়ামতের ভয়ে ভীত থাকে। এই দিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, নামাজরত অবস্থায় কোনো মুসলিম বান্দা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কোনো অভাব পূরণের জন্য দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাকে তা দান করেন।

কাআব (রা.) বলেন, এই সময়টি প্রতি এক বছরে একটি জুমার দিনে থাকে। আমি (আবু হুরায়রা) বললাম, না, বরং প্রতি জুমার দিনে থাকে। অতঃপর কাআব (রা.) (এর প্রমাণে) তাওরাত পাঠ করে বলেন, রাসূল (সা.) সত্যই বলেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, অতঃপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করি। সেখানে কাআব (রা.)-ও উপস্থিত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, আমি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়টি সম্পর্কে জানি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমাকে তা অবহিত করুন। তিনি বলেন, সেটি হলো জুমার দিনের সর্বশেষ সময়। আমি (আবু হুরায়রা) বললাম, জুমার দিনের সর্বশেষ সময় কেমন করে হবে? অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় ওই সময়টি পাবে...।’ কিন্তু আপনার বর্ণনাকৃত সময়ে তো নামাজ আদায় করা যায় না। ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কী বলেননি, যে ব্যক্তি নামাজের জন্য বসে অপেক্ষা করবে সে নামাজ আদায় না করা পর্যন্ত নামাজরত বলে গণ্য হবে। আবু হুরায়রা বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, তা এরূপই। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৬)।

জুমার দিন ও জুমার নামাজ আদায় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এ দিনের প্রতিটি আমলই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (ইচ্ছা করে) অলসতাবশত তিনটি জুমা ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালেক)।

ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top