শতকোটি ছাড়িয়েছে কাজিপুরের ঝুট কম্বলের ব্যবসা

S M Ashraful Azom
0
শতকোটি ছাড়িয়েছে কাজিপুরের ঝুট কম্বলের ব্যবসা


আবদুল জলিল, কাজিপুর: যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঝুট পল্লীর ব্যবসায়ীগণ এবার শীতে শতকোটি টাকার ব্যবসা করেছেন। 

তাদের তৈরি কম্বল ও শিশু পোশাক দেশের ৪৭ টি জেলা ও উপজেলার মানুষের শীত নিবারণ করেছে। সেইসাথে প্রায় চল্লিশ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মানুষের স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।  

তাদের অনেকের এক সময়ের ভিক্ষার হাত এখন কর্মের হাতে পরিণত হয়েছে। 

 প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বুঝতে পেরেই সরগরম হয়ে ওঠে এই উপজেলার ঝুট পল­ীগুলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভাঙনে ফসলি জমি হারানো এখানকার বাসিন্দারা চেষ্টা করেন বিকল্প কর্মসংস্থানের। 

হাজার হাজার হত দরিদ্র পরিবারের শীত নিবারনের অন্যতম বস্ত্র তৈরি হয় এখানে। গার্মেন্টস'র পরিত্যক্ত টুকরো কাপড় দিয়েই তৈরি হয় এই শীত বস্ত্রগুলো। বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত  কম্বল ও শিশুদের শীতের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন এখানকার শ্রমিকেরা। এই ছয় মাসে কাজের চাপ থাকে খুব বেশি। দিন রাত বিরামহীন কাজের ফলে তাদের সংসারে এখন স্বচ্ছলতার প্রগাঢ় নিকুঞ্জ। এ মৌসুমে ঝুট পল­ীর এই ব্যবসা শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

জানা যায়, ঢাকা -নারায়ণগঞ্জ থেকে কিনে আনা ঝুট কাপড় সেলাই করে তৈরি করা হয় কম্বল। উপজেলার শিমুলদাইড়, বর্শীভাঙ্গা, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়া, মানিকপটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপড়, রৌহাবাড়ী, পলাশপুর, বিলচতল, ল²ীপুর, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, কবিহার হাটশিরাসহ প্রায় ত্রিশটি গ্রামের ৩২ থেকে ৪০ হাজার নারী পুরুষ কম্বল তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আর এই কম্বল ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে উপজেলার শিমুলদাইড় বাজার। সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর ভায়া ধুনট-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে শিমুলদাইড়ে গড়ে ওঠা এই ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী। ছুটির অবসরে তারা এখানে কাজ করে। এদের অনেকেই এখন পড়ালেখা করে অনেক বড় বড় পদে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে সুজন নামের একজন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, নাসিম গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত, গোলাম কিবরিয়া চাকুরি পেয়েছেন নৌ বাহিনীতে। তাদের মত পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে কাজ করে অনেকেই সরকারি চাকুরী পেয়েছেন। 

শনিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে শিমুলদাইড় বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে দুই প্রকারের কাপড় পাওয়া যায়। একটা জোড়া কম্বল। এটি তৈরি হয় গার্মেন্টসের অব্যবহৃত ছাট কাপড় সেলাই করে। এই ছাট বা টুকরো কাপড় সেলাই করে শিশুদের শীতের জামা তৈরি করা হয়।  এগুলো বিক্রি হয় প্রতি পিচ ৮টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। ঝুট থেকে তৈরি কম্বলের  আবার নানা নাম রয়েছে যেমন  বাংলা, বিশ্বাস, চায়না ইত্যাদি। এগুলো বিক্রি হয় প্রতি পিচ ৯০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত। এবছর কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী এই কম্বল ব্যবসাকে ছড়িয়ে দিতে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দফতরে। এর ফলে অর্ডারও এসেছে অনেক বেশি। 
কুনকুনিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী সাহেব আলী জানান,  ‘এখানকার তৈরিকৃত কম্বল এবার দেশের প্রায় ৪৭ টি জেলা বিক্রি হয়েছে।  বেশি বিক্রি হয় উত্তর ও দক্ষিনবঙ্গে। জেলাগুলোর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে  পাবনা, কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, পিরোজপুর, মাদারীপুর, দিনাজপুর, রংপুর, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, লালমনিরহাট, ও পঞ্চগড় জেলায়। 

ঝুট পল­ীর গাড়াবেড় গ্রামের কুলসুম বেগম জানান, "আমরা বড় ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ঝুট কাপড় কিনে এনে সেলাই করে বিক্রি করি। সারা বছরই আমাদের এই কাজ চলে। পরিবারের সবাই মিলে এই কাজ করি। সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে এই কাজ করে বাড়তি অনেক টাকা পাই। " 

ছালাভরা গ্রামের রেনুকা বলেন, আমি এই ঝুটের কাজ করে মাসে ৪-৫ হাজার টাকা আয় করি। এতে সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ বহন করতে কোন সমস্যা হয় না। এরকম হাজারো নারী গৃহস্থালীর কাজের ফাঁকে এই কম্বল সেলাই করে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
ঝুট ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি শরিফ সোহেল বলেন, ‘ঝুট কম্বলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এবার ইউএনও স্যার আমাদের ব্যবসার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার কারণে আমরা অনেক জেলা উপজেলার ডিসি, ইউএনও, পিআইও স্যারদের অর্ডার পেয়েছি। সরকারি ভাবে বিতরণের বেশিরভাগ কম্বল এখান থেকেই সরবরাহ করেছি।’ 
  পর্যাপ্ত ঋণ পেলে এই শিল্পের আরো প্রসার ঘটানো সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আর এতে করে দ্বিগুণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ঝুঁকি মুক্ত টাকা আদান প্রদান করতে শিমুলদাইড় বাজারে  সরকারিভাবে একটি ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবী জানান  স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান,  ‘কাজিপুরের হাজারো মানুষের বেকারত্ব দূর করেছে এই শিল্প। স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার ফাঁকে এখানে কাজ করে তাদের শিক্ষাব্যয় নিজেরাই মেটাতে পারছেন। এসব বিবেচনায়  এই শিল্পের প্রসারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাড়াও ভালো পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামীতে আরও ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।’ 
  



শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top