বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

S M Ashraful Azom
0
বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত


সেবা ডেস্ক: বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের কাছে শুধু একজন প্রতিনিধি নয় বরং সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমরা শুধু আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সংকটের সমাধান করতে পারি। আমি বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে কোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। আর এ দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা আছে। তা খুঁজে বের করতেই এ সফরে আসা। গতকাল ঢাকায় ঝটিকা সফরে এসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পরে জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গতকাল সকালে ঢাকায় আসা জয়শঙ্কর সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিএএফ বাশার ঘাঁটিতে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পরে সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, সফরের অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর উপলক্ষেই মূলত আমি এসেছি। কভিড শুরু হওয়ার পর এটি হবে তাঁর প্রথম বিদেশ সফর এবং বাংলাদেশে দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক রূপান্তর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এবং যে বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়েছে সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের মধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে তারও পর্যালোচনা করেছি। আমার কাছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অর্থনৈতিক, কানেকটিভিটি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি না। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন ৫০ বছর পার হয়ে গেছে এবং পরের ২০ বছর কী করা যেতে পারে। আমি বলব কনেকটিভিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, কানেকটিভিটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। যদি আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটি ঠিক রাখতে পারি তবে এ অঞ্চলের সামগ্রিক ভূ-অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর খুব কার্যকর। আমরা দুই পক্ষই বিশ্বাস করি এটি করা সম্ভব। দুই মন্ত্রীর মধ্যে বড় একটি সময়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। সম্ভাব্য দেশ হিসেবে জাপানের নাম এসেছে। কারণ ওই দেশের সঙ্গে আমাদের দুই দেশেরই সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে জাপানের সংযুক্তি প্রকল্প রয়েছে। সম্পর্কোন্নয়নে আমি কানেকটিভিটিকে বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি। এ ছাড়া মানুষে মানুষে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দিন শেষে দুই দেশের সম্পর্ক মানেই আমাদের জনগণের সম্পর্ক। আমাদের উচিত মানুষকেন্দ্রিক সম্পর্ক। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিই এবং এটি সম্পর্ককে নতুন মাত্রা ও গতি দেয়, যোগ করেন তিনি। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জানতে চাইলে সংক্ষিপ্ত উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পানি নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই পানি সচিব পর্যায়ে বৈঠক হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘটিত হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও সমস্যার বাস্তব সমাধানে কাজ চলছে উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, প্রকৃতপক্ষে হত্যাকান্ড ভারতের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে প্রতিটি হত্যাকান্ডই দুঃখজনক। কিন্তু আমরা নিজেদের প্রশ্ন করেছি, সমস্যার মূল কারণ কী এবং এটি হচ্ছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড। তিনি বলেন, আমাদের দুই পক্ষের লক্ষ্য হওয়া উচিত অপরাধবিহীন সীমান্ত, যাতে হত্যাকান্ড না হয়। আমার ধারণা আমরা দুই পক্ষ এ সমস্যার সমাধান করতে পারব। বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে মূল আলোচনা হয়েছে। সফরের সময় বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্য, পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোমেন বলেন, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

মোদির সফরসূচিতে গোপালগঞ্জ ও বরিশাল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি গোপালগঞ্জের ওরাকান্দিতে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের একটি মন্দির এবং বরিশালের শিকারপুরে ‘সুগন্ধা শক্তিপীঠ’ (সতীপীঠ) মন্দির পরিদর্শনে যেতে পারেন। কূটনৈতিক সূত্র জানান, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধে যাবেন। একই দিনে তিনি ওরাকান্দি মন্দির ও সতীপীঠ পরিদর্শন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী এবং কুশিয়ারায় ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের পৈতৃক বাড়িও যেতে চান। তবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পৃথক গ্রুপ এ হাইপ্রোফাইল সফরের আগে নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক যাচাই করতে ইতিমধ্যে এ এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তবে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ শুরু হতে যাওয়া আট দফায় অনুষ্ঠেয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের ভোটারদের মনজয়ের জন্য ওরাকান্দি মন্দির পরিদর্শন করবেন। ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের ভোট উত্তর চব্বিশ-পরগনা ও নদীয়া জেলায় বিজেপি ও টিএমসি (তৃণমূল কংগ্রেস)-এর মধ্যে লড়াইয়ে অন্যতম জয়নির্ধারক হতে পারে মনে করা হচ্ছে। সফরসূচি অনুসারে প্রধানমন্ত্রী মোদি ২৬ মার্চ একটি বিশেষ বিমানে ঢাকা পৌঁছাবেন এবং দুই দিনের ঢাকা সফর গুটিয়ে পর দিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীকে বই উপহার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি গ্রন্থ উপহার দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। গতকাল ঢাকায় বিশেষ সফরে এসে বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ড. এস জয়শঙ্কর। গণভবনে বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন এই অতিথি। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বইগুলো লিখেছেন তাঁর বাবা প্রয়াত কে. সুব্রামনিয়াম। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
ড. এস জয়শঙ্কর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমার বাবা প্রয়াত কে. সুব্রামনিয়ামের লেখা দুটি বই উপহার দিয়েছি তাঁকে। ১৯৭২ সালের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম। বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি দেখলে বাবা খুশি হতেন।’

ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন : বিকাল ৫টায় রাজধানীর গুলশান-২-এ ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর। দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের মেলবন্ধনে কাজ করবে এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারতের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যাত্রা হলো। উদ্বোধনের পর তিনি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এরপর ঢাকাস্থ হাইকমিশনে সাবেক কূটনীতিক ও সিনিয়র কয়েকজন সম্পাদকের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভারতের এস জয়শঙ্কর। সভা সঞ্চালনা করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। এ সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।  



শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top