আরবীয় লোকসাহিত্যের দানবীয় সৃষ্টি “নাসনাস”

S M Ashraful Azom
0
আরবীয় লোকসাহিত্যের এক সৃষ্টি “নাসনাস”



আরবীয় লোকসাহিত্যে ‘নাসনাস’ নামে এক দানবীয় সৃষ্টির কথা জানতে পারা যায়, যা দেখতে তো মানুষের মতো, কিন্তু সব কিছু অর্ধেক। অর্থাৎ অর্ধেক মাথা, অর্ধেক শরীর, এক হাত, এক পা এরূপ। এই অর্ধেক শরীর নিয়ে সে লাফ দিয়ে অনেক দূর যেতে পারে। আরবীয় লোকবিশ্বাস অনুযায়ী ‘শিক’ নামে একধরনের পিশাচ আর মানুষের মিলনে নাসনাসের জন্ম। 

দুষ্ট যাদুকররা নিজেদের অশুভ স্বার্থসিদ্ধির জন্য নাসনাসের জন্ম দিয়ে থাকে। অশুভ যাদুপ্রক্রিয়ায় এদের জন্ম হয় বিধায় এরা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়। তবে দাস হিসেবে এরা যথেষ্ট অনুগত। এদের প্রভু মারা গেলে এরা তাদের বেঁচে থাকার ল্ক্ষ্য হারিয়ে ফেলে। এরা তখন পর্বত থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। 

একটা নাসনাস সাধারণত ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এর ওজন হয় প্রায় ৬৮ কেজির মতো। এদের জীবনকাল গড়ে ৩০ বছর হলেও অধিকাংশই আরো আগেই আত্মহুতির মাধ্যমে নিজেদের জীবন শেষ করে দেয়। 

এরা মানুষের ভাষা বুঝে, কিন্তু যেহেতু তাদের ভোকাল কর্ডের অর্ধেক অনুপস্থিত, তাই তারা কথা বলতে পারে না। এর বদলে তারাউদ্ভুত উচ্চস্বরের একধরণের শিস বাজিয়ে এরা মনের ভাব প্রকাশ করে। 
এই নাসনাসরা ভয়ঙ্কর দুর্ধষ যোদ্ধা হয়। যেকোন অস্ত্র চালনায় এরা সুনিপুণ। এদের কোন ভয়ডর নাই, যতক্ষণ না এদের প্রভু এদেরকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসতে না বলবে, ততক্ষণ এরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। এছাড়া শুধুমাআত্র ছুঁয়ে যেকোন মানুষকে মাংসশূন্য করে মেরে ফেলতে পারে বলে জনশ্রুতি আছে। 

এই নাসনাস নিয়ে মজার গল্প চালু আছে। প্রাচীন আরবের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাধরামাউত নামে এক জনগোষ্ঠী বাস করত যারা নাসনাসকে শিকার করে খেত মানে আক্ষরিক অর্থেই খেত। এদের মাংস নাকি খুবই সুস্বাদু (আপনারা কি এর স্বাদ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক)? এই জনগোষ্ঠীর একটা দল একবার এমন এক জায়গায় এসে উপস্থিত হল, যেখানে নাসনাসে পরিপূর্ণ ছিল। এদের থেকে একটি নাসনাস’কে ধরে তারা রোস্ট বানিয়ে খেয়ে ফেলল। এই নাসনাসটি অনেক হৃষ্টপুষ্ট ছিল। তারা যখন এটা নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন আরেক নাসনাস গুপ্তস্থান হতে বেরিয়ে এসে সেই দলটি জানালো যে তারা যে নাসনাসটি খাচ্ছে সে মাস্টিক (একধরনের ফল, যা মানুষ আঠা তৈরিতে ব্যবহার করে) খেত, তাই এতো মোটা ছিল। উক্ত নাসনাসের সহায়তার পুরস্কারস্বরূপ ঐ লোকগুলো সেই নাসনাসকেও বধ করে খেয়ে ফেলল। এটাদেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আরেক নাসনাস জোরে জোরে বলল “ তার (২য় নাসনাস)যদি সামান্য বুদ্ধিও থাকতো তবে নিজের জ্ঞান নিজের কাছেই রাখতো।” ফলস্বরূপ এটিকেও ধরে খাওয়া হল। ব্যাপারটা এখানে শেষ হলেই হতো। এরপর যা হল- গর্তের ভিতর থাকা আরেক নাসনাস তখন চিৎকার করে বলল “আমি ওদের মতো বোকা না, তাই আমি কিছুই বলব না”। ফলাফল-এই নাসনাসকেও ধরে খেয়ে ফেলা হল। 

এর থেকে আমরা একটা নৈতিকশিক্ষা পেতে পারি-আমরা যদি জ্ঞানার্জন না করি, তখন আমরা আমাদের মস্তিষ্কের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারব না, ঠিক এই নাসনাসগুলার মতো, যা আমাদের বিচারবিবেচনার উপর প্রভাব ফেলবে।

লেখক
-মুহাম্মদ শাফকাত নাওয়াজ গুড্ডু 



শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top