পুরুষ নির্যাতন সমস্যা প্রকট

S M Ashraful Azom
0
পুরুষ নির্যাতন সমস্যা প্রকট


নারী নির্যাতন মামলাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের হয়রানি করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ‘পুরুষ নির্যাতন একটি সামাজিক সমস্যা’ এই শব্দগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষরা ব্যাপকভাবে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের হচ্ছে। নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন একটি প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির পুরুষ মানুষ আজকে কোন না কোন নারী দ্বারা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পুরুষদের জীবনেও অনেক ভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে- শারীরিক, মানসিক, দৈহিক-আর্থিক, সামাজিক সহ স্ত্রী কর্তৃক ও শ্বশুর বাড়ির শাসন শোষণের স্বীকার । ঘরে বাইরে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ । বাদ যাচ্ছেন না– চাকরিরত/অবসরপ্রাপ্ত সরকারি/বেসরকারি- সচিব, উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক সহ দিন মুজুর । আমি নিজেও মিথ্যা মামলার আসামী ছিলাম। 

অনেক ক্ষেত্রে একটি ছেলেকে শায়েস্তা করতে বর্তমান সময়ে ইভটিজিং, ICT মামলা নামের একটি সোনার হরিণকে বেছে নিচ্ছে সমাজের এক শ্রেণির নারীরা। তাদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন আইন। ছেলেদের শায়েস্তা করতে মেয়েরা নতুন এ আইনকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। একটি ছেলের সাথে পারিবারিক বিরোধ হলে তাকে স্কুল কিংবা কলেজের সামনে ডেকে নিয়ে ইভটিজিং নামের বেড়াজালে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি ছেলে, মেয়ে/নারীদের কাছে নির্যাতন বা প্রতারণার শিকার হয়ে কোনভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার পাচ্ছে না। নারীরা এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করলেও একটি মেয়ের কাছে প্রতারণার শিকার হয়ে মানসম্মান কিংবা উল্টো হয়রানির ভয়ে নীরবে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
বেসরকারী একটি সংস্থার জরিপে জানা যায়, দেশে করোনা কালীন সময়ে পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা শতকরা ৪৫ ভাগ সে তুলনায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা ৪০ ভাগ। নারী নির্যাতনের সংখ্যা ৫ ভাগ কম। কিন্তু পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতনের ঘটনা পত্র-পত্রিকায় ঢালাওভাবে প্রচার হলেও নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা তেমনটি চোখে পড়েনা। পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি চেপে যাওয়া আর নারী নির্যাতনের সংখ্যা প্রকাশ পাওয়ায় নারী নির্যাতন ব্যাপক মনে হয়। বাংলাদেশের কিছু প্রিন্ট ও ইলেক্টট্রনিক মিডিয়া এক্ষেত্রে উদাসীন ও দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে। 

নারী নির্যতন মামলায় আইন-আদালতের সহযোগীতা ও বিনা পয়সায় উকিল পাওয়া গেলেও পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেয়াতে এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। নারী সাপোর্ট বেশিরভাগ সংস্থা কাজ করলেও পুরুষের পাশে কেউ নাই। ফলে দিন দিন নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা উর্ধ্বমূখী। আমাদের এই প্রতিবাদ এবং আইনের বৈষম্যতা দূরীকরণে আমরা সমাজের চোখ কিছুটা খুলে দিতে পেরেছি । তারা পুরুষদের অত্যাচারের ঘটনা সামনে তুলে ধরতে এখন আর লজ্জা করেন না।
নারীরা শরীরে হাত তোলা কিংবা খুন করার মতো কঠিন কর্মটিও করে বসেন। মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয় পুরুষ নির্যাতনের কাহিনী। আমরা প্রায়ই দেখছি যে, প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা বান্ধবী বিষাক্ত নাগিনী হয়ে মরণ ছোবল দিচ্ছে স্বামীকে বা প্রেমিককে। কেড়ে নিচ্ছে তার প্রাণ। কখনো আবার প্রবাস থেকে পাঠানো স্বামীর টাকা পয়সা ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে, পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছে এমনকি স্বামীকে ডিভোর্স দিচ্ছে। অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে বা যৌতুক নিরোধ আইনে মিথ্যা মামলা করে জেল হাজতে পাঠিয়ে নিঃস্ব করে দিচ্ছে তাকে এবং তার পরিবারকে। 

