রৌমারীতে এক কলেজে দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

S M Ashraful Azom
0

রৌমারীতে এক কলেজে দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
রৌমারী প্রতিনিধি: কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ার একটি। কিন্তু সেখানে বসতে চান দুজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। একজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অন্যজন নিয়মিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, যিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েও চেয়ারে বসতে পারছেন না। দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। ঘটনাটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ডিগ্রি কলেজের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরশৌলমারী ডিগ্রি কলেজটি ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে ডিগ্রি ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কলেজে প্রায় ৫’শ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক কর্মচারি রয়েছে ৫২ জন। তবে অধ্যক্ষ পদ শূন্য। নিয়মনীতি ও বিধি উপেক্ষা করে এ ঘটনায় সৃষ্ট জটিলতায় কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নিয়মিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে না জানিয়ে অন্য এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের পর এ নিয়ে আরও কলেজে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সার্বিক বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী না হওয়ায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খন্দকার মো. ফখরুল ইসলাম রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

লিখিত অভিযোগ ও কলেজের শিক্ষক থেকে জানা গেছে, উপজেলার চরশৌলমারী ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. কুদরত উল্যাহ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবসরে যান। পরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ পেতে ক্ষমতার লড়াই করেন প্রভাষক মতিয়ার রহমান ও ফরহাদ আলী। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি কেএম ফজলুল হক মন্ডল ও অন্যান্য সদস্যদের যোগসাজশে মৌখিক ভোটের মাধ্যমে প্রভাষক ফরহাদ আলীকে ১৩-০৯-২০১৭ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এদিকে ফরহাদ আলী ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ) থেকে নিয়মিত অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। এতে ০৫-১১-২০১৭ ইং তারিখে আবার জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কিছুদিন পর আব্দুর রাজ্জাক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বকালে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ১৯-০৮-২০১৮ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ ফেরত নেন ফরহাদ আলী। পরে তিনি ওই কলেজে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব ধরে রাখেন প্রায় ১৩ মাস। তিনি দায়িত্ব থাকার সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষারমান ভালো হয়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল ও লেখাপড়া মান বৃদ্ধি করতে কলেজের পরিচানা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে ১২-১১-২০১৯ ইং তারিখে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার মো. ফখরুল ইসলামকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরে কলেজের সকল দাপ্তরিক কাগজপত্র চাইলে সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আলী তা না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে কালক্ষেপন করেন।

বিষয়টিও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক মন্ডল কে অবহিত করলে তিনি তা আমলে না নিয়ে একই ভুমিকা পালন করেন। কারণ সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আলীর পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক মন্ডল আপন বোন জামাই। পরিচালনা কমিটির (হিতৈশী) সদস্য বজলুর রশিদ আপন বড়ভাই হওয়ায় এসব করার সম্ভব হয় তাঁর।

ইতিমধ্যেই প্রভাষক মতিয়ার রহমান ও সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আলীর মধ্যে কলেজ কে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম জজ কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।

এতে মামলা ও বারবার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) পরিবর্তনের কারনে কলেজের শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানাগেছে, খন্দকার মো. ফখরুল ইসলামকে নাম মাত্র অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দিয়ে সুকৌশলে সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আলীকে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রদানের জন্য নিয়োগ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাগজপত্র প্রেরণ করেছে।

পাশাপাশি কলেজের নিয়মিত অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফখরুলকে না জানিয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক মন্ডল ও সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ আলীর যৌত স্বাক্ষরে রৌমারী সোনালী ব্যাংক শাখায় ওই কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে অবৈধভাবে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। দুজনই ওই উত্তোলনকৃত ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষকরা বলেছেন, কলেজে একাধিকবার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) পরিবর্তনের নামে যে বানিজ্য করছেন পরিচালনা কমিটি সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা আরো বলেন, কলেজের লেখাপড়াসহ অন্যান্য বিষয় যেন ভেঙ্গে পড়েছে। দ্রæত এর সমাধান না করলে কলেজ বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানান শিক্ষকরা।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বের বিষয় জানতে চাইলে সাবেক ভারপ্রাপÍ (অধ্যক্ষ) মো. ফরহাদ আলী মুঠফোনে বলেন, ‘আমাকে ডেকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দিয়েছেন পরিচালনা কমিটি। এর চেয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’

কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ চিশতী, আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, ফরহাদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনিয়ম করা হয়েছে।

কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফখরুল ইসলামের অভিযোগ বিষয় জানতে চাইলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও চর শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান কেএম ফজলুল হক মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম করার অভিযোগে তাঁর (ফখরুল) দায়িত্ব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

চর শৌলমারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী আমি দায়িত্ব পেয়েছি। কিন্তু নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আরেকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছিনা। প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমি এখনও অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে পারিনি। কিভাবে আমি অনিয়ম করব।’

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোক্তার হোসেন বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তের প্রতিবেদন কয়েক দিনের মধ্যে (ইউএনও) স্যারকে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল ইমরান জানান, বিষটি তদন্তের জন্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


ভিডিও নিউজ


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন


ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top