অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আসছে নতুন মুদ্রানীতি

S M Ashraful Azom
0
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আসছে নতুন মুদ্রানীতি

সেবা ডেস্ক: প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর ধাক্কায় দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন মুদ্রানীতি আসছে।

আগামী ২৮ অথবা ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি রোববার বলেন, গতবারের মতো এবারও পুরো অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি দেওয়া হবে।

মহামারীর এই কঠিন সময়ে নতুন মুদ্রানীতি কেমন হবে-এ প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “অবশ্যই কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে বা হবে, তা পুনরুদ্ধারের দিক-নির্দেশনা থাকবে নতুন মুদ্রানীতিতে।”

দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি (জুলাই-ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি-জুন) ঘোষণা করে আসছিল। কিন্তু ‘বিশেষ তাৎপর্য’ নেই বলে গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হচ্ছে।

প্রতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও এবার মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হবে।

এর সংক্ষিপ্তসার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারেও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

মহামারীকালে নতুন মুদ্রানীতিতে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কত ধরা হবে, তার হিসাব কষতে হিমশিম খাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

কেননা মহামারীকালে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এ যাবতকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

এই অঙ্ক আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। আর মুদ্রানীতিতে ধরা লক্ষ্যের প্রায় অর্ধেক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে গত ১০ বছরের বেসরকারি খাতে ঋণের তথ্য পাওয়া যায়। তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের মতো এত কম প্রবৃদ্ধি এক দশকে হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনিম্ন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

নতুন মুদ্রানীতিতে এই প্রবৃদ্ধি কতো ধরা হবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

নতুন মুদ্রানীতি কেমন হওয়া উচিৎ- তা নিয়ে সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক গত ১৯ জুলাই  ‘মতামত’ বিভাগে একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

মহামারীতে অর্থনীতির গতি আটকে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ‘২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতি কেমন হবে: সম্ভাব্য রূপরেখার খোঁজে’ শীর্ষক ওই লেখায় তিনি লেখেন, মোটামুটিভাবে প্রায়োগিক দিকসমূহ বিবেচনায় মুদ্রানীতি অন্য তিনটি নীতির উপর নির্ভর করে- (ক) রাজস্ব নীতি, (খ) লেনদেন ভারসাম্য নীতি এবং (গ) ব্যক্তিখাতে ঋণ সরবরাহনীতির উপর।

“দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনে মুদ্রানীতি এবং উল্লেখিত এই নীতিগুলোর মাঝে সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে। আবার এই নীতিগুলো কেমন হবে, কেমন এদের মধ্যকার সমন্বয় হবে, তা নির্ভর করে দেশটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো অর্থনৈতিক বা অনার্থনৈতিক অভিঘাতের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে কিনা তার উপর।”
তারেক লিখেছেন, যে কোনো মুদ্রানীতি যথাযথ কার্যকারিতা বাস্তবায়ন নির্ভর করে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন স্তর, এর দক্ষতা ও বিরাজমান সুশাসনের উপর।

“সাম্প্রতিক সময়ে  বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের অপরিকল্পিত পরিমাণগত প্রসার ঘটেছে।  সেভাবে আর্থিক পণ্যের ও সেবার বিকাশ ঘটেনি। তৈরি হয়নি বন্ড মার্কেট। কাঙ্ক্ষিতভাবে শেয়ার বাজারেরও উন্নয়ন ঘটেনি।

“কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে যেভাবে আর্থিক পরিধির বিস্তৃতি ঘটেছে, তা থেকে মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আশা করব, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অতীতে যেভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে, কোভিড-১৯ সৃষ্ট অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সেই একই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনাকালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হবে।”

মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবছর মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। এবারও মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে এবার উন্মুক্ত আলোচনা সভা করা যায়নি, এর পরিবর্তে মেইলে মতামত নেওয়া হচ্ছে। আর সর্বধারণের মতামত নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে সরকার।


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top