প্রেমের সম্পর্কে সবসময় দেখা যাচ্ছে পুরুষকে অপরাধী করা হয়। এ বিষয়ে সারা দেশে সচেতনতা দরকার। সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও নারীরা পুরুষের তুলনায় কায়িক, মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল। তাই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও নির্যাতন রোধে করা হয়েছে নানা আইন। এছাড়া স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় প্রশাসন সবসময়ই নারী নির্যাতন সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতন মামলাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের হয়রানি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে যাচ্ছে, ঘটনা ঘটছে। কখনও কখনও ঘরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন পুরুষও। স্ত্রীর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের অপব্যবহারও হচ্ছে বহুক্ষেত্রে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় নারীদের আইনে দায়ের করা মামলার ৯৫% শেষ পর্যন্ত মিথ্যা মামলা হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। পুরুষ নির্যাতনের সঠিক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। কারন আমরা লজ্জায় গোপন করে যাই। আমাদের কাছে স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার এমন অনেকেই আছেন তার মধ্যে সমাজের উচ্চ থেকে নিন্ম স্তরের অনেক পুরুষ আইনি সহায়তা চান। তবে আইনি সহায়তা ছাড়াও মিউচুয়াল পরামর্শ চান অনেক পুরুষই।

যে সব কারনে পুরুষেরা চুপ করে নারীর নির্যাতন সহ্য করে :
১. সংসার ভেঙ্গে যাবার ভয়ে।
২. সন্তানের মা হারা হবার ভয়ে। অনেক সময় সন্তান হারাবার ভয়ে।
৩. সমাজ কর্তৃক তালাক দেওয়াটাকে অপরাধ হিসাবে পুরুষের উপর বর্তানো।
৪. দেনমোহরের টাকার পরিমান না থাকার কারণে। সাংসারিক দায়িত্ববোধ থেকে নিজেকেই দোষি মনে করা।
৫. ধারনা করা সে ঠিক হয়ে যাবে।
৬. তালাক দিলে সন্তানের চোখে খারাপ হয়ে যাবার ভয়ে এবং সন্তানের ভালবাসা হারাবার ভয়ে।
৭. নারী নির্যাতন মিথ্যা মামলার ভয়ে।
৮. সংবাদ মাধ্যমে নারীবাদি পুরুষ বিদ্বেষি কমিটি গুলোর মিডিয়াতে গিয়ে প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যা অপবাদের ভয়ে।
৯. গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারীর বিভিন্ন অন্যায় সহ্য করতে বলা এবং মস্তিষ্ক/মগজ ধোলাই করে রাখা।
১০. যৌন সম্পর্ক হবে না বলে ভয় পাওয়া।
১১. আমি পুরুষ এই ধরনের ভূল ধারনা পোষন করা। নিজের উপরে নিজেই অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া।
১২. লজ্জাবোধ আমি ছেলে মানুষ, একটা মেয়ে আমাকে নির্যাতন করল মানুষ শুনলে কি বলবে। আমার বন্ধুবান্ধব শুনলে কি বলবে।
১৩. পারিবারিক সমস্যা,আমি পুরুষ এটা আমার পারিবারিক সমস্যা এই ভেবে অনেকেই চুপ করে থাকা। এটা ঠিক নয়।
১৪. পূর্বের মধুর সময়ের কথা চিন্তা করে মাফ করে দেওয়া।

