নদীর অস্তিত্ব বিলীন: উল্লাপাড়ায় করতোয়ার বুকে ধান চাষ

S M Ashraful Azom
0
নদীর অস্তিত্ব বিলীন উল্লাপাড়ায় করতোয়ার বুকে ধান চাষ
উল্লাপাড়া সোনতলা ব্রীজের নিতে করতোয়া নদীর বুকে কৃষকের বুরো ধানের চাষ - ছবি: সাহান

রাজু আহমেদ সাহান- উল্লাপাড়া প্রতিনিধি: উল্লাপাড়া ভুমির বুক চিরে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী প্রায়ই মরা খালে পরিনত হওয়ার পথে। পলি জমে ভরাট হবার কারণে অধিকাংশ নদ-নদীর অস্তিত্বই এখন বিলীন হওয়ার পথে। বোরো মৌসুমে করতোয়া, গোহালা, স্বরসতী, ঝপঝপিয়া, বিলসূর্য, মুক্তাহার নদীসহ অনেক খাল-বিল ও নদী-নালার তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় এ সমস্ত নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছে এলাকার কৃষকেরা। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর বুকে এখন বোরো, ইরি ধানসহ গম, ভুট্টা চিনাবাদাম, তরমুজ-বাঙ্গি, পটল ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরনের চাষাবাদ করছে কৃষকেরা। যার যার বাড়ী ও জমির সামনে আগত নদী ও নালা রয়েছে সেগুলো অবৈধভাবে দখলে নিয়ে চাষবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছে নদী কুলের মানুষেরা। ফলে নদী থেকে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো ও পরিবার পরিজন নিয়ে চলতো তারা এখন বেকাত্বের সাথে যুদ্ধ করে অসহায় দিনাতিপাত করছে। বর্ষা মৌসুম পর জেলেরা এ সমস্ত নদ-নদী ও খাল বিল থেকে মাছ স্বীকার করে সুন্দরভাবে জীবন নির্বাহ করতো। কালের বির্বতনে এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অভাব অনটন। 

উল্লাপাড়া ঝিকিড়া হালদার পাড়া গ্রামের সঞ্জয় কুমার জানান, আগের দিনে নদীতে প্রচুর জল থাকতো, নানা ধরণের মাছ ধরা পড়তো জালে। তা দিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটতো। কিন্ত বর্তমানে নদীর নাব্যতা না থাকায় শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায় নদী। ফলে মাছ আহরন করা সম্ভব হয় না। এখন আর বাপ-দাদার ব্যবসায় জেলে সম্প্রদায়ের জীবন চলছে না। দিন দিনই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে মাছ ধরার সাথে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা। পেশা ছেড়ে তারা অন্য কাজেও ভালো করতে পারছে না বলে তিনি আরো জানান। অভাব অনটনে ছেলে- মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার পথে। চিকিৎসার অভাবে ঘরে অসুস্থ স্ত্রী দিন-রাত বিভিন্ন রোগে ভুগছে।

করতোয়া নদী পাড়ের সোনতলা গ্রামের কৃষক জিল্লুর তার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয় নদীর সোনতলা ব্রীজের ঠিক নিচে ২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তার দেখাদেখি পাশে আরো প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে ধান চাষ শুরু করেছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি। কিছু দিন আগেই এ সমস্ত এলাকার নদীতে জেলেরা শুধু মাছ স্বীকার করতো। নদীতে চলতো বড় বড় পাল তোলা নৌকা। মাঝিরা গাইতো জারি সারি গান। সেই নদীতে এখন জেগে বসেছে চর। চাষ হচ্ছে নানা জাতের কৃষি ফসল। কৃষি পণ্য উৎপাদন করে অনেকেই হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

একই গ্রামের বেল্লাল হোসেন জানান, দিনে দিনে নদী তার যৌবন হারাতে বসেছে। আগে যেখানে পানিতে থই থই করতো এখন সেখানে উৎপাদন হয় বোরো ধান সহ নানা ধরনের ফসলের। আগে এক সময় দেখতাম এই নদীতে জেলেরা জাল ফেলে বোয়াল, কাতল, রুই, শোল, শিং, চিংড়ি, পুটি, মলা ঢেলা মাছসহ নানান জাতের মাছ স্বীকার করতো। তখন নৌকাই ছিল একমাত্র যাতাযাতের মাধ্যম। উন্নয়নের ধারায় নদীতে ব্রীজ নির্মিত হওয়ায় নদীর গতি রোধ হয়ে পড়েছে। নদীর বুকে চর পড়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন আর সেসব দৃশ্য চোখে পড়ে না। অতীতের সেসব দৃশ্য বর্তমানে শুধুই স্মৃতি। 

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, বর্তমান সময়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নদীগুলো হারাচ্ছে তার রুপ ও যৌবন। দীর্ঘ দিন ধরে নদীতে পলি জমে জমে ভরাট হওয়ার কারণে চর জেগে উঠেছে বিভিন্ন নদীর বুকে। ফলে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষ সেসব জায়গায় উৎপাদন করছে বিভিন্ন ফসল ।    


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top