সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন: শেখ হাসিনা

Seba Hot News
0
সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন শেখ হাসিনা



সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ স’রকারে’র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র সঙ্গে ‘রয়েছে আমাদে’র সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন। 

আমা’র দুই ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল শহিদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দুজনেই সেনা সদস্য ছিলেন। 

ছোটভাই রাসেলে’র ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে’র ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

রোববা’র বিকালে ঢাকা সেনানিবাসে’র সেনাকুঞ্জেসশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১এ’র সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স’রকা’রপ্রধান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে’র মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

জাতি’র পিতা একটি আধুনিক শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেনউল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতি’র পিতা’র নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি গড়ে তোলা হয় এবং কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনী’র প্রতিটি কোরে’র জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টা’র প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গড়া’র প্রত্যয়ে জাতি’র পিতা একইসঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী’র তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভা’রত যুগোশ্লাভিয়া থেকে যুদ্ধ জাহাজও সংগ্রহ করেন।

জাতি’র পিতা ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতি’রক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা’র দূ’রদর্শী বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালে সে সময়ে’র অত্যাধুনিক সুপা’রসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টা’র পরিবহণ বিমান এবং এয়া’র ডিফেন্স রাডা’র ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয় এবং এ’রই মাধ্যমে এদেশে একটি আধুনিক বিমান বাহিনী’র যাত্রা শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালে’র ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সামরিক একাডেমিতে প্রথম ব্যাচে’র ক্যাডেটদে’র সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতি’র পিতা প্রদত্ত ভাষণে’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যদে’র দিক নির্দেশনাও দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দুখী মানুষে’র মুখে হাসি ফোটানোই তা’র উদ্দেশ্য উল্লেখ করে জাতি’র পিতা বলেছিলেন- ‘সামরিক বাহিনী, বেসামরিক বাহিনী, জনগণ সবা’র কাছে আবেদন জানাব- সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে অভাব, অত্যাচা’র অবিচারে’র বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন, দেশ গড়বা’র কাজে আত্মনিয়োগ করুন।কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালে’র ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতি’র পিতাকে হত্যা’র মাধ্যমে দেশে’র সব অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। এ’রপ’র দীর্ঘ ২১ বছরে’র সংগ্রাম আত্মত্যাগে’র মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জনগণে’র ভোটে নির্বাচিত হয়ে স’রকা’র গঠন করে।

তিনি বলেন, সে সময়ে তা’র স’রকা’রন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)’ এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি তা’র স’রকা’রই সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ বিমান বাহিনীতে নারী অফিসা’র নিয়োগ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় স’রকা’র গঠনে’র প’র থেকে জাতি’র পিতা’র প্রণীত প্রতি’রক্ষা নীতিমালা অনুস’রণে তা’র স’রকা’র অত্যন্ত পেশাদা’র প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনে’র লক্ষ্যেফোর্সেস গোল-২০৩০পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালেবাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টা’র (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা, যুগোপযোগীপ্রতি’রক্ষা নীতি, ২০১৮প্রণয়নসহ গত ১৩ বছরে তা’র স’রকা’র সশস্ত্র বাহিনী’র আধুনিকায়নে’র ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রস’র হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ সহিংস উগ্রবাদে’র বিরুদ্ধেজিরো টলারেন্সনীতি গ্রহণ করেছে।

সবা’র সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- জাতি’র পিতা প্রদত্ত এই নির্দেশনাই আমাদে’র প’ররাষ্ট্রনীতি’র মূলমন্ত্র হিসেবে মেনে চলায় বিশ্বে’র অন্যান্য দেশে’র সঙ্গে বাংলাদেশে’র সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বলেন তিনি।

সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্য এবং তাদে’র পরিবারে’র সদস্যদে’র কল্যাণে তা’র স’রকা’র গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপে’র কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

