মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার পর এদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর ঘটনা ছিল ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। পিলখানায় রক্তাক্ত বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে যায়। শেখ হাসিনার সরকার এ বাহিনীর পুর্নগঠনের উদ্যোগ নেয়। শুরু হয় বিডিআর পুর্নগঠনের কাজ।
বিডিআর পুর্নগঠনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিডিআরের নাম, ইউনিফর্ম পরিবর্তন, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো সার্বিক বিষয়ে বেশ কিছু 'গাইডলাইন' দেন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালের মার্চ মাসে বর্ডার গার্ড আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় উত্থাপিত হয়। এরপর জুলাই মাসে মন্ত্রীসভা ওই খসড়া আনুমোদন করে।
নতুন বর্ডার গার্ড আইনে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কেউ বিদ্রোহ করলে সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড, আগের বিডিআর আইনে সর্বোচ্চ সাজা ছিলো সাত বছর কারাবাস।
২০১০ সালের ৮ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিল ২০১০ পাস হয় এবং ২১ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এই বিলে স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তরে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) এর নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। সেই সঙ্গে নতুন মনোগ্রাম উন্মোচনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ বাহিনীর নতুন পথচলা।
বিজিবি’র নতুন সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবলের প্রাধিকার বৃদ্ধিসহ পদবি কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বাহিনীর কর্মকান্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ৫টি রিজিয়ন সৃজনের মাধ্যমে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
বিজিবি’র সার্বিক কল্যাণে বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন এবং ‘সীমান্ত ব্যাংক’ স্থাপন করা হয়েছে। বিজিবিতে নতুন ৪টি সেক্টর ও ১৭টি ব্যাটেলিয়ন সৃজন করা হয়েছে। সর্বনিম্ন পদ থেকে সুবেদার মেজর পর্যন্ত সদস্যদের সীমান্ত ভাতা প্রদান, অগ্রিম বেতনসহ দু’মাসের ছুটি ভোগের সুবিধা, রেশন, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিজিবিকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে আইসিটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। ১৫টি ‘সাইক্লোন শেল্টার’ টাইপ বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিওপিগুলোর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সোলার প্যানেল স্থাপন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
বিজিবিতে কর্মরত অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর সৈনিক ও অসামরিক কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য বিজিটিসিএন্ডএস, রিজিয়ন, সেক্টর ও বিএসবি এর ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
বিজিবি’র অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি’র নিজস্ব এয়ার উইং সৃজনের কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে এবং বিজিবি সদস্যদের সার্ভিস রেকর্ড কম্পিউটারাইজেশন, অভ্যন্তরীণ দাপ্তরিক কাজে নিজস্ব ই-মেইল ব্যবস্থা, ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা চালু এবং আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পাবর্ত্য এলাকায় রেডিও লিংক স্থাপনসহ ২৫২টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এন্টেনা স্থাপন করা হয়েছে।
বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিজিবি আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে ২টি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র, আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল টেরেইন ভেহিক্যাল, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হাইস্পিড বোট, ইন্টারসেপ্টর বোট ও ইউটিলিটি বোট ইত্যাদিসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি।
ভারত ও মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ কি.মি. সীমান্ত এলাকা ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’ এর আওতায় আনা হয়েছে। বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রমকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে যশোরে একটি অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার ডিজাস্টার রিকভারি সাইট স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিজিবি সদস্যদের পোশাক, আবাসন, বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়া সর্বক্ষেত্রে বিজিবির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।