নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র

S M Ashraful Azom
0
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা

সেবা ডেস্ক: একপাশে প্রতিবেশি দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা আর অন্য পাশে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা। সীমান্ত ঘেষা এ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছবির মতো গারো পাহাড়ের সারি, বনভূমি মানুষকে আকৃষ্ট করেছে সব সময়। 


নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র
ওয়াচ টাওয়ার থেকেই দেখা মিলে অপরূপ দৃশ্য

গারোদের পাহাড়ী গ্রাম, বনভূমি, পাহাড় - টিলা, পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝরনা ধারা,পাখীর কলকাকলী আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সব মিলিয়ে নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব এক বিশাল ক্যানভাস। ভ্রমণ পিয়াসী যারা তাদের মায়াবী ডাকে টানবেই এই পাহাড়ভূমি। তাই প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটির দিনগুলোকে একান্ত প্রকৃতির সাথে বিলিন করতে যেতে পারেন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্রে। 
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র

জামালপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ অংশে বিশাল গারো পাহাড়। লাউচাপড়া ও ডুমুরতলা মৌজায় বিভক্ত পাহাড় আর বনভূমি এলাকাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। 
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র

মৌজা দুটির পাহাড়ের ঢাল দিয়ে অবস্থিত লাউচাপড়া,  পলাশতলা, দিঘলাকোনা, বাবলাকোনা, বালিজোড়া, গারোপাড়া, শুকনাথপাড়া, সোমনাথপাড়া, মেঘাদল, সাতানীপাড়া, বালুঝুড়ি গ্রামে গারো ছাড়াও রয়েছে হাজং, কোচদের বাস। এই অঞ্চলে আদিবাসী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৭০০।

লাউচাপড়ায় কিভাবে যাবেন ও যা দেখতে পাবেন:
লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাস। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জ চলে যাবেন। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা কিংবা ভ্যানে চলে যাবেন লাউচাপড়াতে। বকশিগঞ্জ ছেড়ে যতোই সামনে এগুতে থাকবেন চারিদিকটা যেন ততোই সবুজ হতে থাকবে। কোথাও কোথাও চলতি পথে সবুজের খেলা দেখতে দেখতে এক সময়ে এসে পৌঁছুবেন এক পাহাড়ের পাদদেশে। 
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র
নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র

চারিদিকটা কেমন যেন ছবির মতো মনে হয়। এই পাহাড়ি জঙ্গলে রয়েছে নানা জাতের পশু পাখি। ধান পাকার মৌশুমে আবার মেঘালয় থেকে চলে আসে বুনো হাতির দল। কাঠ ঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখি আরো কত ধরণের পাখি চোখে পড়বে এখানে এলে। 
কৃত্রিম এ লেকটি আপনার মনে সহজেই নিয়ে আসবে প্রশান্তি
কৃত্রিম এ লেকটি আপনার মনে সহজেই নিয়ে আসবে প্রশান্তি

লাউচাপড়ার এ পাহাড় বেড়িয়ে ক্লান্ত হলে নিচে নেমে একটু বসতে পারেন লেকের ধারে। কৃত্রিম এ লেকটি আপনার মনে সহজেই নিয়ে আসবে প্রশান্তি। আপনি চাইলে লেকের পাশে কোন গাছের ছায়ায় বসে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়। 
এই সিঁড়িগুলো বেয়ে উঠতে হয় ওয়াচ টাওয়ারে
এই সিঁড়িগুলো বেয়ে উঠতে হয় ওয়াচ টাওয়ারে

পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকা বাঁকা একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়। ১৫০ ফুট উচ্চতায় `ক্ষনিকা` পিকনিক স্পটেই ৬০ ফুট সু-উচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
ওয়াচ টাওয়ারে পর্যটকরা নিজেদেরকে নিসর্গ সুন্দরের সাথে ক্যামেরাবন্দি হতে ব্যস্ত
ওয়াচ টাওয়ারে পর্যটকরা নিজেদেরকে নিসর্গ সুন্দরের সাথে ক্যামেরাবন্দি হতে ব্যস্ত

সুউচ্চ এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ঘন সবুজের সমারোহ নিয়ে সারি সারি পাহাড়ি টিলা। মুহূর্তেই চোখ চলে যাবে সীমান্তের ওপারে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঘন সবুজ পাহাড় ছাড়িয়ে তুরা জেলার পাহাড়ি থানা শহর মহেন্দ্রগঞ্জের দিকে। সু-উচ্চ এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট টাওয়ার।

ওয়াচ টাওয়ারে লেখক
ওয়াচ টাওয়ারে লেখক


আপনারা চাইলে দেখে আসতে পারেন এখানকার উপজাতিদের ছোট্ট একটি গ্রাম। গারো উপজাতিদের এ গ্রামের নাম দিকলাকোনা। এ গ্রামে বাইশ পরিবারে রয়েছে একশ জন গারো। তারা সবাই খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী। প্রতিবছর বড়দিন, ইংরেজী নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ গ্রামে হয় নানান উৎসব। দিকলাকোনা গ্রামের শুরুতেই রয়েছে ‘দিকলাকোনা সালগিত্তাল হোস্টেল’। 

নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করতে প্রতি বছরেই শীত মৌসুমে ভিড় করে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভ্রমণ পিপাসুদের সরগমে পুরো শীত মৌসুম লাউচাপড়া হয়ে উঠে পিকনিক স্পট। 
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটক
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটক

আদিবাসীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর ছোট-বড় অস্থায়ী দোকান স্থান পায় পিকনিক স্পটে। পুরো শীত মৌসুম জুড়ে আদিবাসীদের মাঝে লক্ষ্য করা যায় উৎসবের আমেজ। এ সময় নির্জন নিভূত পাহাড়ি এই অঞ্চলটি অসংখ্য মানুষের পদভারে হয়ে উঠে মুখরিত।

কোথায় থাকবেন:
লাউচাপড়ায় রাত কাটানো হতে পারে আপনার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রাতে যেন আরো শান্ত, আরো স্নিগ্ধ। রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিসোর্ট।
জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো
জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো

এছাড়াও উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় সীমিত পরিসরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে রাত্রিযাপনের সুযোগ র‍য়েছে। (কেয়ারটেকার-০১৭৩২২০৭৫৬৩)

আশা করছি আপনারাও এসে ঘুরে যাবেন এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি থেকে। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন আপনার দ্বারা এখানকার প্রকৃতি কিংবা জীব বৈচিত্রের কোন ক্ষতি যেন না হয়।


-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন





Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top