১৫. ভালবাসার টানে দিশেহারা থাকা।
আমাদের সমাজেও প্রকাশে কিংবা লোকচক্ষুর অন্তরালে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। বিভিন্ন এলাকায় এমনও আছে প্রায় প্রতিরাতে স্ত্রীর হাতে মারধর খেতে হয় স্বামী নামের সেই পুরুষটিকে। বেচারা স্বামী লোক লজ্জা আর সমাজপতিদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। লিঙ্গ কর্তন সহ শত শত ঘটনা ঘটছে সারা দেশে। তার নির্ধারিত পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টালে চোখে পড়বেই স্ত্রী কর্তৃক স্বামী তালাক, মামলা-হামলা, পরকীয়ার বলি, আবার অনেক ঘটনা চাপাও পড়ে যায়। এমনিভাবে শত শত পুরুষ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। আত্মমর্যদা, সামাজিক লোকলজ্জা আর কোর্টকাচারীর ভয়ে মুখ খুলে বলতে পারছেন না তার নির্যাতনের কথা। কিন্তু একজন নারী ইচ্ছে করলে এ ঘটনা সাজিয়ে থানা কিংবা আদালতে মামলা করতে পারে। এছাড়া বর্তমান সময়ে একটি পরিবারকে ধংস করতে বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন মামলাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। কারণ মামলাটি সহজে করা যাচ্ছে এবং এ মামলাটি সাধারণত জামিন অযোগ্য। কিন্তু ইচ্ছে করলেই একজন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় গিয়ে মামলা করতে পারছেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা আর চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে নেই। এ অবস্থায় নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলে পুরুষের জন্য বিশেষ আইন করতে বাঁধা কোথায়? নারী নির্যাতনের মতো পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়ণ করে নারী পুরুষের মাঝে বৈষম্যতা দূর করতে সরকার আরো সচেষ্ট হতে হবে। নির্যাতন যাদের ওপরই হোক না কেন, তা সমাজ কিংবা ব্যক্তি জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।

নারী নির্যাতনের বিপক্ষে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সোচ্চার হলেও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে পুরষ নির্যাতনের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করেন নারীবাদী সংগঠনগুলো। তাই নারী বা পুরুষের জন্য আলাদা অধিকার নয়, করতে হবে সমান অধিকার। সর্বত্র সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলে পুরুষের জন্য পৃথক বিশেষ আইন করতে হবে।

সচেতন মহলেরও দাবী, নারী নির্যাতনের পাশাপাশি তৈরি করা হউক পুরুষ নির্যাতন আইন, আর দূর করা হউক নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্যতা। তা না হলে সারা দেশে যে পরিমানে পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এক সময় তা ব্যাপক আকার ধারণ করবে তখন সরকার আইন করেও পুরুষ নির্যাতন কমাতে পারবে না।
নারী নির্যাতনের ঘটনা যেমন প্রতিনিয়ত ঘটছে, ঠিক তেমনি পুরুষ নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারে কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। আড়ালে থাকলেও পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু কম ঘটছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। যেভাবে নির্যাতিত হন পুরুষেরা-পারিবারিকভাবে পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন।

পুরুষ নির্যাতনে করণীয় :
১. নারী নির্যাতন আইনে সুনির্দিষ্ট শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন নীতিমালা নেই। নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আছে পুরুষেরও। সুতরাং পুরুষ নির্যাতনের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
২. পারিবারিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। বাবা মাকে তার ছেলের মন মানসিকতা বুঝতে হবে। তাদের বুঝতে হবে তার ছেলে কোন অর্থ উপার্জনের যন্ত্র নয়। সে মানুষ, তার সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দিন।
৩. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারী নির্যাতন হলে যেমন ভাবে তা একটি অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, পুরুষ নির্যাতনের ক্ষেত্রেও তা হতে হবে। যাতে করে নির্যাতিত হয়ে কেউ চুপচাপ মেনে না নিয়ে এ ব্যাপারে সবার সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধান করতে পারেন পুরুষেরা।


লেখক:
সেক্রেটারি
পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন, ঢাকা।


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top