৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নতুন স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রে জেলেরা

S M Ashraful Azom
0
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নতুন স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রে জেলেরা



সেবা ডেস্ক: শুক্রবার মধ্যরাতে সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। তাই দীর্ঘদিন পর কক্সবাজার উপকূলের লাখো জেলে নতুন স্বপ্ন নিয়ে সাগরে যেতে শুরু করেছেন। এর আগেই জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মহাখুশি তারা।

লকডাউন আর বিধিনিষেধে যখন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অচল তখন মাছ শিকারে যেতে পেরে অনেকটা স্বস্তিও ফিরেছে জেলে পরিবারগুলোতে। এমনটাই জানা গেছে কক্সবাজারের একাধিক জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যের সাথে কথা বলে।
 
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সাগরে যেতে না পারায় কক্সবাজারের ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলের জন্য প্রায় তিন হাজার ৫৩৯ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন তালিকা অনুযায়ী জেলার আট উপজেলার জেলে পরিবারের মাঝে এই চাল বিতরণ করা হয়েছে।

এখন নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাগরে যাত্রা শুরু করছেন তারা। সমুদ্রে জেলের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে এমনটা আশা ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীসহ সবার।

নিষেধাজ্ঞার কারণে এতদিন উপকূলে পড়েছিল মাছ ধরার ট্রলারগুলো। অনেক ট্রলারে পড়ে ছিল মরিচা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন শুক্রবার সকাল থেকেই দেখা গেছে, জেলেরা ফিরছেন ট্রলারে। এরপর তারা ট্রলারে জাল, রশি ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর আগেই ট্রলারে রং করে ও ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হয়। জেলেরা যেন উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা আশা করছেন, গত মৌসুমের মতো এবারো তাদের জালে ধরা পড়বে ঝাকে ঝাকে বড় বড় রূপালি ইলিশ। তা বিক্রি করে পরিবারে ফিরবে স্বাচ্ছন্দ্য। এমন স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা হাজার হাজার জেলের।
 
শুক্রবার বিকেলে আলাপকালে কক্সবাজারের একাধিক জেলে বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। রাতে সাগরে ট্রলার ভাসাব। আশা করছি, এবার ভালো মাছ পাব। পরিবারের অভাব দূর হবে। এক ট্রলার মালিক জানান, তার সব ট্রলার মাছ ধরতে সাগরে যেতে প্রস্তুত এখন।

ট্রলার মালিক আর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কামাল হোসেন বলেন, কষ্ট করে নিষেধাজ্ঞার সব নিয়ম পালন করেছে জেলেরা। এখন সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়লেই সবার কষ্ট লাঘব হবে।

কক্সবাজারে ছোট-বড় আট হাজারের অধিক মাছ ধরার ট্রলার থাকলেও নিবন্ধিত ট্রলারের সংখ্যা ছয় হাজার। আর উপকূলে জেলে রয়েছেন লাখেরও বেশি।

সমিতিপাড়ার জেলে নুরুল কবির বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। ফলে ঈদে পরিবারকে তেমন কিছু দিতে পারিনি। চলতে-ফিরতেও কষ্ট হয়েছে। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো। সাগরে যাচ্ছি। বেশ খুশি লাগছে।
 
ট্রলার মালিক জনি মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন নৌকা স্থলে পড়ে থাকায় ভাঙন ধরেছে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে এটা সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। কারণ এ বন্ধের ফলে সাগরে মাছ বৃদ্ধি পাবে। আশা করছি, জেলেরা এখন বেশি মাছ নিয়ে ফিরবে।

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৬৫ দিনের সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ফলে কোনো ট্রলার সাগরে যেতে পারেনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরা ৬৫ দিন নিষিদ্ধ ছিল। শুক্রবার রাতে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। এখন দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণসহ পরিবহন ও সংরক্ষণে আর বাধা নেই।

উল্লেখ্য, মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতিবারের মতো এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। 

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top