যুগে’র সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক সমরাস্ত্র সমৃদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ স’রকারে’র উদ্যোগ তুলে ধ’রতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদে’র স’রকা’র সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান হেলিকপ্টা’রসহ মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং স’রঞ্জামাদি, আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক এয়া’র ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক ক’রভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন মেরিটাইম হেলিকপ্টা’র সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবেসোয়াতগঠন করেছি। পটুয়াখালীতে বানৌজা শেরেবাংলা ঘাঁটি, কক্সবাজারে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি’র কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহণ বিমান, হেলিকপ্টা’র, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতি’রক্ষা রাডা’র, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র সংযোজন করেছি। লালমনি’রহাটে এভিয়েশন এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ নির্মাণ করেছি।এয়া’র ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টা’রনির্মাণ করেছি। সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা সেবা’র মান উন্নয়নে আমরা সিএমএইচগুলোতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন ডিপার্টমেন্ট ওয়ার্ড সংযোজন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। এ’রই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সিএমএইচ- জোড়া মাথা’র শিশু রাবেয়া-রোকেয়াকে পৃথকীক’রণে’র মতো জটিল অস্ত্রোপাচা’র সফলতা’র সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভূমি’র সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখা’র পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যরা দেশে’র যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত। বাহিনী’র সদস্যরা বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ সারি’র যোদ্ধা হিসেবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

কোয়ারেন্টাইন সেন্টা’র হাসপাতাল স্থাপন, আটকেপড়া দেশি-বিদেশি লোকজনকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনে’র ব্যবস্থা, গুরুত’র রোগী এবং চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসু’রক্ষা সামগ্রী স্থানান্তরে’র ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যরা অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

করোনা’র পাশাপাশি মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দেশে’র আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনী’র ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদে’র সেনাবাহিনী এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দৃষ্টিনন্দন হাতি’রঝিল, ফ্লাইওভা’র এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। অপ’রদিকে আমাদে’র নৌবাহিনী ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমা’র নাগরিকদে’র জন্য আবাসন এবং অবকাঠামো নির্মাণে’র মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। সম্প্রতি বনায়ন কর্মসূচি’র আওতায় বিমান বাহিনী দেশে’র উপকূলীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে’র দুর্গম এলাকায় সিডবল নিক্ষেপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।   

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তি’রক্ষা মিশনে’র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিতক’রণে’র দায়িত্ব দক্ষতা নিষ্ঠা’র সঙ্গে পালন করে বিশ্ব দ’রবারে বাংলাদেশে’র ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা’র পাশাপাশি জাতিসংঘে’র ভূমিকাকেও প্রসংশিত করেছে। বর্তমানে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারো সর্বোচ্চ শান্তি’রক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসেবে গৌ’রবে’র স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প-২০২১ এ’র সফল বাস্তবায়নে’র মাধ্যমে ইতোমধ্যেই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হওয়া’র ক্ষেত্রে তিনটি সূচকেই সাফল্য অর্জন করেছি। আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতি’র মানদণ্ডে বিশ্বে’র প্রথম ৫টি দেশে’র মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে’র ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতি’র দেশ।

তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যে’র হা’র ৪০ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক শতাংশে’র নিচে নামিয়ে এনেছি এবং আর্থ-সামাজিক সব সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালে’র মধ্যেটেকসই উন্নয়ন অভীষ্টঅর্জন এবং ২০৪১ সালে’র মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই অঞ্চলে’র জনগণকে একটি সুন্দ’র আগামী উপহা’র দেওয়া’র লক্ষ্যেবাংলাদেশ -দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০গ্রহণ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যরা দেশে’র সার্বভৌমত্ব ‘রক্ষা’র পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশে’র গৌ’রব সমুন্নত রাখবে।তিনি বলেন, ‘আপনারা (সশস্ত্র বাহিনী’র সদস্যরা) যেন শৃঙ্খলা পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশে’র সার্বভৌমত্ব ‘রক্ষা’র পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশে’র গৌ’রব সমুন্নত রাখতে পারেন সেটাই কামনা করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি’র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণে’র বাহিনী তথা পিপলস আর্মি আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু’র ‘রহমানে’র আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদে’র জাতি’র অহংকা’র।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু’র ‘রহমানে’র আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধে’র চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদে’র জাতিকে আ’রও এগিয়ে নিয়ে যাবে আমরা বিশ্বে’র দ’রবারে মাথা উঁচু করে সম্মানে’র সঙ্গে চলব, সেটাই আমাদে’র মূল লক্ষ্য। 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top