বাঁশখালীতে একই পরিবারে ৩ প্রতিবন্ধীর দুর্বিষহ জীবন

Seba Hot News
0
বাঁশখালীতে একই পরিবারে ৩ প্রতিবন্ধীর দুর্বিষহ জীবন

ছবি: বাঁশখালীর ছনুয়ার এক দারিদ্র্য পিতা আলমগীর কবিরের তিন প্রতিবন্ধী শিশু।



শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আলমগীর কবির নামে এক দিনমজুরের তিন সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে।

জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী ৭নম্বর ওয়ার্ড এলাকার হাজ্বী কালামিয়া পাড়ার আলমগীর কবির ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন। 

বিয়ের পর তাদের ঘরে ৪ সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে ২ ছেলে ১ কন্যাসহ ৩ সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে কেউ উঠে দাঁড়াতে পারে না। 

তিন সন্তানের মধ্যে সবাই একখনো শিশু। বড় ছেলে বখতিয়ার (১৩), ৩য় সন্তান রাশেদা আক্তার (৬), আব্দুল­াহ (৪)। 

একই পরিবারের তিনটি শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেয়ায় সমাজে তারা অন্যান্য ছেলে-মেয়ের মতো চলতে পারে না, কথা বলতে পারেনা, মিশতে পারে না। সব সময় বাড়িতে থেকে সময় কাটাতে হয় তাদের।

সংসারের ৫ জনের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় বাবাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে হয়। রাজমেস্ত্রির দিনমজুরের কাজ করে পরিবারে দুই বেলা দু-মুঠো ভাত দেয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিবন্ধীর বাবা আলমগীর কবিরের। 

মাথাগোঁজার মতো বসতঘরটিও নাই তাদের। আলমগীর কবির চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ১৫ বছর আগে খোরশিদা আক্তারকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। 

পরে আলমগীর কবির চন্দনাইশের রওশনহাট বিজিট্রাস্টের পাশে এক লোকের পরিত্যক্ত বাড়িতে থাকেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে তাদেরকে সে বাসাটিও ছাড়তে হলো। 

আলমগীর কবির চলে আসেন নিজের এলাকা বাঁশখালীর ছনুয়ায়। তারা ৭ ভাই তাদের বাবার বাড়িতে কোন রকম বসবাস করেন। তাদের বাবার সহায় সম্বল নেই, সামান্য বসতভিটেই মানবেতর জীবন যাপন করে তারা। 

তার উপর আলমগীরের পরিবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। 

সে তার বাবার বাড়ির এক বারান্দায় ছোট্ট জায়গায় থাকে। এ বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী ও ৪ সন্তানের ৩ প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বর্তমানে বসবাস করেন। 

একই পরিবারের ৩ জন প্রতিবন্ধী সন্তান থাকার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসচেতনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি তারা। 

প্রতিবন্ধীদের মা খোরশিদা আক্তার জানান, 'একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতে খুব কষ্ট করতে হয়। তারা কথা বলতে পারেনা, তাদের প্রয়োজনের বিষয় আমি 'মা' ছাড়া কেউ বুঝেনা। 

কিন্তু পরপর তিনটি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।'

প্রতিবন্ধীর বাবা আলমগীর কবির বলেন, 'প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। বাড়ির বাইরে তো যেতেও পারে না। 

প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই বাবার মমতা দিয়ে ভালোবাসি। 

নিজের শারীরিক কর্মক্ষমতাও নেই। নিজেও প্রায় সময় অসুস্থ থাকি। 

এদিকে তিনি দাবি করেন, বিনা সুদে কোন ব্যাংক সহায়তা করলে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কোন একটি দোকান দিয়ে বাকিটা জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।'

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাকিবুল ইসলাম বলেন, 'বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখার কারণে অনেক প্রতিবন্ধী পরিবার সরকারি প্রতিবন্ধি সুুবিধা পাচ্ছে। 

ছনুয়া ইউনিয়নের আলমগীরের প্রতিবন্ধি পরিবারটি এখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। প্রতি বুধবার সকালে আমাদের অফিসে প্রতিবন্ধি টিম প্রতিবন্ধী জরিপ করে থাকেন। 

যে কোন বুধবার এসে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কাজ করবো।'

তিনি আরো বলেন, 'স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে সম্পৃক্ত করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে থেকে যারা অধিক অক্ষম তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুবিধাভোগী তালিকা প্রস্তুত করা হয়। 

তবে একই পরিবারে ৩ জন প্রতিবন্ধী থাকার বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে আগামীতে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।'

 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top